ঝিনাইগাতী (শেরপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
উপজেলা সদর হাট থেকে সরকার বছরে কমপক্ষে কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও ঝিনাইগাতীর প্রধান সড়কজুড়েই ড্রিমল্যান্ড বাস, মিনিট্রাক, সিএনজি, আটোরিকশা, নছিমন-করিমনস্ট্যান্ড, আর ফুটপাতে বসে বাজার। সৃষ্টি হয় যানজট-বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট। অপরদিকে গোটা উপজেলা সদরই বলতে গেলে রীতিমত ময়লা-আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠেলেও দেখার যেন নেই কেউ। এ অবস্থা চলে আসছে দীর্ঘদিন। একমাত্র প্রধান সড়কটিতে ঝিনাইগাতী-ঢাকা বাস, ঝিনাইগাতী-শেরপুর বাস ছাড়াও টেম্পু-অটোরিকশা, অবৈধ ট্রলি-নছিমন-করিমন, এমনকি মিনি ট্রাক স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নাকের ডগায় বাসগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন ভাবে রাস্তার দু’পার্শ্বের দোকানগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় যে, লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে সে সব দোকানে কোন বেচাকেনাই হয় না। সামনে বাস দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য দোকানই দেখা যায় না বলে। এমনি অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীকে পুঁজি ভেঙে ভেঙে খেতে হচ্ছে। দিনের পর দিন গুনতে হচ্ছে লোকসান। মোট কথা বাস্তব অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব অব্যবস্থা এবং অনিয়ম দেখার ব্যাপারে যেন প্রশাসনের কোন দায়-দায়ীত্বই নেই। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব দেখেও না দেখার ভান করায় রাস্তার দু’পার্শ্বের দোকান মালিকদের ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ও বেড়েই চলছে। প্রধান সড়কে ধান হাটি মৌড়ে ঝিনাইগাতী ড্রাগ হাউজের সম্মুখে প্রধান সড়ক, আমতলা প্রধান সড়ক, ঝিনাইগাতী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে প্রধান সড়কসহ আরো কয়েকস্থান থেকে ঢাকাগামী বেশ ক’টি ড্রিমল্যান্ড এবং উপজেলা সদরের দক্ষিণ পার্শ্বে প্রধান সড়ক থেকে সারাদিন শেরপুরে চলাচল করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস-সিএনজি, অটোরিকশা, নাছমন-করিমন ইত্যাদি বৈধ-অবৈধ শত শত যানবাহন। এসব গাড়ি রীতিমত বাস স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে গোটা উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে। অথচ প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে কি যেন অদৃশ্য শক্তির ইশারায়। ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। উপজেলা সদরের ধানহাটি রোডের প্রবেশপথে ওইসব বাস-ট্রাক আর অবৈধ যানবাহনের কারণে গর্ত হয়ে সর্বদা পানি জমে থাকলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হবার পর, ইটের সুরকি দিয়ে ভরাট করা হলেও বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা সংলগ্ন দোকারের সম্মুখে কাঁদা জমে যায়। কর্তৃপক্ষের এ দিকেও নেই কোন দৃষ্টি। কাঁদা-পানি একাকার হয়ে যাওয়ায় একদিকে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে অপরদিকে দু’পার্শ্বের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে স্থান সঙ্কুুলান না হওয়ায় সদরের উত্তর পার্শ্বের রাস্তার ওপর বসে ধানের বাজার। প্রধান সড়ক ঝিনাইগাতী সরকারি মডেল স্কুলের সম্মুখে বিভিন্ন গাছের চারা, ডোল-খাঁচা, চাটাইয়ের বাজার বসছে। মসজিদ রোডে বসছে কাঁচা তরিতরকারির বাজার। ফলে পথচারী তো বটেই হাঁটুরেদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খোদ তহশিল অফিস এবং রাজস্ব অফিসের সামনেই অবৈধ কাঠের বাজার জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ভাবেই রাস্তার দু’পার্শ্বের ব্যবসায়ীদের আবদ্ধ করে রেখেছে অপরিকল্পিত এবং অসামন্যজস্য হাটবাজার। এসব রাস্তার দু’পার্শ্বের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ব্যবসায় লোকসান গুনতে গুনতে পুঁজিহীন হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া উপজেলা সদরটি এখন যেন আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। ঝাড়–দাররা যে সব দোকান থেকে নিয়মিত টাকা দেন সেসব দোকানের সম্মুখ পর্যন্তই ঝাড় দেয়। আর প্রত্যেক ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে তো নিয়মিত বিভিন্ন মালামাল তুলা হিসেবে আদায় করছেই। তারপরও স্থায়ী দোকানগুলো থেকে পর্যন্ত নিয়মিত ঝাড়– দেয়ার নামে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চাঁদা না পেলে ওইসব দোকানের সম্মুখে ঝাড়ই দেয় না ঝাড়–দাররা। এ যেন আরেক জমিদারী প্রথা! অপরদিকে ঝিনাইগাতীকে উপজেলায় উন্নীত করা হলেও দীর্ঘদিনেও উপজেলা সদরকে দৃষ্টি নন্দন উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। যেই আর সেই। সার্বিক অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এর কোন অভিভাবকই নেই। ইতোপূর্বেতো তবুও অন্তত. ‘তউ’ বাজার ছিল, এখন আর তাও নেই। সবই দখল হয়ে গেছে। অনেক আশা নিয়ে উপজেলা সদরবাসী পরিকল্পিত ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর দেখতে একের পর এক এম.পি, চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন, কিন্তু যেই আর সেই। কোন পরিবর্তন হয়নি-ঝিনাইগাতীর। সেই মান্ধাতা আমলের ঝিনাইগাতীই রয়ে গেছে এখনো। ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরবাসীর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন