শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সড়ক সংস্কারের নামে লুটপাট বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার আওতাভুক্ত দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়কে বেহালদশা বিরাজ করছে। একমাসের মধ্যেই ঈদুল আজহা। হয়তো বরাবরের মত এবারো লাখ লাখ ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তড়িগড়ি করে খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এসব মেরামতি কাজ আদতে যে সংশ্লিষ্ট দফতর, ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারদের লুটপাট-ভাগবাটোয়ারার উৎসবের উপলক্ষ্য হবে তা নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার নেই। সড়ক-মহাসড়ক নির্মান, সংস্কারে শুভঙ্করের ফাঁক, ভাগ বাটোয়ারায় লুটপাটের ফল হচ্ছে লোক দেখানো সংস্কারের দু’চারদিন যেতে না যেতেই রাস্তাগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। পত্রপত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে বটে, তবে দুর্নীতি-লুটপাটে জড়িতদের কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাচ্ছে না। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ যেন লুটপাটের ভেল্কিবাজি। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ৪২ কিলোমিটার রাস্তায় খানাখন্দকের কারণে বছর জুড়েই যাত্রিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাঝে মধ্যেই সংস্কারের আয়োজন করে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুললেও মেরামতের কাজ শেষ হতে না হতেই তা ভেঙ্গে আগের অবস্থায় ফিরে যায়। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ভাঙ্গা ও ঝুকিপূর্ণ অংশগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। একটি অংশে গত ২০ জুলাই সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার একদিন পরেই বিটুমিন-খোয়া সরে গিয়ে তা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
দু’দিন আগে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, লালমনিরহাটে দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মান শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের আগেই নানা জায়গায় ধসে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের প্রথমদিকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরে নির্মানকাজ শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। শুরুতে সংযোগ সড়ক নির্মানে প্রতি কিলোমিটারে এক কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ রাখা হলেও দুই দফা সময় বাড়ানোর সাথে সাথে নির্মান ব্যয়ও বেড়ে যায় তিনগুন। পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মানে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করার পর সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই তা নানা জায়গায় ধসে পড়েছে। এখানে সর্বসাম্প্রতিক দ’ুটি রাস্তার উদাহরণ তুলে ধরা হল মাত্র। সারাদেশে শত শত রাস্তা সংস্কারের ক্ষেত্রে অভিন্ন অবস্থা দেখা যাবে। বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুর মত অবকাঠামো নির্মান ব্যয় প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, চীনের চাইতে ক্ষেত্রবিশেষে ১০গুণ বেশী, এমনকি ইউরোপ-আমেরিকার চেয়েও অনেক বেশী। বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়ে আমরা সর্বনি¤œ মানের অবকাঠামো নির্মান করছি। এমনকি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পেও অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। ঠিকাদারী চুক্তি মোতাবেক সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করা, নির্মান সামগ্রীর মান, নির্মানব্যয় এবং ব্যবস্থাপনা, কোন ক্ষেত্রেই নির্ধারিত মান বজায় রাখতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এভাবে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি-অপচয়ে লোপাট হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন জবাবদিহিতা নেই।
অবকাঠামো উন্নয়নের নামে চলছে যথেচ্ছ লুটপাট। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ চলে যায় সড়ক-মহাসড় ক ও সেতু নির্মান ও উন্নয়ন খাতে। এসব খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পরও হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তার বেহালদশা লাঘব করা যাচ্ছে না। এর মূলে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারি ও জবাবদিহিতা না থাকা। রড, ইট-পাথর, বালি-সিমেন্ট ও বিটুমিনের মত নির্মান সামগ্রীর সঠিক মান বজায় রাখা দূরের কথা, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী স্থাপনায় রড়ের বদলে বাঁশ, পাথরের বদলে নি¤œমানের ইটের খোয়া এবং অত্যন্ত নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সংস্কারের একদিন পরই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আগের মত বেহালদশায় উপনীত হওয়া তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, বেড়িবাঁধ নির্মান, নদী ভাঙ্গন রোধের কাজগুলো যথাসময়ে এবং যথাযথ মানে বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ অস্বাভাবিক বন্যা, ফসলহানি ও নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। একদিকে এসব খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে, অন্যদিকে এসব উন্নয়ন প্রকল্প যথানিয়মে বাস্তবায়ন না হওয়ায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে তা’ অনেক বেশী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মত দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন থেকে শুরু করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মানব্যয় এবং সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণে প্রায় একই বাস্তবতা বিদ্যমান। যোগাযোগ অবকাঠামো, বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নদী ব্যবস্থাপনার মত খাতে এমন অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা জিইয়ে রেখে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন কোনভাবেই আশা করা যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন