শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ইসলাম

মাওলানা এ এইচ এম আবুল কালাম আযাদ | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

শেষ
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে যত্রতত্র মলত্যাগে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা: পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। হজরত মোয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা লানত পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাট, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মল ত্যাগ থেকে বিরত থাক। ইসলামে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। যেখানে-সেখানে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুথু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। তাই এসব দূষণযুক্ত পরিবেশের কবল থেকে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখলে মারাত্মক ও সংক্রামক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এসব নোংরা পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ওপরই নির্ভর করে জনস্বাস্থ্্েযর সফলতা। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে সবার যথোচিত দায়িত্ব পালন করা উচিত। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ ও রুচিহীনতা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। অথচ ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। সুস্থতা, সৌন্দর্য, মননশীলতা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির কথা বলে ইসলাম। সুতরাং ময়লা-আবর্জনা দিয়ে পরিবেশ দূষিত করা ঠিক নয়। নবী করিম (সা.) সাবধান করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আঙিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখ।’ ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’
এ লক্ষ্যেই পানির প্রবাহে মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগ বা ময়লা নিক্ষেপ অথবা মৃত প্রাণী কিংবা কারখানা বা শহরের বর্জ্য নিক্ষেপ হারাম করা হয়েছে। যাতে তা দূষিত না হয়, যার ফলে মানুষ বা আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টিজীবের ক্ষতিসাধন করে। এ কারণেই নবী স. চলাচলের রাস্তা এবং যে কোনো জলাধারে মলত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ তিনি বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতেও বারণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ স. বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে মূত্রত্যাগ না করে, যা প্রবাহিত হয় না অতঃপর তাতে গোসল করে।’ (বুখারি : ২৩৯)
মুখ ঢেকে হাচি কাশি দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা: বায়ু দূষিত হয়ে একজনের রোগ অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয়। আমরা অনেক সময় হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকি না। এতে করে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যের ক্ষতি হতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (সা) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি মুখ ঢেকে নিতেন।
মৃত জীবজন্তুর দেহ মাটিতে পুতে ফেলার প্রতি ইসলামের নির্দেশনা: হাদিসে রাসূল (সা) থেকে আরো জানা যায়, মৃত শরীরের কোন অংশ তিনি যত্রতত্র ফেলতেন না, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে, যা পুঁতে না ফেললে তা কোন প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করতে পারে। এ জন্য রাসূল (সা) রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। বায়ু দূষিত হলে নানান রোগজীবাণু সৃষ্টি হয় যা অনেক সময় মহামারীর আকার ধারণ করে।
উপসংহার: ‘এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি
খোদা তোমার মেহেরবাণী।
শস্য শ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালিখানি
খোদা তোমার মেহেরবাণী।
গাছে গাছে ফল, ফুল, পাখির মিষ্টি মধুর কিচিরমিচির, আকাশ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি, মাঠ ভরা সোনার ফসল সবই আল্লাহর দান। আল্লাহই সব সৃষ্টি করেছেন। এগুলো মানুষকে সংরক্ষণ, প্রতিপালন ও উন্নয়নের তাগিদও দিয়েছেন তিনি। সব নবী ও রাসূল প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়নের কাজ করার পাশাপাশি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। কোরআন ও হাদিসে তাই প্রকৃতি ও পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে মানুষকে টিকে থাকতে হলে, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা নিজেদেরকেই দিতে হবে। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ইসলামের অনন্য নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন