শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

হিটস্ট্রোক-কে জানতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমাদের দেশে গরমের দিনে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত একটি সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচন্ড গরম আবহাওয়ায় তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ক্ক ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। নিম্নে হিটস্ট্রোক সম্পর্কে আলোকপাত করছি- হিটস্ট্রোক কাদের বেশি হয়? প্রচন্ড গরম ও আর্দ্রতায় যে কারোরই হিটস্ট্রোক হতে পারে। যেমন: *শিশু এবং বৃদ্ধের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম থাকায় হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়ই অন্যান্য রোগে ভূগে থাকেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
*যাঁরা রোদের মধ্যে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। যেমন-কৃষক, শ্রমিক ও রিকশাচালক। *শরীরে পানিস্বল্পতা হলে ঝুঁকি বাড়ে।*কিছু কিছু ওষুধ হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণœতার ওষুধ, মানসিক ব্যাধির ওষুধ ইত্যাদি। হিটস্ট্রোকের লক্ষণÑ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট অক্সাসশন হতে পারে। হিট ক্রাম্পে শরীরের মাংসপেশী ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচন্ড পিপাসা লাগে। এর পরের ধাপে হিট এক্সাসশনে দ্রæত শ্বাস প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর প্রচন্ড ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
এর লক্ষণগুলো হলো: * তাপমাত্রা দ্রæত ১০৫ক্ক ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। *ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। *ত্বক শুস্ক ও লালাভ হয়ে যায়। * নিঃশ্বাস দ্রæত হয়। *নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রæত হয়। *রক্তচাপ কমে যায়। *প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। *খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, আস্বাভাবিক ব্যবহার, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি। * রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়; এমনকি শকেও চলে যেতে পারে।
প্রতিকারের উপায়Ñ গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিটস্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো: *হালকা, ঢিলেঢালা কাপড় পড়–ন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো। *যথাসম্ভব ঘরের ভেতর বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। *বাইরে যেতে হলে চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন। বাইরে যাঁরা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা ছাতা বা কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন। * প্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানিয় খাবার যেমনÑখাওয়ার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদি পান করতে হবে। পানি অবশ্যই ফুটানো হতে হবে। *তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমনÑচা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত? *রোদের মধ্যে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতেই হয়, তবে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর স্যালাইন পান করতে হবে।
আক্রান্ত হলে করণীয় Ñ প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকের আগেই যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট অক্সাসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো: * দ্রæত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন। *ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন। *প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না। যদি হিটস্ট্রোক হয়েই যায়, রোগীকে অবশ্যই দ্রæত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশেপাশে যাঁরা থাকবেন, তাদের করণীয় হলো: *রোগীকে দ্রæত শীতল স্থানে নিয়ে যান। * গায়ের কাপড় খুলে দিন। *শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন। *সম্ভব হলে কাঁধে, বগলের কুঁচকিতে বরফ দিন।*রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাওয়ার স্যালাইন দিন। *দ্রæত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। *সব সময় খেয়াল রাখবেন, হিটস্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস ও নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নি:শ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। হিটস্ট্রোকে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে। তাই এই গরমে হিটস্ট্রোক থেকে সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সতর্ক থাকা দরকার।

ষ ডা: মাও: লোকমান হেকিম
কলামিস্ট, চিকিৎসক
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন