শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সোহাগ গাজীর ক্ষোভের তীর হাতুরুসিংহের দিকে

প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা কি দূর্দান্তই না হয়েছিল সোহাগ গাজীর। অভিষেক উইকেটটি তার গেইল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৬ উইকেটের ইনিংস (৬/৭৪)। অভিষেক টেস্ট ম্যাচে ২ ইনিংস মিলে ৯ উইকেট! অফ স্পিনারের যে ঘাটতি দীর্ঘদিন অনুভব করেছে বাংলাদেশ দল, সোহাগ গাজীকে পেয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করতে পেরেছে বিসিবি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরির পাশে হ্যাটট্রিক সহ ৬ উইকেট (১০১ রান ও ৬/৭৭) এমন বিশ্বরেকর্ডের পর ছন্দপতন পটুয়াখালীর এই ছেলেটির। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে উঠল সন্দেহ, ল্যাবরেটরিতে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়ে পরবর্তীতে উতরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার উপায়ও পেয়েছেন। কিন্তু ১৫ মাস পর টি-২০ ম্যাচ দিয়ে দ.আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ফেরাটা হয়নি প্রত্যাশিত। মাত্র ১০ টেস্ট,২০ ওয়ানডে এবং ১০ টি-২০তে থমকে গেছে এই অফ স্পিনারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। বাদ পড়েছেন বিসিবি’র কেন্দ্রিয় চুক্তি থেকে। যে ছেলেটিকে নিয়ে এতো হৈ চৈ, সেই সোহাগ গাজী কে এখন সুখময় অতীত স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া আর কিইবা করার আছে ?
জাতীয় দলের বাইরে থাকার যন্ত্রনাটা বয়ে বেড়াচ্ছেন সোহাগ গাজী, তা মুখফুটে স্বীকার করেছেনÑ‘জাতীয় দলের বাইরে থাকা কষ্টদায়ক তো অবশ্যই। ন্যাশনাল টিমে খেলাটা একরকম। খেলে পারফর্ম করার অনুভুতিও অন্যরকম। অন্যরকম ফিলিংস। যাদের সাথে খেলছি তারা এখন খেলছে জাতীয় দলে, তা দেখে কষ্ট লাগছে। এই কষ্ট তো আর বাবা-মা, ভাই বোনের সামনে প্রকাশ করা যায় না। নিজের ভেতরেই চাপা দিয়ে রাখা লাগে।’ জাতীয় দলের ড্রেসিং রুম মিস করার কষ্টটাই বেশি পীড়া দিচ্ছে তাকেÑ‘দল জেতার পরে ড্রেসিংরুমে সবাই মিলে যে আনন্দ করতাম, তা মিস করছি।’
ফিটনেস ঘাটতি নিয়ে যে অভিযোগ সোহাগ গাজীর বিরুদ্ধে, সেই অভিযোগ মানছেন না এই অফ স্পিনারÑ‘আমি প্রফেশনাল ক্রিকেটার। ও (হাথুরুসিংহে ) যদি বলে আমাকে এখানে ২০ মিনিট বোলিং করতে হবে অথবা ২০ মিনিট ব্যাটিং করতে হবে কিংবা ২০ মিনিট ফিল্ডিং করতে হবে, তা পালন করা আমার দায়িত্ব। আমি যখন পারফর্ম করেছি, তখন কিন্তু ফিটনেস নিয়ে কোনও কথা ওঠেনি। বিফ টেস্টে আমি আগেও যেমনটা দিয়েছি, এখনো তেমনই দেই। ৯, সাড়ে ৯ দিই। আমি এখন দলের বাইরে বলে এসব কথা উঠছে।’
বোলিং অ্যাকশন বদলে ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন ঠিকই। কিন্তু টি-২০ দিয়ে চাননি ফিরতে। দ.আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ২ ওভারের বোলিং পরীক্ষা দিয়ে দল থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে, বাংলাদেশ কোচ হাতুরুসিংহের এমন খেয়াল-খুশির সমালোচনা করেছেন সোহাগ গাজীÑ ‘এগার-বার মাস পর দলে ফিরেছি। আমি টেস্টে পারফরমার, ওয়ানডেতে পারফরমার। টি-টোয়েন্টিতে আমি নিজেই বলছি আমি অতো বড় খেলোয়াড় নই। আমার এতো ভেরিয়েশন নাই। টি-টোয়েন্টিতে ভেরিয়েশন লাগবে, যেমন সুনিল নারিন বল করছে। কেন আমাকে ওয়ানডে, টেস্টে সুযোগ না দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে দেওয়া হলো এবং মাত্র দুই ওভার বোলিং দেওয়া হলো ? আশা করছিলাম আমাকে ওয়ানডে এবং টেস্টে সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর আমি কিন্তু বিসিবি একাদশেও পারফর্ম করেছি। বিশ্বকাপের আগে অনুশীলন ম্যাচে খুলনায় প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আমি পারফরর্ম করলাম। পাওয়ার প্লে’র তিন ওভারে ১০ রান দিয়েছি। এরপর আমাকে দিয়ে আর একটি ওভার করানো হয়নি।’
অ্যাকশন বদলে দ.আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০তে পারফর্ম করতে পারনেনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বশেষ তিনটি আসরেই করেছেন পারফর্ম এই অফ স্পিনার। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের সর্বশেষ আসরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে ৮ ম্যাচে পেয়েছেন ১৭ উইকেট, জাতীয় লীগের সর্বশেষ আসরে সেখানে বরিশাল বিভাগের হয়ে ৬ ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ২৩ উইকেট, আর ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) সর্বশেষ আসরে ৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট। প্রিমিয়ার ডিভিশনেও এমন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান সোহাগ গাজী পারফর্ম করে ফিরতে চান জাতীয় দলেÑ‘ যেহেতু এখন জাতীয় দলের বাইরে, তাই প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ভালো কিছু করে যদি আবার ন্যাশনাল টিমে ফিরতে পারি, সেই চিন্তাটা আছে।আমার নিজের জন্য এই আসরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমি ভালো কিছু করতে পারি তাহলে হয়তোবা আমার জন্য রাস্তাটা একটু হলেও খোলা থাকবে। বাকিটা দরজার যারা মালিক তাদের হাতে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন