মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। নতুন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান,এবং পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে এমন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের ২৭ মার্চ এই আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। এখন মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে তা পাস করতে সংসদে তোলা হবে। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সংসদ অধিবেশনে এ আইন পাস হবে। এদিকে আগামী সোমবার সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠছে।
গতকাল বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম ইনকিলাবকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ভেটিং সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই আইন ভেটিং সম্পর্কিত নথি অনুমোদন দিয়েছেন। আইনের খসড়াটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে এই আইনের ভেটিং শেষ করল আইন মন্ত্রণালয়।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ অতিরিক্ত সচিব বেগম সালমা বিনতে কাদির ইনকিলাবকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ। নীতিগত অনুমোদনের জন্য আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দিয়েছি।
নতুন এই আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গত বছরের ২৭ মার্চ এই আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। এখন মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে তা পাস করতে সংসদে তোলা হবে।
ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দ্য মোটর ভেহিকেল অর্ডিনেন্স ১৯৮৩ মার্শাল ল’ আমলে করা, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওটাকে নতুনভাবে আইনে পরিণত করা হচ্ছে, এখানে বেশ বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবহন সেক্টরটা অনেক ভাইব্রেন্ট, এখানে অনেকগুলো এজেন্সি কাজ করে এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে অনেক লিঙ্ক রাখতে হয়। এজন্য যথেষ্ট ওভারহোলিং করে নতুন আইন করা হয়েছে। শাস্তি বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সময়ের ধারাবাহিকতায় যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে।
আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। চালকের সহকারীরও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতই কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড দেওয়া হবে। আগের আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়। নতুন আইন পাস হলে কেউ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, চালকরা যাতে আইন মেনে চলেন, সেজন্য প্রস্তাবিত আইনে পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থা চালু কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে (চালকদের) পয়েন্ট কাটার সিস্টেম আছে। অর্থাৎ, ড্রাইভার যদি একবার দোষ করেন তাহলে একটা বা দুইটা পয়েন্ট কাটতে থাকে। এভাবে পয়েন্ট নিল (শূন্য) হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। আমাদের দেশেও সে প্রস্তাবটি রাখা হয়েছে। ড্রাইভিং সংক্রান্ত বিধিবিধান যদি কেউ অমান্য করে তাহলে আস্তে তার পয়েন্ট কর্তন হতে থাকবে। মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। কোন অফেন্সে কত পয়েন্ট কাটা যাবে সেটা তফসিলে বলা আছে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে আর ড্রাইভিং থাকবে না। পয়েন্ট কাটা শেষে কারও লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে সে নতুন করে লাইসেন্স পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, তাকে ডিসকোয়ালিফাই করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করলে এক পয়েন্ট কাটা যাবে। ড্রাইভিং সনদ পেতে চালক ও তার সহকারীদের শিক্ষাগত সদনের বাধ্যবাধকতা মুলক করা হচ্ছে।
শফিউল আলম বলেন, চালককে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে এই শর্ত যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আগে লেখপড়ার এই সিলিংটা ছিল না। চালকের সহকারীকে কমপক্ষে লিখিবার ও পড়িবার সক্ষমতা থাকিতে হইবে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তার লেখাপড়া থাকতে হবে। অপরাধ ও দন্ড আইন থেকে বের করে খসড়ায় তফসিল আকারে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দন্ডবিধিতে তিন রকমের বিধান আছে। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদন্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে নিহত বা আহত করলে দন্ডবিধি অনুযায়ী সাজা হবে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দূর্ঘটনা ঘটালে ৩ বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্সেল বা ওজনসীমা অতিক্রম (৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক এর থেকে বেশি ওজন পরিবহন করলে) করলে গাড়ির মালিক ও চালককে ৩ বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হবে। মোটরযান চলাচলে সাধারণ নির্দেশাবলী নামে একটি নতুন ধারায় ২৫টি নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন