মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে চলছে লাখো মানুষ মক্কার অভিমুখে। যিয়ারতে বায়তুল্লাহ করে ধন্য হবে জীবন।যমযমের সুপেয় পানি পান করে তৃপ্ত হবে মুমিনের হৃদয়। রিসালাতের পুণ্যভ‚মি, বরকতময় শহর মক্কা হবে আল্লাহর প্রিয় বন্দাদের পদচারণায় সিক্ত। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও নিরাপদ শহর হচ্ছে মক্কা। আল্লাহ তা’য়ালা এ মক্কা শহরকে অসংখ্য ফজিলত পূর্ণ স্থান ও স্পষ্ট নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন। সেসব স্থানে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হয় এবং দোয়া করলে তাও আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়। মক্কা এমন একটি শহরের নাম যেখান থেকে ইসলামের আলো প্রজ্বলিত হযয়েছিল এবং সেখানেই এসে শেষ হবে। হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন, স্বল্প সংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের স‚চনা হযয়েছিল, অচিরেই তা আবার স‚চনালগ্নের ন্যায় গরিবী অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদিনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে” (মুসলিম:১/১৩৩)। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন, মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যা দাজ্জাল পদদলিত করবে না। মক্কা ও মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে পাহারারত থাকবে” (বুখারী:৪/৯৫, মুসলিম:৪/২২৬৫)। মক্কায় আল্লাহর নিদর্শনাবলী ,বিভিন্ন স্থানের পরিচয় ও ফজিলত এবং তার অধিবাসী ও আগন্তোকদের করণীয় কোরআন-হাদিসের আলোকে নিচে তুলে ধরা হলো: কা’বা : পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন ঘর। এ ঘরকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, অতএব তুমি পবিত্রতম মসজিদের দিকে তোমার মুখমন্ডল ফিরিযয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছো তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর’ (স‚রা বাকার:১৪৪)। আল্লাহ তা’য়ালার সান্নিধ্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হলো হজ্জ। আর কাবা ঘর তাওয়াফ করা হজ্জের অন্যতম ফরজ। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন”যে ব্যক্তি (কাবা ঘর) সাতবার তাওয়াফ করলো, সে যেন একটি ক্রীতদাস আজাদ করলো “(নাসায়ী:৫/২২১)। অন্য হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি ৫০ বার কাবা শরীফ তাওয়াফ করে সে যেন সদ্য ভ‚মিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর মত পাপমুক্ত হয়ে যায় (তিরমিযী)। পবিত্র কাবা এমন একটি ঘর যার প্রতি দৃষ্টিপাত করাও ইবাদত। রাস‚ল (সা) বলেন ‘প্রতিদিন কাবা ঘরের উপর ১২০টি রহমত নাযিল হয়। এরমধ্যে ৬০ টি তাওয়াফ কারীদের জন্য, ৪০ টি ই’তিকাফ কারীদের জন্য এবং ২০ টি কাবার প্রতি দৃষ্টিপাত কারীদের জন্য’ ( তাবারানী)।মসজিদে হারাম : হযরত আবু যার গিফারী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাস‚লাল্লাহ! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হযয়েছে? তিনি বললেন মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরপর কোনটি? তিনি বললেন মসজিদে আকসা’ ( বুখারী:৬/৪৫৮, মুসলিম:১/৩৭০)। হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন: আমার এই মসজিদে ( মসজিদে নববী) এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে ১০০০ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে নববী ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে ১ লক্ষ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম” (আহমদ:৩/৩৪৩, ইবনে মাজা:১/৪৫১)।মাকামে ইবরাহীম : আল্লাহ তা’য়ালার নিদর্শন সম‚হের মধ্যে অন্যতম হলো মাকামে ইবরাহীম। এটা ঐ পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) কা’বা ঘর নির্মাণের কাজ করেছেন এবং হজ্জের ঘোষণা দিযয়েছেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন, তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শন সম‚হ বিদ্যমান রয়েছ, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শন সম‚হের মধ্যে অন্যতম (স‚রা ইমরান:৯৭)। হাজরে আসওয়াদ : জান্নাত থেকে অবতারিত একটি পাথর। যাতে চুম্বন করলে গুনাহসম‚হ ঝরে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালো করে দিয়েছে (তিরমিযি:৩/২২৬)।
মুলতাযাম : কাবা শরীফের দরজা এবং হাজরে আসওয়াদ এর মধ্যবর্তী স্থানের নাম মুলতাযাম। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন -মুলতাযামে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় (মাজমু আল ফাতাওয়া:২৬/১৪২)। হাতিমে কাবা: রাস‚ল (সা) বলেন, যে ব্যক্তি হাতিমে নামাজ আদায় করলো, সে যেন কাবা ঘরের ভিতরে নামাজ আদায় করলো’( ফাজায়েল মক্কা:২/৭৪২)।
যমযম : মাকামে ইবরাহীমের দক্ষিনে অবস্থিত একটি বরকতময় কুয়ার নাম । হযরত আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রাস‚ল (সা) বলেন, জমিনের উপরিভাগের সর্বোত্তম পানি হলো যমযমের পানি’ (তাবরানী:১/৯৮)। পৃথিবীর যত প্রকার পানি আছে সব বসে পান করতে হয় একমাত্র যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয়, এবং তা দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ) বলেন মানুষ যখন এই পানি পান করবে তখন সে পরিতৃপ্ত হবে, যেমন খাবার গ্রহণ করে মানুষ পরিতৃপ্ত হয় ‘(যাদুল মায়াদ)। হাদিসে এসেছে হযরত আবু যার (রা) ৩০ দিন শুধু যমযমের পানি পান করে অতিবাহিত করেছেন, অন্য কোন খাবার গ্রহণ করেননি (মুসলিম:৪/১৯১৯)।
আরাফা : মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মেলন কেন্দ্র।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে লাখো লাখো মুসলিম জনতা ভাষা, বর্ণ ও ভ‚গৌলিক সকল সীমানা অতিক্রম করে, হাজির হয় মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। মক্কার আকাশ বাতাস মুখরিত হয় আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা-লাকা লাব্বাইক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন