বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

প্রতিবাদী কবি রফিক আজাদ

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
Antiquity, like every other quality that attracts the notice of mankind, has undoubtedly votaries that reverence it, not from reason, but from prejudice. Some seem to admire indiscriminately whatever has been long preserved, without considering that time has sometimes co-operated with chance; all perhaps are more willing to honour past than present excellence; and the mind contemplates genius through the shades of age, as the eye surveys the sun through artificial opacity. The great contention of criticism is to find the faults of the moderns, and the beauties of the ancients. While an authority is yet living we estimate his powers by his worst performance, and when he is dead, we rate them by his best.
উল্লেখিত উদ্ধৃতিগুলি ঝধসঁবষ ঔড়যহংড়হ-এর। পশ্চিমা বিশ্বে এমন ধারণার পরিবর্তন এসেছে কিনা জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন পরিবর্তন আসেনি; কেননা সমালোচকেরা জীবন্ত কিংবদন্তীদের সম্মান জানাতে একেবারে অপারগ। অথচ সত্যিকারের সভ্যতার নিদর্শন হলো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির উপর আলোকপাত না করে তা সাহিত্য কর্মের উপর নির্মোহ সমালোচনা তথা মূল্যায়ন করা। যেমনটি টি এস এলিয়ট বলেন, সত্যিকারের সমালোচক সাহিত্যিকের উপর নয়, সাহিত্য কর্মের উপর সমালোচনা করেন। অন্যদিকে রোঁলা বাথ মনে করেন একজন লেখক একটি সাহিত্য কর্ম সম্পন্ন করার পর পরই মারা যান। কিন্তু সে সাহিত্যিক ক্ল্যাসিক হয়ে ওঠেন পাঠকের মূল্যায়ন ও ভাল লাগার প্রেক্ষিতে। সুতরাং এ কথা বলা অতিবাহুল্য হবে না কোন জীবিত বা মৃত লেখকের ব্যক্তি জীবন বন্দনা করা ভাল সমালোকের বা পাঠকের কাজ নয়। ভাল পাঠক বা সমালোচক অবশ্যই লেখকের সৃষ্টির উপর মূল্যায়ন করবেন।
কবি রফিক আজাদ ’৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও তিনি ষাটের দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। অথচ সাহিত্যিক তথা কবি রফিক আজাদের মূল্যায়ন একেবারে হয়নি বললেও চলে। তিনি বহু পুরস্কার ইতোমধ্যে লাভ করলেও স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি। অচিরেই হয়তো পেয়ে যাবেন। কিন্তু মরণোত্তর পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সত্যিকারে সাহিত্য প্রতিভাকে অবমূল্যায়ন ও অপমান করা হয়। এ লেখায় মূলত কবি রফিক আজাদ সমাজের নানামুখী অপকর্ম-অপশাসনÑলাঞ্ছনা-বঞ্চনা-অনিয়ম-অজ্ঞতা-দরিদ্রতা-অনৈতিক মূল্যবোধের কারণে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল এবং তার প্রেক্ষিতে তার প্রতিবাদী শব্দ আমাদের স্পর্শ করেছিল তা আলোকপাত করা চেষ্টা করবো।
কবি রফিক আজাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘ভাত দে হারামজাদা’। এ একটি কবিতার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের আজন্ম গোলামী দশার কথাই মনে করিয়ে দেয়। এ কবিতাটি যেন নজরুরের ‘বিদ্রোহী’, ফররুখ আহমদের ‘লাশ’ কবিতা ও জীবনানন্দ দাশের ‘পতিতা’ কবিতার প্রতিধ্বনি। যেখানে নিপীড়িত মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশার কথাই উঠে এসেছে। কেউ কথা বলেছেন ব্রিটিশ গোলামীর বিরুদ্ধে, কেউ কথা বলেছেন পাকিস্তানি অপশাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু কবি রফিক আজাদ বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত মানুষের কথা। এসব কবিদের প্রকাশ ভঙ্গি ভিন্ন কিন্তু প্রকাশের কারণ অভিন্ন।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ গোলামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বলেন,
    আমি  ভেঙে করি সব চুরমার!
    আমি  অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল।  
এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তাই তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা দিয়ে বলেন,
    মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
    আমি  সেই দিন হব শান্ত,
    যবে  উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে  ধ্বনিবে না,
    অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
    বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত!
এমন অপ্রতিরোধ্য বিদ্রোহের সময় জীবনানন্দ দাশের ‘পতিতা’ কবিতায় ব্রিটিশ গোলামীর কারণে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তা তাকে ব্যথিত করে তুলেছিল। তাই তার কণ্ঠে বেজে উঠে,
    চক্ষে তাহার কালকূট ঝরে- বিষপঙ্কিল শ্বাস,
    সারাটি জীবন মরীচিকা তার,- প্রহসন-পরিহাস!
আর এর পরিণতি কী তা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “সে যে মন্বন্তর,- মৃত্যুর দূত,Ñ অপঘাত,Ñ মহামারী,Ñ” আর এমন অমানবিকতার কারণে জীবনানন্দের কণ্ঠে বেজে ওঠে ‘শকুন’ কবিতায়, যেখানে তিনি সভ্যতার ফেরিওয়ালাদের বর্ণনা দেন এভাবে,
 মাঠ থেকে মাঠেমাঠেÑ সমস্ত দুপুর ভ’রে এশিয়ার আকাশে আকাশে
 শকুনেরা চরিতেছে, মানুষ দেখেছে হাট ঘাঁটি বস্তি,Ñ নিস্তব্ধ প্রান্তর
 শকুনের; যেখানে মাঠের দৃঢ় নীরবতা দাঁড়ায়াছে আকাশের পাশে।
কিন্তু এমন দমন-পীড়নের পরও যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন সুকান্তের ‘চিল’ কবিতায় তীব্র কটাক্ষ ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন,
    অনেকে আজ নিরাপদ;
    নিরাপদ ইঁদুর ছানারা আর খাদ্য-হাতে ত্রস্ত পথচারী,
    নিরাপদ কারণ আজ সে মৃত!
    আজ আর কেউ নেই ছোঁ মারার,
    ওরই ফেলে-দেওয়া উচ্ছিষ্টের মতো
    ও পড়ে রইল ফুটপাতে,
    শুক্নো, শীতল, বিকৃত দেহে।
আর কবি ফররুখ আহমদ ব্রিটিশ সভ্যতার আড়ালে ভারতীয়দের নিষ্পেষণের যে চিত্র অংকন করেছেন তাও উল্লেখযোগ্য। ‘লাশ’ কতিতায় তিনি বলেন,
    জানি মানুষের লাশ মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ’পর,
    ক্ষুধিত অসাড় তনু বত্রিশ নাড়ীর তাপে প’ড়ে আছে
    নিসাড় নিথর,
এমন অমানবিকতা ফররুখ চিত্তে নাড়া দিয়েছে এবং প্রতিবাদী হতে শিখিয়েছে। ফলে তিনি মুষ্টিবদ্ধ হাতে গেয়ে উঠলেন,
    তোমার শৃঙ্খলগত মাংসপি-ে পদাঘাত হানি
    নিয়ে যাব জাহান্নামের দ্বার-প্রান্তে টানি;
    আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও:
            ধ্বংস হও
        তুমি ধ্বংস হও!”
ব্রিটিশ শাসনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানিরা যখন একইভাবে বাঙালি নিধনে ব্যস্ত তখন হেলাল হাফিজকেও দেখি জনজাগরণে ভূমিকা রাখতে। ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতায় তিনি তাই আহ্বান করেন এভাবে, “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।”
প্রতিবাদী কণ্ঠগুলির চূড়ান্ত বিজয় এসেছিল স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে এবং একটি নতুন মানচিত্র সৃষ্টি করে। যে মানচিত্রে হানাহানি থাকার কথা নয়। অভুক্ত মানুষের সন্ধান মেলার কথা নয়। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ দেখতে হয়েছে স্বাধীন বাংলার মানুষকে। এমন প্রেক্ষাপটে কবি ফররুখ আহমদ ‘১৯৭৪’ কবিতায় বললেন, “স্বপ্নের অধ্যায়গুলি শেষ”; অর্থাৎ নিষ্পল স্বাধীনতা কথাই এখানে ফুটে উঠেছে।  এমনই সুর বা প্রতিধ্বনি শোনা যায় কবি রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতায়। স্বপ্ন ভঙ্গের যে যন্ত্রণা তিনি বর্ণনা করেছেন এবং যন্ত্রণার কারণে মানুষের ভিতরকার যে প্রতিবাদী রূপ তাও স্পষ্ট এখানে।
“ভীষণ ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে/অনুভূত হতে থাকে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা”-এখানে ‘ক্ষুধা’র কথা বেশ জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। যে ক্ষুধা কেবল উদরের ক্ষুধা নয়। সভ্যতার ক্ষুধা, নৈতিকতার ক্ষুধা, গণতন্ত্রায়নের ক্ষুধা, মানুষে মানুষে যে বৈষম্য বিরাজমান তা নিরসনের ক্ষুধা, শ্রেণি ব্যবধান অবসানের ক্ষুধা, অনিয়ন্ত্রিত যৌন ক্ষুধা যা আধুনিকতার আড়ালে সৃষ্ট। কিন্তু ক্ষুধার উৎপত্তিস্থল কোথায় তাও এখানে উঠে এসেছে। কবির ভাষায়,
    অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ
    বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি-কারো বা খ্যাতির লোভ আছে
    আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
    ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠা-া বা গরম
    সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে
    কোন ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
    অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
    চাইনিতো নাভি নি¤েœ পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক,
    যে চায় সে নিয়ে যাক-যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
    জেনে রাখোঃ আমার ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই।
এখানে বক্তা বেশ জোরালোভাবে তার চাহিদার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা সময়ের প্রেক্ষাপটে অগণতান্ত্রিক সরকারের রূঢ় আচরণের কারণে সমাজে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছিল তার এক স্পষ্ট প্রতিধ্বনি। এটি বক্তার একার নয়। স্বাধীন বাংলাদেশেরে সব মানুষের। তাই এ কবিতায় বক্তাকে ধীরে ধীরে নজরুল ইসলাম ও ফররুখ আহমদের মতো হুঙ্কার দিতে দেখা যায়। আর সে হুঙ্কারের তীব্রতাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এভাবে,
    ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন-কানুন
    সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে অবলীলাক্রমেঃ।
তা আরো তীব্রতর হয় বক্তা যখন বলেন,
    দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
    অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
    গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
    চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
    উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
    আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেল না নয় আজ
    ভাত দে হারামজাদা,
    তা না হলে মানচিত্র খাবো।
একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র খাবার যে হুমকি তা কতটা ভয়ানক, উপলব্দি করার ক্ষমতা যদি স্বৈরশাসকদের থাকতে তবে স্বাধীনতার মর্মবাণী তারা  বুঝতো এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নে এক সাথে কাজ করতো।
যদিও ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতায় বক্তাকে বেশ উগ্র মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা নয়। কেননা, এ বক্তা শান্তিপ্রিয়। তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ-কলহ-হানাহানি-রক্তপাদ চান না। কিন্তু তিনি দু’দ- শান্তি চান। কিন্তু শান্তি যদি কেউ ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হেন হীন কাজ করে তবে শান্তিপ্রিয় চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে  থাকা প্রতিবাদী রূপ প্রকাশ করতে তিনি দ্বিধা করেন না। ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’-কবিতার শুরুতে বক্তা এ অঞ্চলের মানুষের যে বৈশিষ্ট্য তা তুলে ধরেন এভাবে,
    চুনিয়া একটি গ্রাম, ছোট কিন্তু ভেতরে ভেতরে
    খুব শক্তিশালী
    মারণাস্ত্রময় সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
এখানে সুস্পষ্টভাবে পেশিশক্তির উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা যেসব অস্ত্রধারী দেশসমূহ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি তাদের রুখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
মারণাস্ত্রময় দেশসমূহ কিভাবে বক্তার শান্তি ও সুখ বিনষ্ট করেছে তা ফুটে উঠেছে চুনিয়ার পূর্ববর্তী বর্ণনার মধ্যে। তিনি বলেন,
    চুনিয়াতো ভালবাসে শান্ত¯িœগ্ধ পূর্ণিমার চাঁদ,
    চুনিয়া প্রকৃত বৌদ্ধ-স্বভাবের নিরিবিলি সবুজ প্রকৃতি;
    চুনিয়া যোজনব্যাপী মনোরম আদিবাসী ভূমি।
    চুনিয়া কখনো কোনো হিং¯্রতা দেখেনি।
    চুনিয়া আঁতকে উঠে কি?
    প্রতিটি গাছের পাতা মনুষ্যপশুর হিং¯্রতা দেখে না-না ক’রে ওঠে।
এখানে পশ্চিমা বিশ্বের পেশিশক্তির দেশসমূহকে এবং এদেশীয় রাজনৈতিক দলসমূহ যারা শাসনের নামে অপশাসন করে মানুষের অধিকারকে অস্ত্র দিয়ে নিষ্পেশিত করে তাদের সরাসরি পশু বলে অবিহিত করা হয়েছে।
কিন্তু শান্তিপ্রিয় চুনিয়া যে নীরবে সব অত্যাচার সহ্য করবে না তা বক্তা জানিয়ে দিলেন এভাবে,
    চুনিয়া কখনো জানি কারুকেই আঘাত করে না;
    চুনিয়া সবুজ খুব, শান্তিপ্রিয়-শান্তি ভালোবাসে,
    . . .
    চুনিয়া গুলির শব্দ পছন্দ করে না।
কিন্তু এ চুনিয়া যুদ্ধ নয় মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। তাই বক্তাকে বলতে শুনি,
    রক্তপাত, সিংহাসন প্রভৃতি বিষয়ে
    চুনিয়া ভীষণ অজ্ঞ,
    চুনিয়াতো সর্বদাই মানুষের আবিষ্কৃত
    মারণাস্ত্রগুলো/ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিতে বলে।
    চুনিয়াতো চায় মানুষের তিনভাগ জলে
    রক্তমাখা হাত ধুয়ে দীক্ষা নিক।
    চুনিয়া সর্বদা বলে পৃথিবীর করুক্ষেত্রগুলি
    সুগন্ধি ফুলের চাষে ভ’রে তোলা হোক।
অস্ত্রবাজির পাশের একটি স্বাধীন দেশের শাসকগোষ্ঠী কত নির্মম-অসভ্য ও হিং¯্র হতে পারে তা উঠে এসেছে ‘লোকটি তবে কবি ছিলো?’ কবিতায়। যেখানে ক্ষমতালিপ্সু শাসকগোষ্ঠী কিভাবে প্রহসনের মাধ্যমে জনসচেতনকারী উদীয়মান নেতৃত্বকে ধ্বংস করে তার চিত্র অংকন করেছেন এভাবে,
    শরীরে অসুখ ছিল-ছিল না চোখের কোনো দোষ,
    এবং জিহ্বাও তার অসম্বব অনাড়ষ্ট ছিল. . .
    শেষোক্ত দোষের জন্যে লোকটির মৃত্যুদ- হয়।
এখানে ঘুমন্ত জাতির প্রতি অঙুলি নির্দেশনা করে সচেতন করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। মারণাস্ত্রের ভয়ে এবং শাসকগোষ্ঠীর রক্তলিপ্সু চক্ষু রাঙ্গানিতে ভীত হলে একে একে সব নিরীহ মানুষের পরিণতি কী হতে পারে তা এখানে উঠে এসেছে। এমন অনেক কবিতা রফিক আজাদের রয়েছে যেখানে মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এবং মানবিকতার যে মূলমন্ত্র রয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর এ মূল মন্ত্র কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত  ভট্টাচার্য, ফররুখ আহমদের প্রতিষ্ঠিত পথেরই সদৃশ। ফলে আশা করবো  স্যামুয়েল জনসনের যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম তার মর্মবাণী উপলব্দি করে রফিক আজাদের ব্যক্তি বন্দনা না করে তার সৃষ্টি কর্মকে সঠিক মূল্যায়ন করে তিনি যে আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন তা বাস্তবায়িত করে সমাজে বৈষম্যহীন এক সুন্দরতম পরিবেশ সৃষ্টি করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন