রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিমসটেক সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে গত রোববার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে এটা চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। কারণ, এটা প্রাকটিসের ব্যাপার। আমাদের পরীক্ষামূলক করে দেখতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চালু করার বিষয়ে হঠাৎ নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড়ে রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলে তুমূল বির্তক ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। অধিকাংশ দল এর বিরোধীতায় সোচ্চার হয়। এহেন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য উদ্ভূত বির্তক-বিরোধীতার অবসান ঘটাবে বলে সহজেই ধারণা করা যায়। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্নে উঠেছে। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী এতই বিতর্কিত যে, আমাদের দেশে তা ব্যবহার করতে চাইলে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন। ইচ্ছা করলেই তা চালু করা যায় না। খোদ নির্বাচন কমিশনেও এ ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়নি। একজন নির্বাচন কমিশনার এর বিরোধিতা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে। বিরোধীদল তো বটেই, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে সমর্থন জানায়নি। ১৪ দলের নেতারা বলেছেন, হঠাৎ করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বিতর্কের সৃষ্টি করবে, ভোট গ্রহণে জটিলতা দেখা দেবে, যা নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। আওয়ামী লীগ ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে, সেটা কারো অজানা নেই। সম্ভবত: নির্বাচন কমিশন বিশেষ করে সিইসি আওয়ামী লীগকে খুশী করার জন্য ইভিএম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। লক্ষ্য করার বিষয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সিইসি সম্পূর্ণ ইউটার্ন করেছেন। বলেছেন, ক্ষমতা, সক্ষমতা, আইন ও রাজনৈতিক দলের সমর্থনের ওপর ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করছে। অনেক বলেন, সিইসি ভাঁড় চরিত্রের একজন ব্যক্তি। আলোচ্য ক্ষেত্রে সেটা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করেছেন এবং এই অহেতুক বির্তক ও সমালোচনার অবসানে এগিয়ে এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা, খালেদা জিয়ার মুক্তি  নির্বাচন, ড. কামাল হোসেন ও ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোট গঠন ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয় নাকচ করে দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বলেছেন, তাকে মুক্ত করতে চাইলে আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে। আর দ্রæত চাইলে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা চাইতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবি বাতিল করে দিয়ে তিনি বলেছেন, নির্বাচন হবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন ঠেকানোর মতো শক্তি কারো নেই। তিনি ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জোট গঠনের বিষয়টি ইতিবাচক বলে অভিহিত করছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকারের পূর্ব অবস্থানের প্রতিফলন রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা যায়, নির্বাচন সংবিধানগত বিষয়। যথাসময়ে নির্বাচন হবে, এটা সংবিধানের নির্দেশ। আমাদের যতদূর জানা, সংবিধানিক বিধান মতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো তরফেই কোনো অমত নেই। কেউ নির্বাচন বানচাল করার বা বাধা দেয়ার ঘোষণা দেয়নি। বরং সকল দলের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সাজ সাজ রব লক্ষণীয়। দেশ জুড়ে নির্বাচনের একটি আবহও ক্রমাগত সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনে বাধা দানের তাই কোনো প্রশ্নই উঠতে পারেনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তন বা শাসক বদলের একমাত্র মাধ্যম হলো নির্বাচন। গণতান্ত্রিক কোনো দল বা মহলই নির্বাচন ঠেকানোর মতো কাজ করতে পারে না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসাবে পরিগণিত। সরকারও সেটা অস্বীকার করেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে একাধিকবার বলেছেন, আর কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন তিনি দেখতে চান না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হোক; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হোক, এটা জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক মহলও অংশগ্রহণভিত্তিক বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কামনা করে। সেরকম একটি নির্বাচন করতে হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান অত্যন্ত জরুরি। বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে একটা ঐকমত্য লক্ষ্য করা যায়। তারা তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে একমত। এসব বিষয়ে সরকারের দ্বিমত রয়েছে। এই দ্বিমত নিরসন ও সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। গণতন্ত্রে এক কথা বা শক্ত ও অনড় অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। বলা হয়, গণতন্ত্র মাঝেই  আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা ও ঐকমত্য। দেশের মানুষ আশা করে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ হোক, সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হোক। আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা সরাসরি হতে পারে, আবার পরোক্ষভাবেও হতে পারে। আসলে সুফলটা কাম্য। আমরা চাই সরকার তার অবস্থানকে নমনীয় করবে, ছাড় দেয়ার মনোভাব পোষণ করবে। অনুরূপভাবে বিরোধীদলও একই রকম সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, এটাই আমাদের একান্ত কামনা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। সরকার পরিচালনাই নয়, একটি সফল জাতীয় নির্বাচন উপহার দেয়াও সরকার প্রধান হিসাবে তার দায়িত্বের অন্তর্গত। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন