এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মংলা সমুদ্র বন্দর, ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দরে ভ্যাট-ট্যাক্স ও কাস্টমস্’র নানাবিধ হয়রানি সম্পর্কে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ঝাড়লেন আমদানী-রপ্তানীকারকরা। মংলা কাস্টমস্ কমিশনার ড. আল আমিন প্রামানিকের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফিরিস্তি তুলে ধরে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে। গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর অভিজাত একটি হোটেলে খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাথে রাজস্ব বোর্ডের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা এসব বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
উন্মুক্ত আলোচনা শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, মংলা বন্দরের সমস্যাবলীর স্থায়ী সমাধানে একে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। বর্তমান সমস্যায় উদ্বিগ্ন না হয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হতে হবে। মংলা বন্দর, ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সকল সমস্যা কাটিয়ে আগামীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরকে ব্যবসাবান্ধব ও জনবান্ধব করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যেই মূলত এধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে খুলনাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হবে। রাজস্ব বোর্ড মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সম্ভাবনাময় ও সক্রিয় বন্দর হিসেবে দেখতে চায়। দু’টি বন্দরকেই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। ২০৩০সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ; নেদারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। ২০৫০ সালে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ওপরে অবস্থান করবে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ও মংলা বন্দরকে অবশ্যই সক্রিয় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআর উন্নয়ন ভূমিকায় সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে।
স্বাগত বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক। সভায় উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মোঃ ফরিদ উদ্দিন, সদস্য (ভ্যাট নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, সদস্য (আয়কর নীতি) পারভেজ ইকবাল, এনবিআর’র গোয়েন্দা সেলের মহাপরিচালক মোঃ বেলাল উদ্দিন, প্রথম সচিব (শুল্ক নীতি ও বাজেট), প্রথম সচিব (কর নীতি ও বিধি), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, খুলনা কর, কাস্টমস ও মংলা কাস্টমস হাউজের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং খুলনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সরকারি কর্মকর্তা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভাগের ১০ জেলার চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায়, কর নিরূপণে জটিলতা দূর করা, উৎস কর শূণ্য ভাগে নামিয়ে আনা, চিংড়ি রপ্তানীতে ৫% কর প্রত্যাহার, মংলা বন্দরের ডিউটি ফি ০% করা এবং ব্যবসায়ীদের ওপর নূন্যতম ট্যাক্স নীতি (দেউলিয়া হলে) প্রত্যাহার করার দাবী জানান। তারা চিংড়ি খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ভ্যাট প্রত্যাহার ও থোক বরাদ্দ, রডের ওপর আরোপিত ৪% ভ্যাট প্রত্যাহার, ভোজ্য তেলের ওপর শুধুমাত্র উৎপাদন পর্যায়ে মূসক নির্ধারণ করার দাবী জানান। করমুক্ত আয়সীমা বর্তমানের আড়াই লাখের পরিবর্তে সাড়ে তিন লাখ টাকায় নির্ধারনেরও পরামর্শ দেন। খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে মংলা বন্দরে বিরাজমান সকল সমস্যার আশু সমাধান করে ব্যবসায়ীদের বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে নানা ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তারা জোর দাবি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন