শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

‘ম্যাজিক্যাল ফিজে’র বর্ষপূর্তি

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে পথ চলা শুরু। গুটি গুটি পায়ে নয়, তখন থেকেই ঘোড়ার দৌড়ে নিজেকে সর্বাগ্রে দাড় করিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ক্রিকেটাঙ্গনে প্রথম বর্ষপূর্তিতেই বিশ্বে এক বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার। নিজেকে ধন্য মনে করতেই পারেন ডেভিড ওয়ার্নার। মুস্তাফিজুর রহমানের মতো বোলারকে দলে পেলে ওয়ার্নার কেন, যেকোনো অধিনায়কই বর্তে যাবেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে ব্যাটসম্যানদের চার-ছয়ের ফুলঝুরি আটকে রেখে দলের জয়ে ভূমিকা রাখা যায়, সেটা মুস্তাফিজই প্রমাণ করে চলেছেন বারবার। এখন পর্যন্ত আইপিএলে পাঁচ ম্যাচে মাঠে নেমে মুস্তাফিজ দিয়েছেন মাত্র ১১৫ রান। ওভারপ্রতি গড় ৫.৭৫। উইকেট ৭টি।
গেল পরশু কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে প্রথম ৯ বলে কোনো রান না দিয়ে তাঁর উইকেট তুলে নেওয়ার ঘটনাটিও আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ঘটল। প্রথম ১২ বলের ১১টিই ডট। তিন ওভার শেষেও নামের পাশে রান মাত্র ৩। ইনিংসেও নিজের শেষ ওভারটায় দিলেন ৬ রান, নিলেন আরও এক উইকেট। হোক না টি-টোয়েন্টির শেষ ওভার, মুস্তাফিজের এক ওভারে ৬ রান! সুনীল গাভাস্কার তো বলেই ফেললেন, খুবই ‘খরুচে’ বোলিং করে ফেললেন মুস্তাফিজ। সবদিলিয়ে মুস্তাফিজের ২৪ বলের মধ্যে ১৭টিই ছিল ডট। তার বলে কোনো চার-ছয় হাঁকাতে পারেনি পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানরা।  মুস্তাফিজের অসাধারণ বোলিংয়ে রাজিব গান্ধি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৪৩ রানের বেশি করতে পারেনি ডেভিড মিলারের পাঞ্জাব। ওয়ার্নারের ব্যাটে চেপে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় হায়দারাবাদ। চমৎকার এই পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার এনে দেয় মুস্তাফিজকে। অধিনায়ক জানান, এই মুহূর্তে নাকি নার্ভাস তরুণ এই পেসার, ‘সে ততটা ইংরেজি বলতে পারে না। কিন্তু (ক্রিকেটে) সে অসাধারণ এক প্রতিভা।’ ওয়ার্নার জানালেন, কাজ চালানোর মতো ইংরেজিতে তাকে ভরসা ঠিকই যোগান মুস্তাফিজ, ‘সে সব সময় বলে, নো প্রবলেম বোলিং, টকিং অ্যান্ড ব্যাটিং প্রবলেম।’ জাদুকরী বোলিংয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে মোহিত করে রাখা মুস্তাফিজ অবশ্য পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ‘নার্ভাস’ ছিলেন না। বাংলাতেই নিজের ছোট্ট প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, ‘সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। গেমটা অনেক ভালো হয়েছে। সবাই অনেক উপভোগ করেছেন।’
এই বাঁহাতি পেসার এখন এমনই জায়গায় নিয়ে গেছেন নিজেকে। আইপিএলে মুস্তাফিজ-বিস্ময় চলছেই। হায়দরাবাদের প্রতি ম্যাচেই ভাষ্যকারদের একটা দীর্ঘ সময়জুড়ে থাকে তাঁর নিয়ে কথাবার্তা। প্রতি ম্যাচ শেষে কোচ-অধিনায়ককেও বলতে হয় মুস্তাফিজকে নিয়ে। এই মুহূর্তে মুস্তাফিজকে নিয়ে নতুন কিছু বলাও তো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন বলতে বলতে বিশেষণও তো ফুরোয়, কিন্তু মুস্তাফিজের বিস্ময় যে ফুরোচ্ছে না! গতকাল হায়দরাবাদ সানরাইজার্সের অফিশিয়াল টুইটার থেকে টুইট করা হলো, ‘ম্যাজিকাল? মিস্ট্রিয়াস? ম্যাগনিফিসেন্ট? আমরা তো আমাদের তারকা খেলোয়াড় মুস্তাফিজের জন্য বিশেষণের সংকটে পড়ে যাচ্ছি!’
ওয়ার্নার নিজেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের জয়ে। তবে পুরো কৃতিত্ব যেন তিনি বোলারদের দিয়ে দিতে চাইছেন। আরও স্পষ্ট করে বললে মুস্তাফিজকে। তাঁর মতো প্রতিভা ক্ষণজন্মা। বিরল। বাংলাদেশের সৌভাগ্য, এই প্রতিভা অন্য কোনো দেশ নয়, পেয়েছে বাংলাদেশ। সেটাই বললেন ওয়ার্নার, ‘ভিন্ন ভিন্ন গতিতে বল করতে পারা আর বিভিন্ন গোপন অস্ত্রের ব্যবহার এক কথায় অসাধারণ! মুস্তাফিজের মতো প্রতিভা পেয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতেই পারে।’
মুস্তাফিজের সৌজন্যে ‘বাংলা’ও এখন ক্রিকেট মহলে আলোচিত। যেমন ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বেশ সাবলীল বাংলাতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিলেন। অবশ্য দুই বাক্যেই। আর মুস্তাফিজের জন্য এখন বাংলা শেখার ধুম পড়েছে। শুরুটা তাঁর কোচ ও অধিনায়কই করেছিলেন। হায়দরাবাদের অনেক অবাঙালি সমর্থকও এখন বাংলায় এক-দুটি শব্দ পোস্ট করার দিকে ঝুঁকছেন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। কোচ টম মুডি প্রথম দিন বাংলায় পোস্ট দিতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেছিলেন। এদিনও চেষ্টা করলেন। তাতে খুব একটা সফল হয়েছেন বলা যাবে না। তবে এবার আর বাংলা লিখতে গিয়ে বাংলিশ লেখেননি। ইনস্টাগ্রামের একটা ছবি পোস্ট করেছেন। মুস্তাফিজের মুখে কেক মাখিয়ে দিচ্ছেন হায়দরাবাদের মেন্টর ভি ভি এস লক্ষ্মণ। সেটারই ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ফিজের জন্য কেক উদ্যাপন! ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার জন্য মুস্তাফিজ তোমাকে অভিনন্দন। কী অসাধারণ পারফরম্যান্স!’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন