মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

যুবারাও লিখলো আক্ষেপের গল্প

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ম্যাচটা প্রায় হাতের মুঠোয়। ফাইনালের মঞ্চ ছুঁতে প্রয়োজন ২২ বলে ৩ রান। হাতে যথেষ্ট বল, নেই রান রেটেরও কোনো চাপ। তবে শেষ উইকেটের উত্তেজনা ছিলো চরমে। গঙ্গাপুরামের বলটি রকিবুল হাসান ঠেলে পাঠালেন শর্ট থার্ড ম্যানে। স্ট্রাইক পাবার আশায় মিনহাজুর রহমানের যেন তর সইল না। দিলেন ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। রকিবুল যখন না না করেছেন, ততক্ষণে মিনহাজ চলে গেছেন অর্ধেক পিচে। তাকে ফেরার সুযোগ দেয়নি ভারতীয় ফিল্ডার বাদোনি। তার আগেই স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার গঙ্গাপুরাম। কি রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছোটদের লড়াইয়েও! কিন্তু পরিণতি যে এক। বাংলাদেশের ২ রানের হার। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের কাছে এমনই এক কষ্টের হারে ফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়েছে বাংলাদেশ যুবদলের।

২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের স্মৃতিই যেন গতকালও ফিরে ফিরে এলো সেই মিরপুরে। মিনহাজ, শামীম, রকিবুল আর হৃদয়দের ছায়ায় যেন দেখা মিললো মুশফিক, সাকিব, তামিম, নাসিরদের অশ্রæসিক্ত মুখগুলো। ওত দূরেই বা যাই কেন! এবারের এশিয়া কাপের ফাইনালেই তো লেখা হয়েঝে আরেকটি হৃদয় পোড়ার গল্প। ভারতের কাছে শেষ বলে এসে হেরে শিরোপাবঞ্চিত মাশরাফির দলের সঙ্গেই যেন বেশি মানায় তৌহিদ হৃদয়ের দলটিকে। সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ এসেছিল জুনিয়র টাইগারদের সামনে। কিন্তু তারা অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে উলটো ক্ষত বাড়িয়ে দিয়েছে।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করা ভারতকে ১৭২ রানে গুটিয়ে কাজটা সেরে রেখেছিলেন বোলাররা। মামুলি ওই লক্ষ্য পৌঁছাতে নিদারুণ ব্যর্থতা দেখালেন ব্যাটসম্যানরা। ২২ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৭০ রানে।

বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় মঞ্চের নক আউট ম্যাচেও বারবার বাংলাদেশের বাধা হয়েছে ভারত। বয়সভিত্তিক পর্যায়েও নকআউট ম্যাচে সেই ভারতই বাধা হয়ে দাঁড়াল বাংলাদেশের।

১৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু যতটা ভালো হওয়া দরকার ছিল, সেটি হয়নি। বরং ভারতীয় বোলারদের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টপ অর্ডার। ৭ রানে ওপেনার সাজিদ হোসেনকে (২) দিয়ে শুরু। ব্যাটিং বিপর্যয়ের ছবিটা দেখা গেল ২০ ওভার পর্যন্ত। যখন বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ৬৫। এরপরই খেলাটা নিজেদের মুঠোয় আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা শামীম হোসেন ও আকবর আলীর ষষ্ঠ উইকেটে ৭৪ রানের জুটি। এই জুটিই স্বপ্ন দেখিয়েছে, মনে হয়েছে এবার অন্তত আক্ষেপে পুড়বে না বাংলাদেশ। কিন্তু কোথায় কী? হার্শ ত্যাগীর শিকার হয়ে ৪৫ রান করা আকবর আলী আউট হতেই আবারও এলোমেলো বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১৩৯ থেকে চোখের পলকে স্কোর হয়ে গেল ৯ উইকেটে ১৬১, ২২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট নেই! বাংলাদেশ আরও বিপাকে, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ করা শামীমও আছেন! তখনই চরম উত্তেজনা, ৩৯ বলে বাংলাদেশের দরকার ১২ রান। ভারতের ১ উইকেট। স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে বাংলাদেশের শেষ উইকেট যখন ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই সেই পুরোনো গল্প। আরও একবার তীরে এসে তরি ডুবল বাংলাদেশের।

এর আগে ভারতের ইনিংসের প্রায় পুরোটাই দাপট ছিল বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের। ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল। দেবদূত পাডিকালকে ফিরিয়ে দেন ৩ রানেই। এরপর ইয়াসভি জসওয়াল ও অনুজ রাওয়াত সামাল দেন বিপর্যয়। তাদের ৬৬ রানের জুটির পর বাংলাদেশের দুই স্পিনার গুড়িয়ে দেন ভারতের মিডল অর্ডার। ৮ রানের ব্যবধানে আরও ৪ উইকেট হারায় ভারত। যার দুটি নেন তৌহিদ হৃদয়, অন্য দুটি যায় লেগ স্পিনার রিশাদের পকেটে। ভারতের দ্বিতীয় প্রতিরোধের শুরু সেখান থেকেই। ৬ষ্ঠ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন আয়ুশ বাদনি ও সামির চৌধুরী। মিনহাজুর রহমানের বলে বাদনির আউতে ভাঙে জুটি। এরপর শরিফুল আর মৃত্যুঞ্জয়ের পেসের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি ভারতের ইনিংস। বাকি চার উইকেট তুলেছেন এই দুই পেসার। ১০ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট শরিফুলের। ২৭ রানে ২ উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন