রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বাণিজ্য যুদ্ধ : সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিবিশ্বেরপ্রধান দু’টি পরাশক্তির মধ্যে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ অনিবার্য করেতুলেছে। চীনাপণ্যের উপরহাজারহাজার কোটিডলারেরকরারোপের ঘোষণারমধ্য দিয়েচীন-মার্কিনবাণিজ্য যুদ্ধ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমানহয়ে উঠতে শুরুকরেছে। চীনএবংমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগতভাবে দুইপ্রবলপ্রতিদ্বন্দী রাষ্ট্র হলেও এই দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাও প্রবল। এ কারণেই চীন-মার্কিনবাণিজ্য যুদ্ধ দুই দেশের অর্থনীতিতেই বড়ধরনের নেতিবাচকপ্রভাবসৃষ্টিরপাশাপাশি এ দু’ দেশের উপর নির্ভরশীল ছোট অর্থনীতির দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। তবে বিশ্বের প্রধান গার্মেন্ট রফতানীকারক দেশ চীন এবং আমদানীকারক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল বাংলাদেশের মতআরএমজিরফতানীনির্ভর অর্থনীতির দেশকে বিশেষ বাড়তি সুযোগ দেবে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আগেই ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন। অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশ্লেষকদের সে ভবিষ্যদ্বানী এরই মধ্যে সত্যে পরিনত হতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম থেকে শুরুহওয়া বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন কোম্পানী বাংলাদেশকে তাদের নতুন বাজার হিসেবে টার্গেট করে অ্যাপারেল ক্রয়ের জন্য ঝুঁকতে শুরু করেছে। বিশ্ববাণিজ্যের এই নতুন পোলারাইজেশন বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের জন্য এক অভ‚তপূর্ব সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর অনুসারে, চলতি অর্থবছরে দেশের রফতানী বাণিজ্যে বড় প্রবৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং এই প্রবৃদ্ধির শতকরা ৮২ শতাংশই আসছে তৈরী পোশাক রফতানীতে। বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট ক্রেতাপুরনো কোম্পানীগুলোআগের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছে বলে জানা যায়। সেই সাথে নতুন বড় বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ইনকোয়্যারি ও সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। গত অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীন থেকে ২ হাজার ৭০৩ কোটি ডলারের অ্যাপারেল কিনেছিল। একক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরী পোশাক কেনা-বেচায় এটি বৃহত্তম অংক। বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন ক্রেতারাচীন থেকে ব্যবসায় গুটিয়ে বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে। এ ক্ষেত্রেকিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সস্তা ও মানসম্মত পোশাকের উৎস হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নিতে চাইছে। তবে তৈরী পোশাক রফতানীতে চীনকে বাদ দিলে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দী দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের মত দেশগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিশাল বাজারের অর্ধেকও যদি বিকল্প নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকে তাহলেও এসব দেশের তৈরী পোশাক রফতানী নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছে। সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এখানে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দিতে পারে। প্রায় ৫ বছর আগে রানাপ্লাজা ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকখাত পশ্চিমাবিশ্বে যে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তারই ফলে খুব দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানী কমে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরী পোশাক রফতানীতে বাংলাদেশের অবস্থান দখলকরে নেয় ভারতীয় রফতানীকারকরা।

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানীখাত অনেক অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়েছে। খ্যাতনামা তৈরী পোশাক কারখানায় নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে। তাজরিন ফ্যাশন এবং রানাপ্লাজা ধসের ঘটনাছিল দেশের তৈরী পোশাক শিল্পের জন্য অনেক বড় আঘাত। নাশকতা, অপপ্রচার ও ট্রাজেডির পর অ্যাকর্ড-এলায়েন্সের নামে তৈরী পোশাক কারখানায় পশ্চিমা খবরদারির ব্যবস্থায় একদিকে যেমন শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়েছে, অন্যদিকে দেশে তৈরী হয়েছে বেশকিছু আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ কারখানা। কমপ্লায়েন্সের পেছনে শতশত কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হলেও দেশের তৈরী পোশাকের মূল্য বাড়ায়নি ক্রেতারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন শর্ত এবং মূল্য কমিয়ে গার্মেন্টস রফতানী কারকদের চাপে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিলসহ পরিবর্তিত বাস্তবতায় এ কথা বলা যায় যে, বাংলাদেশের তৈরী পোশাকখাত নিজস্ব সক্ষমতায় তার প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখন চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিলেও এই সম্ভাবনাকে একটি মওসুমী বা অস্থায়ী সুযোগ হিসেবে না দেখে এই বাজার ধরে রাখতে এবং তা স্থায়ী রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসুত্রিতা ও দুর্নীতি রোধ, সুশাসন, ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ , বন্দর ও পরিবহনে অবকাঠামোগত সক্ষমতাবৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুত ও জ্বালানী খাতের সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তাকে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতার বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করছেন দেশি-বিদেশী বিশ্লেষকরা। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রফতানী বাণিজ্যে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা গুলো দূর করার জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন