বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানো আবশ্যক : অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ে এ মুহূর্তে সময় বাড়ানো একান্ত আবশ্যক বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসংগত এবং আমি মনে করি সরকারের যে পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার কোনো যুক্তি নেই। যদি কেউ এটাকে বাস্তবায়ন না করতে চায় তাহলে তার শক্ত যুক্তি দেখাতে হবে এতে ‘অর্থনীতির ক্ষতি হবে’। রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে গত সোমবার রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পুঁজিবাজার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভ‚মিকা নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, এখন ব্যাংকে যে পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে সেখানে আরও টাকা দিলে অলস টাকা বাড়বে। অলস টাকা বাড়লে ব্যাংক আমানত নিতে অস্বীকার করবে। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বেশি টাকা ব্যাংকের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যুক্তিসংগত হবে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত।
এখন যদি কেউ এটি বাস্তবায়ন না করতে চায়, তাহলে তার শক্ত যুক্তি দেখাতে হবে এতে ‘অর্থনীতির ক্ষতি হবে’ যেটাকে বলে বাবল। বাবল সৃষ্টি হয়, যদি হঠাৎ টাকা আসে। বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানো সঠিকভাবে হলে বাবল হওয়ার সুযোগ নাই। আমি মনেকরি এ মুহূর্তে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় সময় বাড়ানো একান্ত আবশ্যক, বলেন মশিউর রহমান।
এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত করা হবে। এরপর আমরা গেলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলে এটি আসতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। গেলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে চিঠি লিখলে আমরা ওকে করে দিবো। এই করতে করতে এ বিষয়ে জড়িত হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে গেলাম। তিনি পুঁজিবাজারের স্বার্থে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
এরপর অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের সামনে কথা দিয়েছেন বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হবে। সে সময় অর্থ সচিবও উপস্থিত ছিলেন। আমরা খতিয়ে দেখলাম যে আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেই আইন পরিবর্তন না করেই সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর সুযোগ আছে। এখন শুনছি কায়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বোঝানো হচ্ছে এই সুযোগ দেওয়া হলে বাজার মেনুপুলেট (কারসাজি) ও বাবল হবে। আমরা কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না এটাতে কিভাবে বাজার বাবল হবে, বলেন রকিবুর রহমান।
এ সময় তিনি অর্থ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, পুঁজিবাজার খারাপ কিছু তো না। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে পুঁজিবাজারকে আনতেই হবে। আর একটি কথাÑআমরা যদি ব্যক্তি বিশেষকে শিল্পায়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকার উপরে ১৫ বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত রিসিডিউল (ঋণ পুনঃতফসিল) করতে পারি, তাহলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য এ কাজটি (বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো) করতে পারি না। আমরা টাকা চাচ্ছি না, সহায়তা চাচ্ছি না, কোনো ফান্ড চাচ্ছি না। আমরা শুধু পলিসি সাপোর্ট (নীতি সহায়তা) চাচ্ছি। এখন যেভাবে আইন, নীতিমালা করা হয়েছে, সেখানে বাজার বাবল করার সুযোগ কোথায়?
ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ সমন্বয় করা নিয়ে কেন এই খেলা খেলছে? আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিষয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে ধিরে ধিরে পুঁজিবাজার ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারের গলা টিপে ধরে আছে। এ ধরনের কার্যকালাপ বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, তিতাস গ্যাস মুনাফার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। আবার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের নিবন্ধন সনদ বাতিল করে দিলো। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ার পরও বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে একবারও পরামর্শ করার প্রয়োজন মনে করলো না। এখন এই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের কি হবে? এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন এক এক সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বিনিয়োগকারীরা তার জন্য সাফার (দুর্ভোগ) করছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর লক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড করা হয়েছে। তবে অনেক বিজ্ঞ এ বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন। ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়েছে, কিন্তু শেয়ারবাজারে ইতিবাচক না হওয়ায় তারা সমালোচনা করেন।
সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি কারণে ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে ফোর্সড সেল করা সম্ভব হয়নি বলে জানান খায়রুল হোসেন। যাতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে গত ৫ বছরে বিভিন্ন আইন-কানুন করায় প্লেসমন্ট, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ছে, বলেন খায়রুল হোসেন। দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি ও বিএসইসি’র সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, শুধু ফি নিতে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে মার্চেন্ট ব্যাংকের সুপারিশ করা ঠিক না। সম্পূর্ণ ডিউ ডেলিজেন্স পালন করে একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। এছাড়া একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে টাকা সংগ্রহ থেকে শুরু করে তা ব্যবহার পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষে তদারকি করা দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্বাস করে না। এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য করে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ মিথ্যা অ্যাকাউন্টস প্রকাশ করতে পারে না। যদি করে সেটা ক্রিমিনাল অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সময়সীমা ইস্যুতে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। যাতে বাজারে খারাপ অবস্থা। এছাড়াও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমন্বয়হীনতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন ড. মোহাম্মদ মূসা। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা না বুঝে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করে। আবার অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে শুধুমাত্র একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তারা এক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে ভালো ও বড় কোম্পানি আনা দরকার। কিন্তু দেশে এমন কোম্পানি থাকলেও শেয়ারবাজারে আসতে চায় না।
বিএমবিএ সভাপতি মো. সায়েদুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে, শুধু শেয়ারবাজারে নয়। এর অন্তরায় রয়েছে শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সময়সীমা ও মার্জিন ঋণ ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ইক্যুইটি’র বিষয়। এই দুই বিষয়ের সমাধান হলে শেয়ারবাজারে উন্নয়ন হবে। এছাড়া শেয়ারবাজারের উন্নয়নে মানসম্পন্ন কোম্পানি আনতে হবে।
প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে অনেক রুলস রেগুলেশন করা হয়েছে। যা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া নতুন পাবলিক ইস্যু রুলসের মাধ্যমে প্রাইমারি মার্কেট উন্নত হবে। শেয়ারবাজারের আরও উন্নয়নে ভালো ভালো কোম্পানি আনতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন