বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আবারো বায়ার্নের স্প্যানিশ বাধা

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত দুই মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের পরিণতির কথা মনে আছে? বায়ার্ন সমর্থক হলে নিশ্চয় ভুলে যাননি। দু’বারই আসরের ঠিক এই পর্যায় থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। দু’বারই তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্প্যানিশ কোন দল। গতবার থামতে হয়েছিল বার্সেলোনার কাছে, তার আগের বার রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। এবারও ঠিক একই পর্বে আরেক স্প্যানিশ বাধার সামনে দাঁড়িয়ে বায়ার্ন। এবারের প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। একটু নড়েচড়ে বসতেই পারে বায়ার্ন। চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার মত বাধা পেরিয়ে এই পর্যায়ে এসেছে অ্যাটলেটিকো। সময়ের যে কোন দলই তাদেরকে সমীহ করতে বাধ্য। সব মিলে মাদ্রিদের স্তেদিও ভিসেন্তে ক্যালদেরন স্টেডিয়ামে আজ বায়ার্নের দিনটা সহজ হবে না বলেই অনুমান করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দু’দলই ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য। আরো ছোট করে বললে বায়ার্নের এই পথ পর্যন্ত আসা মুলত ঘরের মাঠে তাদের খুনে পারফর্মেন্সের বদৌলতেই। প্রতিপক্ষের মাঠের ব্যর্থতা তারা ঘরের মাঠে কড়ায়-গÐায় বুঝে নিয়েই এই পর্যন্ত এসেছে তারা। অ্যাটলেটিকোও প্রথম লেগে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকার পর ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে বার্সাকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয়। তাছাড়া রক্ষনের দিক দিয়ে স্পেনের অন্যতম সেরা দল অ্যাটলেটিকো। ঠিক এই কথাগুলেই স্বতীর্থদের কানে পৌঁছে দিলেন বায়ার্নের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জাভি মার্টিনেজÑ ‘আমরা চেয়েছিলনাম
যতদুর সম্ভব অ্যাটলেটিকোকে এড়াতে। তাদের হারানো খুব কঠিন এবং আমার মতে তারাই সেমির সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ। মানসিকভাবেও তারা খুবই শক্তিশালী। সব মিলে তারা একটা পরিণত দল। জয়ের জন্য তাই আমাদের শতভাগ দিয়েই লড়তে হবে।’ নিজের স্বতীথদের স্বতর্ক করেছেন দলের আরেক স্প্যানিশ জাভি অ্যালানসোÑ ‘এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে তাদের রক্ষণই তাদের অন্যতম শক্তি, কিন্তু একমাত্র নয়। আক্রমনেও তারা ভয়ঙ্কর। তারা দ্রæত বলের দখল নিয়ে মুহুর্তেই কাউন্টার অ্যাটাকে যায়।’ তাছাড়া অ্যাঠলেটিকোর মাঠও বড় একটা বাধা উল্লেখ করে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার বলেনÑ ‘ভিসেন্তে ক্যালডেরন সব সময়ই খঠিন। সেখানকার অবহাওয়া এমনকি উল্লাসিত দর্শক তাদের উদ্দোম যোগায়।’ ঘরের মাঠে শেষ ১৫ ম্যাচের ১৩টি’তেই গোলবার অক্ষত রেখেছে সিমিওনের দল। তা সত্তে¡ও আজ তারা জয়ের জন্যই খেলবে বলে জানান ৩৪ বছর বয়সী সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
গোল করার মত খেলোয়াড়ের অভাব নেই কোন দলে। রবার্ট লেভান্দোভস্কি ইতোমধ্যেই ক্লাব ও দেশের হয়ে মৌসুমে গোল করেছেন ৪৬ টি। ছন্দে আছেন আরেক ফরোয়ার্ড টমাস মুলারও। জবাবে অ্যাটলেটিকোর আছে গ্রিজম্যানের মত গোল স্কোরার। স্বস্তির পাশাপাশি কিছুটা অস্বস্তি থাকছে স্বাগতিকদের সামনে। যদি স্বস্তির বিষয় হয়ে থাকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফার্নান্ডো তোরেসের দলে ফেরা, তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল দলের সেন্টার ব্যাক ডিয়েগো গদিনকে হ্যামিস্ট্রিং চোটের কারণে হারানো। একই কারণে পাওয়া যাবে না জোসে জেমিনেজকেও, এছাড়া হাঁটুর চোটে ভুগতে থাকা টিয়াগোও দলের বাইরে। ওদিকে বায়ার্নেরও এই সমস্যা অবশ্য আছে, তবে তা বেশ পুরোনো হওয়ায় মানিয়ে নিয়েছে তারা। চোটের কারণে গত মার্চ থেকে দলের বাইরে অরিয়েন রোবেন, তারও এক মাস আগে থেকে দলে নেই দলের জার্মান ডিফেন্ডার হোলজার বাস্তুবার।
এ তো গেল মাঠের লড়াই। তারও আড়ালে লুকিয়ে আছে আরো একটি লড়াই। লড়াইটা মনস্তত্বের। সেখানে প্রতিপক্ষ দু’দলের দুই দিকনির্দেশক পেপ গার্দিওলা ও ডিয়েগো সিমিওনে। খেলোয়াড়ি জিবনেও দুজন ছিলেন প্রতিপক্ষ। দু’জনই খেলতেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে। লা লিগায় আর্জেন্টাইন সিমিওনে খেলেছেন অ্যাটলেটিকো ও সেভিয়ার হয়ে, গার্দিওলা বার্সেলোনায়। মুখোমুখি লড়াইয়ে দু’জনেরই ৪টি জয়ের বিপরিতে ড্র তিন ম্যাচে। সময়ের আবর্তে আজ তাদের দায়িত্ব আরো বড়। এই অধ্যয়ে স্বভবতই সফলতার পাল্লাটা ভারি গার্দিওলার দিকে। বার্সায় তার সোনায় মোড়ানো কোচিং অধ্যায়ের কথা জানে না কে। এর আগে ডাক আউটে দু’জনের সাক্ষাৎ হয়েছে একবারই। ২০১৩ সালে লা লিগার সেই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল গার্দিওলার বার্সা।

গত কয়েক বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের নিয়মিত নাম বায়র্ন মিউনিখ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তা সত্তে¡ও আসরে তাদের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে, ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে। দুই পর্বের সেই লড়াইয়ে বায়ার্নের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে ৪-০ ব্যবধানে মাদ্রিদের দলকে হারিয়ে শিরোপা জেতে বায়ার্ন।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
# ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে গত তিন বছরে দ্বিতীয় বারের মত শেষ চারে উঠল অ্যাটলেটিকো। বায়ার্ন এই পর্বে খেলছে টানা পঞ্চম বার।
# সব মিলে ইউরোপিয়ান কাপের সেমি-ফাইনালে ৫ বার উঠল অ্যাটলেটিকো। সমান দু’টি করে জয় ও পরাজয়। দুই বছর আগে সর্বশেষ চেলতিকে দুই লেগ মিলে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তারা।
# ইউরোপিয়ান কাপের শেষ চারে ঘরের মাঠে হারের রেকর্ড নেই অ্যাটলেটিকোর, তিন জয়ের বিপরীতে একটিতে ড্র।
# জার্মান কোন দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে শেষ ৫ ম্যাচে হারেনি অ্যাটলেটিকো, ৪টি জয় ও ১টি ড্র।
# সব মিলে জার্মান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৩৪ ম্যাচে অ্যাটলেটিকোর জয় ৩৪, ড্র ৬ ও হার ১২টি।

বায়ার্ন মিউনিখ
# গত দুই মৌসুমেই স্প্যানিশ প্রতিপক্ষের কাছে হেরে সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখকে। ২০১৩/১৪ মৌসুমে বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ১-০ গোলে হারের পর ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছিল বায়ার্ন। গত মৌসুমে ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার কাছে ৩-০ গোলে হারের পর দুই লেগ মিলে ৩-৫ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল জার্মান প্রতিপক্ষকে।
# শেষ ১২ বারের স্পেন সফরে বায়ার্নের জয় মাত্র ২টি, হার ৮টি’তে। স্পেনে তাদের রেকর্ড : ২৩ ম্যাচে জয় ৬টি, ড্র ৫টি ও হার ১২টি। সাকূল্যে স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে মোট ৪৯ ম্যাচে ২৩টি জয়, ১২টি ড্র ও ১৪টি হারের রেকর্ড বায়ার্নের।
# নিজেদের শেষ দুই অ্যাওয়ে ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে বায়ার্ন। প্রতিপক্ষ : শেষ ষোলর প্রথম লেগে জুভেন্টাস ও কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বেনফিকা।
# পেপ গার্দিওলার দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ৯ অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেছে মাত্র ২টি, হার ৪টি।
# নক-আউট পর্বে শেষ ৭ অ্যাওয়ে ম্যাচের একটিতেও জয় নেই বায়ার্নের, ড্র ৪টি ও হার ৩টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন