শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রার্থী মনোনয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর আরো সচেতন হতে হবে

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে একটি উৎসব। এ দেশের মানুষ দলবেধে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়। এই রীতি দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে। নির্বাচন আসলে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। কিন্তু একটি বিষয় প্রায়ই দেখা যায়, কালো টাকার মালিক বা দুর্নীতিবাজরা নির্বাচিত হয়ে আসছে। ভোটারদের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা, নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অসচেতনতার কারণেই এমনটি ঘটছে। বর্তমানে কলুষিত পরিবেশে ভাল মানুষেরা রাজনীতির মাঠে থাকতে চায় না। ফলে রাজনীতি দুর্নীতিবাজ, খুনী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দখলে চলে যাচ্ছে। ভাল প্রার্থী পাওয়া দুষ্কর। অথচ জনগণ চায় সৎ, শিক্ষিত, চরিত্রবান, আদর্শিক ও সমাজ সেবার মানসিকতাসম্পন্ন যোগ্য মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হোক, যারা সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থাকবে-কেবল তারাই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকারী। এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে সক্ষম ব্যক্তিকেই ভোট দেয়া কর্তব্য বলে মনে করা উচিত। যারা ঘুষ খায়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পায়ে ধরে। ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে তাদেরকে বর্জন করতে হবে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ার জন্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া দরকার। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন নির্বাচনে পেশীশক্তি, অর্থের প্রভাবের কারণে অশিক্ষিত জনপ্রতিনিধিরা এক একটি নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব নেন। এরা অনেকেই অজ্ঞতার কারণে কোথায় প্রকল্প বা কোথা থেকে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আনতে হয় সেটাও জানে না। সুতরাং ঐ এলাকা উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে যায়।
অপরদিকে জনপ্রতিনিধি সেবার পরিবর্তে ব্যবসার জন্য রাজনীতি ও নির্বাচন করেন। নির্বাচিত হয়েগেলে তিনি জনসেবার কথা ভাবেনই না। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাই দেশ ও জনগণের পক্ষে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য। অথচ দেখি তারা জনগণের পক্ষে যতটা না কথা বলেন তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। সংসদে উত্তেজনা, ফাইল ছোড়াছুড়ি হয়।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশের জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ইসির অনেক শর্ত থাকলেও প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনো শর্ত আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করার জন্য, দেশকে উন্নত থেকে উন্নততর করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া বাঞ্চনীয়। আমাদের দেশে দিন দিন অনেক কিছুরই সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে। একইভাবে বদলে যাচ্ছে জনপ্রতিনিধির সংজ্ঞাও। আগে জনসেবার লক্ষ্য নিয়ে সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত ও সৎ মানুষ জনপ্রতিনিধি হতেন। সাধ্যমতো তারা মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এখন অবৈধ অর্থের মালিক, সন্ত্রাসী বা পেশিশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তিরাই বেশি করে জনপ্রতিনিধি বনে যাচ্ছেন। মান-সম্মানের ভয় আছে এমন কোনো ব্যক্তি এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করারই সাহস পান না। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। চাঁদাবাজি, প্রকল্পের টাকা লুটপাট, নানা রকম দখলবাজি, দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ বা চাল-গম লুটপাটসহ বহু রকম অন্যায়ের অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। মাদক কারবারের অভিযোগও আছে অনেকের বিরুদ্ধে। অনেকের প্রতাপ-প্রতিপত্তি এত বেশি যে কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করারই সাহস পায় না।
এসব অপকর্মের দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতেই হবে। তা না হলে তৃণমূলে দলের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হবে, তা কাটিয়ে ওঠা দলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ভবিষ্যতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলগুলোকে আরো সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। তার পরও কোনো প্রার্থী যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড বা অপরাধে জড়িয়ে যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, জনপ্রতিনিধিরা জনসেবায়ই নিয়োজিত থাক।
সকল দলের উচিত নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইকালে তাদের সততা, দক্ষতা ও জনগণকে মূল্যায়নের সক্ষমতা বিবেচনায় আনা। জনগণবিরূপ নেতা নন; সৎ ও আদর্শবান নেতাকে প্রার্থী করা হলে জনগণের আসল ক্ষমতায়ন হবে। যার দরজা শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও খোলা থাকবে। যিনি রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী হবেন। যিনি সবার কথা ভাববেন। যিনি প্রকৃত সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ, জনকল্যাণমুখী, প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব হবেন। সমাজের অনাচার, অবিচার, সন্ত্রাস দূর করে মানুষের বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। নির্বাচিত প্রার্থী সদয়, দূরদর্শিতা, মানবিকতা ইত্যাদি গুণ দিয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন।
নির্বাচনের জন্য প্রার্থী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিতে জড়িত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ন্যায়পরায়ণ, বিবেকবান, আদর্শবান, নীতিনিষ্ঠ, সমাজ উন্নয়নে নিবেদিত, সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা বিজয়ী হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
শওকত আকবর ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৪৫ পিএম says : 0
ঋনখেলাপি,বিলখেলাপি, আর কালোটাকার মালিকদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষনা করো করতে হবে এ শ্লোগান জীবনে বহু করেছি | কিন্তু আজও কালো টাকার মালিক দেরই নিয়োর্ন্ত্রনে রাজনীতি | কে শুনবে আপনার নীতি কথা | মনোনশীল সত্যসেবী দেশ প্রেমিক দেশ দরদী রাজনৈতিকের বড় অভাব | আপনার এই নীতি কথা লিখার জন্য ধন্যবাদ |
Total Reply(0)
শওকত আকবর ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৩২ পিএম says : 0
জনাব,সম্পাদক সাহেব| দৈনিক ইনকিলাব | ভক্তিপুর্ন সালাম নিন| ইনকিলাব আমার প্রিয়পত্রিকা | আমি নিয়োমিত পাঠকও ছিলাম বটে ,খুলনা আমার কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়ী চলে আসার কারনে আজ প্রায় একযুগ পত্রিকা থেকে বন্চিত এবংরাজনীতি থেকে নিঃস্ক্রিয় রয়েছি | রাজনীতিতে আর সমপ্ক্রক্ত হওয়ার ইচ্ছা নাই | শুধু ইনকিলাব এর চিঠিপএ কলামে মাঝে মধ্যে লিখতে চাই| ইহাই হবে আমার দীনমজুরী জীবনের পরমস্বার্থকতা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন