শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতিহিংসায় গণস্বাস্থ্যর ক্ষতি করা উচিত হয়নি সাভারে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

হামলায় আহত ঝালকাঠির সেই লিমন, মানববন্ধন

সেলিম আহমেদ, সাভার | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। যে যাই বলুক রাজনৈতিক কারণে এই মহান প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা মোটেও উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বীরউত্তম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
শনিবার দুপুরে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনে ভাংচুর, লুটপাট, মারধরসহ নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্চিত করার ঘটনায় এবং আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করে আমি খুবই মর্মাহত হলাম। এখানে মেয়েদের আকুতি শুনলাম, স্বাধীন দেশে মেয়েরা এরকম অসহায় বোধ করবে এটা ভাবা যায় না। গণস্বাস্থ্য স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে একটি স্বনামধণ্য প্রতিষ্ঠান। যে যাই বলুক রাজনৈতিক কারনে এই মহান প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা মোটেও উচিত হয়নি। গণস্বাস্থ্যের বড় বড় গাছ কেটে জমি দখলে নেয়ার বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, গাছ লাগানো যত সহজ, গাছ কাটা কিন্তু খুবই কঠিন। আমার একটা সন্তানের গলাকেটে ফেললে যেমন মনে হতো, গাছগুলো কাটার পর আমার তেমনই মনে হচ্ছে। আর কিছু না হোক যারা এগাছগুলো কেটেছে তাদের অন্ততপক্ষে ১২ বছর জেল হওয়া উচিত। এর আগে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এ সময় তার সাথে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দিন এবং গণবিশ^বিদ্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো আলোচিত লিমনের হাত ভাঙলো সন্ত্রাসীরা
গাছ কেটে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমানা ঘিরে দখল, নারীদের লাঞ্ছিত ও ভাংচুরের ঘটনায় বাঁধা দেয়ায় দখলকারীদের হামলায় আহত হয় র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির সেই আলোচিত লিমন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। লিমন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কলেজ ছাত্র ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের আলোচিত লিমন হোসেনকে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ আটক করেছিলো র‌্যাব। সে সময় র‌্যাবের গুলিতে তার বাম পা হারায়।
এদিকে, শনিবার দুপুরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বীরউত্তম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভাংচুর স্থান পরিদর্শন করেন। আহত লিমনের পাশে বসে তার খোঁজখবর নেন। এছাড়া আহত ছাত্রীদেরও খোঁজখবর নেন তিনি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করে আমি খুবই মর্মাহত হলাম। এখানে মেয়েদের আকুতি শুনলাম, স্বাধীন দেশে মেয়েরা এ রকম অসহায় বোধ করবে এটা ভাবা যায় না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনার্স সম্পন্নকারী ছাত্র লিমন হোসেন তাদের কাছে ভাংচুরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে হামলাকারীরা লিমনকে আঘাত করে তার হাত ভেঙ্গে দেয়। লিমন বর্তমানে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আহত শিক্ষার্থী লিমন জানান, শুক্রবার সকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বহিরাগতদের ভিড় দেখে সেখানে গিয়ে তার সহপাঠীদের লাঞ্ছিত হতে দেখেন। এ সময় প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙ্গে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার অন্য সহপাঠীদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে। এ প্রসঙ্গে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, কোন অভিযোগ পাইনি, পেলে তদন্ত করে দেখবো।
ছাত্রী হোস্টেলে হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভ্যন্তরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ছাত্রী হোস্টেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানায়, শুক্রবার কটন ট্রেক্সটাইল ক্রাফটস লিঃ এর কিছু সন্ত্রাসী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ঢুকে পিএইচএ ভবনে ভাংচুর ও লুটপাটের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রস্থ গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রী হোস্টেলে হামলা করে। ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রীদের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে এবং ছাত্রীদের বইখাতা ও শিক্ষা উপকরণ নষ্ট করে দেয়। এ কারণে কিছু ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং তারা শনিবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
মানববন্ধনে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ খাদিজা আক্তার সেতু ও ছাত্র সংসদের উপদেষ্টা মীর মুর্ত্তজা আলী বক্তব্য রাখেন। বক্তারা ছাত্রীনিবাসে এ ধরণের হামলার নিন্দা ও হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুশিয়ারী দেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সাভারের মির্জানগর এলাকায় ১৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য পিএইচএ ভবন অবৈধ ভাবে মালিকানা দাবী করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড নামের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় বহিরাগতরা। এ সময় ভবনে ভাংচুর, কম্পিউটারসহ মূল্যবান মালামাল লুট, হোস্টেলে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের মারধর ও গাছপালা কেটে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে তাদের বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন