স্পোর্টস ডেস্ক : ডি বক্সের সামনে চোখ জুড়ানো ড্রিবলিংয়ের ঢেউ তুলে একক প্রচেষ্টার গোল করাটা ইদানিং কালে খুব একটা নজরে পড়ে না। তবে মাঝে মধ্যেই এ ধরনের জাদু নিয়ে হাজির হতে দেখা যায় বার্সার আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে বার্সেলোনার হয়ে বায়ার্ন মিউনিখের জালে এমনই অসাধারণ একটি গোল করেছিলেন মেসি। যে গোলটি জিতেছিল উয়েফার বর্ষসেরার খেতাবও। বছরান্তে আসরের ঠিক একই পর্যায়ে এসে একই দলের বিপক্ষে আরেক স্প্যানিশ দলের হয়ে তেমনি এক অসাধারণ ড্রিবলিং গোল উপহার দিলেন সাউল নিগুয়েজ। এখন পর্যন্ত এই গোলটি আসরের সেরা গোল হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ২১ বছর বয়সী স্প্যানিশের একমাত্র গোলেই পরশু রাতে ভিসেন্তে ক্যালডেরনে শেষ হাসি হেসেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
সাউল এই জাদুকরী মুহুর্তটা উপহার দেন ম্যাচের শুরুতেই। প্রায় ৩৫ গজ দুর থেকে বল নিয়ে বায়ার্নের রক্ষণ ত্রয়ী থিয়াগো, জুয়ান ও জাবি অ্যলানসোকে বোকা বানিয়ে সামনে থাকা আরো একজন ডিয়েন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠিয়ে দেন সাউল। এই একটিমাত্র গোল দিয়েই সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ৯ ম্যাচ গোল না পাওয়ার অক্ষেপ ভুলে যেতে পারেন তিনি। তবে মিডফিল্ডার হিসেবে অ্যাটলেটিকোর হয়ে সর্বোচ্চ ৯ গোল কিন্তু তারই।
সাউলের গোলে ১-০ ব্যবধানের জয়ের কাব্যনাট্য অ্যাটলেটিকো লিখেছে ঠিকই, কিন্তু পুরো ম্যাচের চিত্রনাট্য ছিল একবারেই ভিন্ন। ম্যাচের প্রায় ৪৫ শতাংশ সময়ই স্বাগতিকদের বক্সের সামনে বল নিয়ে ঘুরোঘুরি করেছে বায়ার্ন, কিন্তু গোল মুখ আবিষ্কার করতে পারেনি তারা। আসরে সর্বোচ্চ ২৮ গোল করা বায়ার্নের সামনে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ। একই আসরে সবচেয়ে কম ৫ গোল খাওয়া অ্যটলেটিকো রক্ষনে আবারো নিজেদের শক্তির জানান দিল। প্রধমাধ্যে বায়ার্ন বলের দখল রাখলেও ভয়ঙ্কর কয়েকটি দলীয় আক্রমনে এগিয়ে ছিল অ্যাটলেটিকোই। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাড়ায় বায়ার্ন। তবে স্বগতিক রক্ষনে কাপুনি ধরালেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি তারা। প্রায় ৩৫ গজ দুর থেকে বায়ার্ন ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবার শট বারে লেগে ফিরে আসে। আর্দা তুরানের দুরপাল্লার শট দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক। অথচ পুরো ম্যাচে মাত্র ২৪ শতাংশ বলের দখল রেখেও গোলের বেশ কয়েকটি সুবর্ন সুযোগ তৈরী করেছিল সিমিওনের দল। শেষ বাঁশি বাজার ১৫ মিনিট আগে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল পেতে পারতেন ফার্নান্ডে তোরেস। কিন্তু বল বারে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলও জালে পাঠানোর সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন কোকে। তবে আর কোন গোল না পেলেও বায়ার্নের মত দলকে গোলবঞ্চিত রাখাও তো সহজ কথা নয়। এমন জয়ে তাই খুশি কোচ সিমিওনেÑ ‘প্রথমার্ধ অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, যেটা আমরা চেয়েছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে তারাই ছিল সেরা তারপরও আমি স্বস্তি বোধ করছি, আমরা ভালো রক্ষন করেছি।’ ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা সাউলের প্রসংশায় তিনি বলেনÑ ‘সাউল ভালোই উন্নতি করছে যেটা আমাদের জন্য বিশাল কিছু।’ আগামী মঙ্গলবার দ্বিতীয় লেগের লড়াইটা কঠিন হবে জেনে এই আর্জেন্টাইন চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে বলেনÑ ‘এটা উন্মুক্ত লড়াই। মিউনিখে খেলা মানে তারা তাদের সমর্থকদের সাথে পাবে। আর পাবে ঘরের মাঠের সুবিধা। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে একটি গোল পাওয়ার সুযোগ আছে আমাদের। আজকের মত প্রতিদ্ব›িদ্বতাময় ম্যাচ হবে। আমরাও দেখব সুযোগগুলো কারা কাজে লাগাতে পারে।’
এবারের আসরে বায়ার্নের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেছেন টমাস মুলার। অথচ সেই মুলারকে এদিন বেঞ্চেই বসিয়ে রাখলেন পেপ গার্দিওলা। কাজটি যে তিনি খুব একটা ভালো করেননি তা ম্যাচর ফল দেখলেই বোঝা যায়। এদিন নিজেদের দুর্বলতা তুলে ধরে ৪৫ বছর বয়সী বলেনÑ ‘যদিও আমরা বাজে ভাবে শুরু করেছিলাম তা সত্তে¡ও সব মিলে ম্যাচটা ভালোই ছিল। গোলটি ছিল আমাদের ধীর খেলার খেসারত।’ একই সাথে প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করতে না পারার আক্ষেপ জানিয়ে সাবেক বার্সা গুরু বলেনÑ ‘দ্বিতীয় পর্বে আমাদের খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে খেলতে হবে। ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে নিতে আমাদের মাত্র একটি গোল লাগবে।’ এছাড়া সাউলের প্রসংসায় তিনি বলেনÑ ‘তাদের গোলটি ছিল অসাধারন। আমি তাকে (সাউল) আগেও দেখেছি এবং সে দারুন এক খেলোয়াড়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন