রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইন্দোনেশীয় বিমান বিধ্বস্ত

১৮৯ যাত্রীর প্রাণহানির আশঙ্কা : সাগর থেকে ৬টি লাশ, যাত্রীদের পরিচয়পত্র ও মালামাল উদ্ধার জাকার্তা বিমানবন্দরে স্বজনহারাদের কান্না

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ইন্দোনেশিয়ায় গতকাল সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৮৯ জন নিহত হয়েছেন। জাকার্তা থেকে লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ যাত্রীবাহী বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই সুমাত্রা দ্বীপের কাছে সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়। এতে দু’জন পাইলট, পাঁচজন কেবিন ক্রু ও তিন শিশুসহ ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন যাদের কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা সিএনএন। তবে বিমানটির মূল কাঠামো এখনো পাওয়া যায়নি। ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। ভব্য সুনেজা নামের একজন ভারতীয় পাইলট বিমানটি চালাচ্ছিলেন। তার ৬ হাজারের বেশি ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। অপরদিকে কো-পাইলট ছিলেন হারভিনো। তার অভিজ্ঞতা ৫ হাজার ঘন্টার বেশি।

ফ্লাইট জেটি-৬১০ গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা থেকে পাংকল পিনংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর বিমানটির গন্তব্যে অবতরণের কথা ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির প্রধান মোহাম্মদ সিয়াউগি জানিয়েছেন, যেখানে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, বিমানপথের ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসের সঙ্গে এর কাছাকাছি জায়গায় বিধ্বস্ত বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত বিমানের আরোহীদের লাগেজ, পরিচয়পত্র ও অন্যান্য সামগ্রী গভীর সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সিয়াউগি বলেছেন, ‘আমরা জানি না, আসলে কেউ বেঁচে আছেন কি না। আমরা আশা করছি, দোয়া করছি, তবে আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।’
উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্রে অবস্থিত জ্বালানি পরিশোধন কেন্দ্রের স্থাপনার মধ্যে বিমানের ভাঙা আসনসহ কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা পেত্রামিনা। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো গতকাল সকালে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের।
উদ্ধারকারী দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে অঞ্চলে বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তার কাছাকাছি জায়গাতেই ধ্বংসস্তূপ ভাসতে দেখা গেছে। কোনও যাত্রীর বেঁচে থাকার আশা প্রায় নেই বলেই ধরে নিচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। বিমানযাত্রীদের খোঁজে তল্লাশির পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের জন্য বিমানটির ব্ল্যাকবক্সটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লায়ন এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সিরাত। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই এ বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। বিমানটির সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
তবে তিনি জানান, রাতে বিমানটি দেনপাসার (বালি) থেকে সেংকারেং (জাকার্তা) এসেছিল। সেসময় এতে যান্ত্রিক ত্রু টি ধরা পড়ে যা ঠিক করা হয়। তবে কী ধরনের যান্ত্রিক ত্রু টি তা স্পষ্ট করে বলতে রাজি হননি তিনি। অন্যদিকে বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ বিক্রীত ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এটিই প্রথম। গত বছর এই জ্বালানিসঞ্চয়ী মডেলটি বাজারে আনে বোয়িং। দেশটির জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিশনের প্রধান সোয়েরজান্ত জাহজ্যানো বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ঘণ্টা উড়েছে বিমানটি।
এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, উড্ডয়নের কিছু সময় পর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন বিমানের পাইলট। বিমান বিশ্লেষক গ্যারি সোয়েজ্যাতম্যান বলেন, সাধারণত খুব পুরনো বিমানগুলোর দুর্ঘটনার উচ্চঝুঁকি থাকে। তবে একেবারে নতুন বিমানেও একই ঝুঁকি থাকতে পারে। তিনি বলেন, বিমান যদি নতুন হয় তাহলে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে, তবে সেগুলো চলাচল শুরুর পর ধরা পড়ে। এগুলো সাধারণত চলাচল শুরুর তিন মাসের মধ্যে দেখা যায়। মাত্র কয়েকদিন আগে তিনমাস পূর্ণ করেছে লায়ন এয়ারের বিধ্বস্ত বিমানটি। তিনি বলেন, কারিগরি ক্রুটির কারণেও বিমানটি বিধ্বস্ত হতে পারে। তবে এখনই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। আমরা এ ব্যাপারে আরো তথ্য পেলে তবেই (বিমান বিধ্বস্তের কারণ নিয়ে) নিশ্চিত হতে পারবো।
বিমান বিধ্বস্তের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিমান বিধ্বস্তের কারণও পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। তবে যান্ত্রিক ও মানবিক কিছু সমস্যার কারণে মাঝে মাঝেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই বিমানটি একেবারে নতুন হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটির কোনো একটি অংশ কাজ করেনি। ২০১৭ সাল থেকে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়।
ওদিকে বিমানটি বিধ্বস্তের খবর পেয়ে যাত্রীদের স্বজনরা জাকার্তা বিমানবন্দরে গিয়ে ভিড় করেন। প্রিয়জন হারানোর শোকে তাদের আহাজারি ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, ইউএসএ টুডে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন