সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার গ্লানি

ইমরান মাহমুদ, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে রাজ্যের ভিড়। চত্বরে প্রবেশপথ জুড়েই দেখা মিললো নানা মুখের উচ্ছ¡সিত ছবি। অনেককেই বলতে শোনা গেল, ‘রেকর্ড গড়েই জিতবে বাংলাদেশ।’ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্টডিয়ামের অভিষেক টেস্টে এমন জয়ের সাক্ষি হতে এদিনই যে দর্শক হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। আশার সলতেটা যে আগের দিন ঠিকই জ্বালিয়েছিলেন দুই ওপেনার ইমরুল-লিটন। এক দমকা হাওয়া নিমিষেই উবে গেল তা। স্বপ্নের বাহনে শুরু হওয়া দিন আরিফুল হকের ক্যাচের সঙ্গে ডুবে গেল হতাশার তিমিরে, স্টেডিয়ামের ঘড়িতে তখন সময় কেবল দুপুর পৌনে দুইটা!

সিলেটের টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশ খেলতে পারল না চার দিনও। পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ের কাছে। রানের ব্যবধানে হার ১৫১ রানের। তবে লড়াইয়ের মানসিকতায় হারের ব্যবধান আরও অনেক বেশি। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগের পথচলায় এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিব্রতকর পরাজয়গুলোর একটি। শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩২১, শেষ দুই দিনে ২৯৫। বাংলাদেশ করতে পেরেছে কেবল ১৬৯। টেস্টে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার বিষাদযাত্রা দীর্ঘায়িত হলো টানা অষ্টম ইনিংসে। আর জিম্বাবুয়ের জন্য এই জয় বয়ে এনেছে দীর্ঘ খরার পর মুষলধারে বৃষ্টির আনন্দ। মাসের পর মাস বেতন পান না ক্রিকেটাররা, কোচিং স্টাফ বদলায় প্রতিনিয়ত। মাঠের বাইরে হাজার সমস্যায় জর্জরিত তাদের ক্রিকেট। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও অভাবনীয় জয়ে গেয়ে উঠল তারা সামর্থ্যরে জয়গান। ২০১৩ সালে পাকিস্তানকে হারানোর পর টেস্টে পেল প্রথম জয়ের স্বাদ। দেশের বাইরে এটি মাত্র তৃতীয় টেস্ট জয়, ২০০১ সালের পর প্রথম। সেবারও তারা জিতেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই, চট্টগ্রামে।

উইকেটে ছিল না আহামরি টার্ন, ছিল না আচমকা বাউন্স। চতুর্থ দিনেও ব্যাট করার জন্য বেশ সহজ উইকেটেও কার আগে কে আউট হবেন এই প্রতিযোগিতা চালিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। জেতার কথা দূরে থাক নূন্যতম লড়াইও আসেনি কারো ব্যাট থেকে। সিলেটের মেঘলা দুপুর বাংলাদেশের বেহাল দশায় হয়েছে আরও নিকষ কালো।

শুরু থেকেই স্পিনাররা রাজত্ব করছে সিলেটের আনকোড়া উইকেটে। জিম্বাবুয়ে দলের যেকম স্পিনার, সেরকম বল নিত্যদিনর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে বেড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করে জিম্বাবুয়ে। লাঞ্চ থেকে ফিরেই সেটি ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে।

শুরুটা হয় ক্রিজে জমে যাওয়া লিটনকে দিয়ে। সিকান্দার রাজাকে বেশ ভালো ভাবেই সামলাচ্ছিলেন এই ওপেনার। সেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকেই কিনা এই অফ স্পিনারের একটি বলের লেংথ না বুঝেই স্টাম্পের সাদামাটা বল পুল করতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবি। ম্যাচপরবর্তি সংবাদসম্মেলনে অতিরিক্ত ‘আবেগের’ কথা বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। যার উত্তম নিদর্শন হয়ে থাকবে মুমিনুলের আউটটি। প্রথম বলেই সিকান্দার রাজাকে চার মেরেছিলেন বাংরাদেশের এই টেস্ট ভরসা। পরে চার মেরেছেন মাথার ওপর দিয়ে। তবে জার্ভিসের একটি ভালো বল ছেড়ে না দিয়ে বড় রানের আশায় মিসফায়ার। লেংথ থেকে একটু বাড়তি লাফানো বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পজিশনে না গিয়েই ব্যাট পেতে দিলেন মুমিনুল। কানাল লেগে বল এল স্টাম্পে, বোল্ড।

সুইপ করবেন না ডিফেন্ড করবেন এ নিয়ে দ্বিধায় মাহমুদউল্লাহ খেলেন অদ্ভুত শট। বলে ছোঁয়াতে পারেননি ব্যাট। গ্লাভসে ছুঁয়ে শরীরে লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট লেগে বদলি ফিল্ডার ক্রেইগ আরভিনের কাছে। এত লেগ স্পিনারকে আগের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি মুশফিক। পরের ওভারে ব্যাটে -বলে করতে পারলেন কিন্তু খেলতে পারলেন না ঠিক মতো। ব্যাটের কানায় লেগে ডিপ স্কয়ার লেগে যায় ক্যাচ। ঝাঁপিয়ে দুই হাতে ক্যাচ মুঠোয় নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।

তরুণদের কথা বাদ দিলেও নতুন করে ‘উল্টো রথে যাত্রার’ ছবিই যেন ভেসে উঠলো এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে। এই লজ্জা, এই গ্লানিতে স্মান হলো সিলেটের রাঙানো অভিষেক।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন