প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য মিয়ানমারের ছাড়পত্র দেয়া ৫ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গকে বাছাই করা হয়েছে। বাছাইকৃত পরিবারের সদস্যদের তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্তকরণের কাজও শেষ। এখন শুধু বাকি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সম্ম্প্রতি দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। আগামী ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি দল মিয়ানমারে প্রবেশ করতে পারে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে টেকনাফের কেরুনতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ২টি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে।
জানা যায়, এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌঁছে স্মারকটিতে সাক্ষর করেছিল। সেই স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ামারের কাছে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা প্রেরণ করে। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়। সেই ছাড়পত্রের মধ্য থেকে ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের সদস্য মো. আবুল কালাম বলেন, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে পারে। আমরা সেভাবেই প্রস্ততি নিচ্ছি। প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে যেহেতু মিয়ানমার সম্পৃক্ত তাই সময় নির্দিষ্ট করার বিষয়টি উভয় দেশের সম্মতির উপর নির্ভর করবে। প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এবং টেকনাফ উপজেলার কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের স্বদেশে স্বাগত জানাবেন।
টেকনাফে ৫ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের খাদ্য বর্জন
৫ দফা দাবিতে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য (রেশন) বর্জনসহ ধর্মঘট পালন করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল থেকে ক্যাম্পের দোকানপাট, স্কুল বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওতে কমর্রত রোহিঙ্গারা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
গত ১ নভেম্বর হতে এখানকার রোহিঙ্গারা রেশন গ্রহণ করেননি। নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের চেয়ারম্যান আব্দুল নবী জানান, গত ১ নভেম্বর হতে ক্যাম্পের কোন রোহিঙ্গা পরিবার ত্রাণ সামগ্রী উত্তোলন করেননি। এছাড়া যারা চাকরিতে রয়েছেন তারা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করেছেন।
আরেক রোহিঙ্গা নেতা জানান, রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মাঝে শরণার্থী আইডি কার্ড ও ত্রাণের জন্য ফুডকার্ড চালু রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) ফুড কার্ড পরিবর্তন করে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মতো এসিস্ট্যান্স কার্ড চালু করেছে। যা রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গাদের জন্য অপমানজনক বলে মনে করছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। এব্যাপারে নয়াপাড়া ক্যাম্প ইনচার্জ আরিফুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলেও ঢাকায় রয়েছেন বলে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
তবে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, নিবন্ধিত রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে। এরা বিভিন্ন কৌশলে একই পরিবার একাধিক ফুট কার্ড বানিয়েছে। অবৈধ সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোহিঙ্গারা আপত্তি তুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ এসব অপকর্ম করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন