স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন তো নয়, যেন জাতীয় নির্বাচন। অনেকটা সেরকম আবহই ছিলো গতকাল হোটেল রেডিসন বøু ওয়াটার গার্ডেনে। প্রকাশ্যে না হলেও টাকার ছড়াছড়ি, গোপনে পেশীশক্তি প্রদর্শনী, হেভীওয়েট রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপক উপস্থিতিসহ অনুমতি না থাকলেও জোরপূর্বক নির্বাচন ভেন্যুতে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের দেখা গেছে। গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে বাফুফের বহুল কাঙ্খিত নির্বাচন। এর আগে সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই কাল সকাল থেকে পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসনে নামে হাজারো মানুষের ঢল। বাফুফের ব্যবস্থাপনায় জেলা ও বিভাগ থেকে আগত কাউন্সিলররা নির্বাচনের আগের দিনই এ হোটেলে অবস্থান নেন। এই প্রথম কোনো পাঁচ তারকা হোটেলে নির্বাচনের আয়োজন করে বাফুফে। শুধু প্রার্থী, ভোটার, সমর্থকরাই নন, মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পরার মতো। যে কোনো ক্রীড়া নির্বাচনে যা আগে দেখা যায়নি। সবারই মন্তব্য নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও কিছুটা কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছেন কিছু প্রার্থীর পক্ষে উপস্থিত হওয়া সমর্থকরা। হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীদের শত বাধা সত্বেও রাজনৈতিক নেতা-বড় ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে জোর করে নির্বাচন ভেন্যু হোটেল রেডিসনে প্রবেশ করেছেন তারা। আবার রাজনৈতিক নেতারাও তাদের লোক পরিচয়ে একের পর এক লোককে হোটেলে প্রবেশ করিয়েছেন। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও এসেছেন। আর এমন অনাহুত অতিথিদের কারণে হেনস্তা হতে হয়েছে মিডিয়াকর্মীদের। সংবাদকর্মীদের জন্য নির্বাচন কাভার পাস থাকলেও প্রচÐ গরমে অনেককে গেটের বাইরে ঘণ্টাব্যাপী দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে। অনেক সংবাদকর্মী হোটেলে প্রবেশ করতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে শেষ পর্যন্ত চলেও গেছেন। বাফুফের কোনো কর্মকর্তা হোটেলের প্রধান ফটকে না থাকায় মূলত সাংবাদিকদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
নির্বাচনে ক্ষণে ক্ষণেই গুজব-গুঞ্জনের ডাল পালা ছড়িয়েছে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হতেই অনেককে বলতে শোনা গেছে সালাউদ্দিনের উইকেট পড়ে গেছে। সভাপতি হচ্ছেন পোটন! আবার অনেকে এমনও বলছেন, সালাউদ্দিনের প্যানেলে কারোই জেতার সম্ভাবনা নেই। সালাউদ্দিনের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে পোটনের। আবার এর উল্টোটাও শোনা গেছে। সভাপতি থাকছেন সালাউদ্দিন, তবে সহ-সভাপতি পদে ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের নেতারা নির্বাচিত হচ্ছেন। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের নেতা চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনই নির্বাচনের প্রধান গেম প্লানার হিসেবে কাজ করছেন- সারাদিন এমন গুজবই ডাল-পালা মেলেছে। নির্বাচনের আগে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বাফুফের নির্বাচনে পাপনের প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে এমনটাও আলোচনায় ছিল। নির্বাচনের দিন পাপন থাকতে পারেন এমনটাও শোন গিয়েছিল। কিন্তু আদতে তা হয়নি। তবে রেডিসনে পাপন না আসলেও বিসিবির পরিচালক মাহবুব আনাম, শেখ সোহেল, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, কাজী ইনাম উপস্থিত ছিলেন।
টাকা দিয়ে ভোটারদের নিজ প্যানেলের পক্ষে টানা কিংবা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর বেশ ক’জনকে বসিয়ে দেয়ার ঘটনা ছিল এবারের বাফুফে নির্বাচরে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী যিনি লড়াইয়ে ছিলেন না তিনি জানান, নির্বাচন সুষ্ঠ ও স্বচ্ছভাবেই হচ্ছে। কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় হলেও বলতে দ্বিধা নেই এখানে টাকার ছড়াছড়ি ছিল। সালাউদ্দিনের প্যানেল এবং কামরুল আশরাফ খান পোটনের ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেল টাকার বস্তা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে। তবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যে ভোট কেনার যে কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন