শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আপত্তির মুখে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশ ছিলো হেটেল রেডিসান বøু ওয়াটার গার্ডেনে। বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শেষে অনুষ্ঠিত হয় ভোটগ্রহণ। ১৩৪ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে আগামী চারবছরের জন্য বাফুফে’র কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন করেন। সভাপতি পদে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন কাজী মো: সালাউদ্দিন। তিনি ৮৩ ভোট পেলে তার বিপরীতে ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপি পান ৫০ ভোট। ফলে তৃতীয় মেয়াদের জন্য বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন কাজী সালাউদ্দিন। ভোটের আগে অনুষ্ঠিত হয় বাফুফে’র বার্ষিক সাধারণ সভা। কাল সকাল ১১টায় এজিএম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আধা ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। যেখানে প্রতিপক্ষের আপত্তির মুখে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন হয়। আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেটও অনুমোদন হয় এজিএমে। এজিএমের পরে বহুল কাক্সিক্ষত বাফুফে’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দুপুর ২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
নির্বাচনে সালাউদ্দিনের বিরোধী পক্ষের দাবী, গত ১২ মার্চ চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনেকটা জারুরীভাবেই ইজিএমের আয়োজন করেছিল বাফুফে। সেখানে অনৈতিক ও অবৈধভাবে অডিট রিপোর্ট পাস করিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। তবে কাল বেশ কিছু বিষয়ে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে এজিএমে আপত্তির মুখে অনুমোদন হয় বাফুফে’র ২০১৫ সালের বাজেট। যেখানে আয় দেখানো হয়েছে ৩০ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার পাঁচশ’ ৫৭ টাকা। ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার সাতশ’ ৮১ টাকা। আয়ের মধ্যে ফিফা থেকে সাড়ে ছয় কোটি, এএফসি থেকে পৌঁনে তিন কোটি, স্পন্সর বাবদ সাড়ে ১৮ কোটি। তবে বাকি রয়েছে রেফারিদের ৩১ লাখ, ২০১১ সালের বিপিএলের প্রাইজমানি বকেয়া ১১ লাখ, ২০০৯ সালে বিপিএলের অংশগ্রহণ মানি ৯ লাখ, ২০১৩ সালের সুপার কাপের ৪৫ লাখ টাকা। তার মানে আয়ের চেয়ে ব্যয়ই হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২৪ টাকা বেশি।
এছাড়া ২০১৬ সালের সম্ভাব্য বাজেট পেশ করা হয় এজিএমে। অথচ ২০১২, ’১৩ ও ’১৪ সালের বাজেট পেশ ও অনুমোদন না করেই বর্তমান বছরের বাজেট পেশ করায় সমালোচনার মুখে পড়েন কাজী সালাউদ্দিনের কমিটি। বর্তমান বছরের বাজেট বিবরণীতে স্পন্সরশিপ, গ্রাউন্ড বোর্ড, ফিফা-ফ্যাপ, এএফসি (ফ্যাপ), টিভি রাইট, জেএফএ সাবসিডি, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সাবসিডি খাত থেকে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয়ের আশা করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, জেলা ফুটবল, জাতীয় দলগুলোর কোচের বেতন, জাতীয় দলগুলোর প্রশিক্ষণের ব্যয়, বিশ^কাপ বাছাইপর্ব, রেফারি প্রশিক্ষণ, বাফুফে ফুটবল একাডেমি, স্কুল ফুটবল, পাইওনিয়ার গাড়ি, জেনারেটর ও মেরামত খরচ-রক্ষণাবেক্ষণ, বেতন-বোনাস-ভাতা, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস-টেলিফোন ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল এবং দু’বারে অন্যান্য প্রশাসনিক খরচের সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এখানেও ঘাটতি থেকে যাবে ৭ কোটি টাকারও বেশি।
তবে আইএফআইসি ব্যাংকের আট কোটি টাকা ঋণ নিয়েই সবচেয়ে বেশি আপত্তি ওঠেছিল কালকের এজিএমে। বেশ হট্টগোলের পর অবশেষে এই ঋণের অর্থ সালাউদ্দিনের বিদায়ী কমিটি দিতে রাজী হয় বলে সূত্রে জানা যায়। এছাড়া গেল পাঁচ বছরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও অংশগ্রহণ মানিও বকেয়া রয়েছে। এ নিয়েও চরম হইচইয়ের মুখে অবশেষে এই বকেয়া অর্থও দিতে রাজী হয়েছে বিদায়ী কমিটি। পরে প্রতিপক্ষের কিছু প্রতিবাদের পরও বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন হয়।
এজিএম শেষে বাঁচাও ফুটবল পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপি বলেন, ‘অডিট রিপোর্ট নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। কারণ, জামানত ছাড়া তো ঋণ দেয়া না ব্যাংক। জামানত হিসেবে যদি তারা বাফুফেকে ঋণ দিয়ে থাকে, এই টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তো বাফুফে নিলামে উঠবে! এই নিশ্চয়তা কে দেবে? ওনাদের কাছে আইএফআইসি ব্যাংক যে ৮ কোটি টাকা পাবে, সেটা ওনারা ব্যাংক থেকে কিভাবে নিয়েছে? একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যতটুকু জানি, ব্যাংক তো কোন জামানত ছাড়া ঋণ দেয়া হয় না। এখন ওনারা ফুটবল ফেডারেশনের কি জামানত দিয়েছেন আমার জানা নেই। ফেডারেশনের ভবন ছাড়া তো আর কিছু জামানত দেয়ার মতো নেই। যদি তারা ফেডারেশনের ভবন জামানত হিসেবে দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা পরিশোধ করতে না পারলে ভবন নিলামে উঠবে। এটা আমার বোধগম্য নয়, তারা এটা কিভাবে করলো। আর এই টাকা পরিশোধের নিশ্চয়তা কে দেবে? এ টাকা তো প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে।’ আট কোটি টাকা ব্যাংক লোনের ব্যাপারে বাফুফে’র নবনির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুশের্দী বলেন, ‘আট কোটি টাকা ফুটবল ফেডারেশনের লোন না। এটা আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের সময় বেক্সিমকো নিয়েছিলো। সেখানে গ্যান্টার হিসেবে ফুটবল ফেডারেশনকে দেখানো হয়েছে। এই লোন বেক্সিমকোই পরিশোধ করবে।’ এজিএম নিয়ে বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কথা, ‘এজিএম খুব ভালো হয়েছে। এজিএমে দশটা-বারোটা প্রশ্ন উনারাই করেছেন। উনাদেরকে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। উনারাই উত্তর পেয়ে গেছেন। এজিএম তো একদম ঠাÐাভাবে শেষ হয়েছে। এতো সুন্দর নরমাল এজিএম আমি আগে কখনো দেখিনি।’ ঢাকা বিভাগের কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল বাফুফে’র ফিন্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুললে ওই কমিটির চেয়ারম্যান ও বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ক্লাবগুলোর পাওনা টাকা আমরা আজকে (গতকাল) দুপুরের মধ্যেই পরিশোধ করে দিবো।’ তিনি যোগ করেন, ‘ঢাকায় ২৯টি ক্লাব রয়েছে। এর মধ্যে পাওনার ব্যাপারে অভিযোগ করেছে একটি ক্লাব (দিলকুশা)। তারপরও যদি অন্য ক্লাবগুলোরও যদি পাওনা থাকে, সেটাও আমরা পরিশোধ করে দিবো।’ বাফুফে’র দীর্ঘ আট বছর ধরে অডিটর হিসেবে কাজ করেছে শাহ অ্যান্ড কোং। কিন্তু এবার তাদেরকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে শরীয়তপুরের কাউন্সিলের আপত্তির মুখে। ফলে বাফুফে’র নতুন অডিট কোম্পানী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে আসলাম এন্ড কোংয়ের। এজিএম শেষে পাবনার কাউন্সিলর অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, ‘যারা প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচন করছেন এবং যারা পাস করবেন, তারা যদি ৭০ ভাগ বাস্তবায়ন করেন তাহলে দেশের ফুটবলে উন্নয়ন ঘটবে। যারা জিতেছেন এবং হেরে গেছেন তাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের সবাইকে তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের নার্সিং করো যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশের ফুটবলের উন্নয়ন ঘটবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন