বেশ শক্ত অবস্থানে থেকেই ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিন পার করল বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচাতে স্পিনবান্ধব উইকেটে শেষ দিনে মাহমুদইল্লাহর দলের চায় আট উইকেট। আর জিততে হলে জিম্বাবুয়েকে পাড়ি দিতে হবে এখনো ৩৬৭ রানের বন্ধুর পথ।
চাইলে প্রথম ইনিংসে আগের দিন অল আউট হওয়া জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে ফেলে আবারো ব্যাট করাতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা না করে একটু সাবধান পথে হেটেছেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ ইনিংসের ভগ্ন উইকেটে ব্যাট করতে না চাওয়াই ছিল এর কারণ। কিন্তু টাইগার বাহিনীর সেই পরিকল্পনা সাত সকালে হোঁচট খায় ২৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে। প্রথম ইনিংসের অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমও যখন ওই চারজনের তালিকায় যুক্ত হলেন টাইগার ভক্তদের ভাবনাকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। সিলেটের দুই ইনিংসের দুঃসহ স্মৃতি তখন উঁকি দিচ্ছে। এ যাত্রায় দশ্চিন্তার সেই কালো মেঘ দুর করলেন দলপতি নিজে। দিন শেষে বাংলাদেশ যে জিম্বাবুয়েকে ৪৪৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিতে পারল তা তো মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত শতকের কল্যাণেই।
হ্যাঁ, সাড়ে আট বছরেরও বেশি সময় পর টেস্টে তিন অঙ্কের দেখা পেলেন তিনি, ঘরের মাঠে প্রথম। অবশ্য শুনতে অবাক মনে হলেও ৪১ টেস্ট ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহর এটি দ্বিতীয় শতক। ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহীকতার কারণে টেস্টে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েও আলোচনায় আসেননি মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু সাকিবের অনুপস্তিতিতে সিরিজে অধিনায়কের দায়ীত্বে আসায় দলীয় ব্যর্থতার সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে মাহমুদউল্লাহর সাম্প্রতিক ফর্মের বিষয়টিও। সিলেট টেস্টে বাকিদের মত হাসেনি তার ব্যাট। মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ভালো শুরু করেও সেই বাজে শটে বিলিয়ে আসেন উইকেট। এবার তাই নিজেকে প্রমাণ করতেই হত বাংলাদেশের আস্থার আরেক প্রতীককে। সেটাই করলেন মাহমুদউল্লাহ। এসময় তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিথুন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। পঞ্চম উইকেটে মিথুনকে নিয়ে গড়েন ১১৮ রানের জুটি। মিথুনের পর আরিফুলও দ্রুত বিদায় নেয়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে মিরাজকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের জুটিতে নেতৃত্ব দেন মাহমুদউল্লহ। সেঞ্চুরিটা হয়ে গেলে ইনিংস ঘোষণা আসত চা বিরতির আগেই। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর নামের পাশে তখন ৯৯। ফিরে এসে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই তাই জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান তিনি। ততক্ষণে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেটে ২৫ থেকে ৬ উইকেটে ২২৪।
দিনের প্রথম ভাগের মত শেষ ভাগটাও বাংলাদেশের জন্য হতে যাচ্ছিল হতাশার। ২২ ওভার হাত ঘুরিয়েও যে প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে টলাগো যায়নি। অবশ্য এর দায় ফিল্ডারদেরও কম নয়। দ্বিতীয় ওভারেই স্লিপে দাঁড়িয়ে তাইজুলের বলে চেরির ক্যাচ নিতে পারেননি মিরাজ। নবম ওভারে খালেদের বলে স্লিপে ক্যাচ মিস করা ফিল্ডারটিও দুর্বাগ্যক্রমে মিরাজ। বেচারি খালেদ অভিষেক টেস্টে এখনো যে উইকেটের দেখা পেলেন না তার দায় অনেকটাই ফিল্ডারদের এই পিচ্ছিল হাত। নইলে তার নামের পাশে থাকতে পারত তিন উইকেট। সব মিলে চলতি টেস্টে ছয়-ছয়টি খ্যাচ মিস করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তবুও ভাগ্য ভালো শেষ বিকেলে দুই রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে ফেরানো গেছে। বিনা উইকেটে ৬৮ থেকে ২ উইকেটে ৭৬ রান তুলে দিন শেষ করে জিম্বাবুয়ে।
দিনের শুরুতে ১০ রানে তিনটি ও ২৫ রানে চার উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় সেশনের শেষভাগে এসে দ্রুত রান তোলার দিকে মন দেন মাহমুদউল্লাহ-মিথুন জুটি। দারুণ খেলতে থাকা মিথুন রাজাকে বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট হন বল আকাশে তুলে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূণ্য রানে আউট হলেও এবার খেলেছেন পরিস্থিতির বিচারে ১১০ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছয়ে ৬৭ রানের ইনিংস। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ মাঠ ছেড়েছেন তিন অঙ্ক স্পর্শ করেই। ৭০ বলে ফিফটি পূর্ণ করা অধিনায়ক শতক স্পর্শ করেন ১২২ বলে। তার মানে পরের ফিফটি এসেছে ৫২ বলে। সব মিলে তার অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসটি সাজানো চারটি চার ও দুই ছক্কায়। চা বিরতির পর তার শতকের জন্যেই ছিল ইনিংস ঘোষণার অপেক্ষা। ৩৪ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন প্রথম ইনিংসেও ৬৮ রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ।
দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের মান বাঁচিয়েছে মিডিলঅর্ডর। টপঅর্ডার দুশ্চিন্তার পাশাপাশি ফিল্ডিং নিয়েও যে স্টিভ রোডসকে বাড়তি কাজ করতে হবে তা এখন স্পষ্ট। বিশেষ করে ক্যাচ ধরা নিয়ে। পাশাপাশি বাংলাদেশী পেসাররা যা করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন সেখানে ভিন্ন চিত্র জিম্বাবুয়ে শিবিরে। মুস্তাফিজ-খালেদরা এ নিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। ক্যাচ মিসের মহড়া তো ছিলই। এদিকে ইমরুল-মুমিনুল-মুশফিকরা আউট হয়েছেন না বলে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বলাই শ্রেয়। জার্ভিসের ওয়াইড শর্ট বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে কাল ব্যকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাস দেন ইমরুল। পরের ওভারে তিরিপানোর বলে ওভাবে খোঁচা না মারলেও পারতেন প্রথম ইনিংসে দেড়শ পেরুনো মুমিনুল। খানিক বাদে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মাভুতাকে ক্যাচ প্রাকটিস করান মুশফিক। যে ভুল করেননি মাসাকাদজা-চেরি-টেলররা।
আপাতত এ নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। তবে ফিল্ডিংয়ের বিষয়ে নিশ্চয় শিষ্যদের নিয়ে রাতেই একটা ক্যাম্প করেছেন রোডস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন