ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরের সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী গ্রুপ হিজবুল মুজাহিদিনের (এইচএম) একটি বিবৃতি শনিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক গণমাধ্যমে ঘুরে ফিরে প্রচার হতে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। উপত্যকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখা হচ্ছে।
বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা হয়েছে, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এইচএম কমান্ড কাউন্সিল ২১ নভেম্বর শ্রীনগরে বৈঠক করবে। এর আগে ২০০০ সালে শেষবার শ্রীনগরে এ ধরনের বৈঠক করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। তবে, উপত্যকার, বিদ্রোহী গ্রুপটির ওভারগ্রাউন্ড ওয়ারর্কার (ওজিডব্লিউ), সহানুভুতিশীল ও সমর্থকরা প্রায়ই বৈঠকে বসে বিভিন্ন কৌশল ও এইচএম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করে।
এইচএম-এর ফিল্ড অপারেশনাল কমান্ডার মোহাম্মদ বিন কাসেমের নামে ইস্যু করা এক চিঠিতে বলা হয়, ‘সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে জম্মু ও কাশ্মিরের হিজবুল মুজাহিদিন ২১ নভেম্বর ২০১৮, শ্রীনগরে তার কমান্ড কাউন্সিলের বৈঠক করতে যাচ্ছে। এই বছর বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন সোপিয়ানের সিনিয়ন সদস্য।’
চিঠিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বৈঠকে বাধা দান থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা ভারত ও তার মোসাহেবদের প্রতি আমাদেরকে থামানোর ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। কমান্ড কাউন্সিল বিভিন্ন ইস্যু এবং ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবে। সফলভাবে বৈঠক শেষ হওয়ার পর এর কিছু সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান যে সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারিত পত্রটি খাঁটি কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ছাড়াও দি ওয়্যার গোয়েন্দা ও কেন্দ্রিয় সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অন্তত কাগজে হলেও প্রতিবছর এ ধরনের বৈঠক হয়। কখনো শ্রীনগরে, কখনো পাকিস্তানে। কাশ্মিরের বৈঠকগুলো হয় গ্রাম এলাকায়। তবে সাধারণত বৈঠক করার আগে তারা তা প্রকাশ করে না। তিনি আরো বলেন যে, এইচএম যেহেতু প্রকাশ্যে বলছে যে তারা শ্রীনগরে বৈঠক করবে তখন বৈঠকটি হয়েও যেতে পারে। তারা ২১ নভেম্বর এর ফুটেজ প্রচার করতে পারে।
শ্রীনগরের আরেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ২১ নভেম্বর রাতে এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সেদিন ঈদে মিলাদুন নবী উযযাপিত হবে। সেই রাতে শ্রীনগরের অনেক এলাকায় রাতভর মুসল্লিদের যাতায়াত থাকবে। ফলে কিছু লোকের একত্রিত হয়ে বৈঠক করার সম্ভাবনা উঁড়িয়ে দেয়া যায় না।
এইচএম-এর এই চিঠি শ্রীনগনের সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছে। কেউ একে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন বৈঠকের কথা ঘোষণার উদ্দেশ্য নিয়ে।
১৯৮৯ সালে এই রাজ্যে গণঅভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর কাশ্মিরের প্রাণকেন্দ্রে সর্বশেষ কমান্ড কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছিলো ১৯৯০’র দশকের শেষ দিকে। কাশ্মিরে কমান্ড কাউন্সিলের মিটিং মানে এতে সংগঠনটির সিনিয়র কমান্ডার, শুরা সদস্য ও সিদ্ধান্ত প্রণেতারা উপস্থিত থাকবেন।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কাশ্মিরের পালওয়ামা জেলার নিকলোরা এলাকায় ১৮ বছর বয়সী তরুণ নাদিম মনজুর দার’কে অপহরণের পর হত্যার কয়েক দিনের মাথায় এইচএম এই বৈঠকের ঘোষণা দেয়া হলো। সত্যতা নিরূপন করা যায়নি এমন এক ভিডিও বার্তায় নাদিমকে হত্যার কথা জানান হিজবুল কমান্ডার রিয়াজ নাইকো। নাদিম সরকারের চর ছিলো বলে অভিযোগ করেন তিনি। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন