অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় কাশ্মীরে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে যাওয়া হল পরিস্থিতির ‘স্বাভাবিকতা’ তুলে ধরার জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমেরিকাকে যে বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ১৫ জন বিদেশী দূতকে জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে মন্তব্য করলেও তার সঙ্গে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের আটকে রাখা এবং ওই অঞ্চলে নেট সংযোগ বন্ধ রাখার বিষয়টি খুবই আশঙ্কাজনক।
বিভিন্ন দেশ থেকে গত সপ্তাহে যে পনেরো জন দূত কাশ্মীর গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টার। তিনি ফিরে গিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছেন ওয়াশিংটনকে। কাশ্মীরে গিয়ে বাছাই করা রাজনীতিবিদ, সমাজের কিছু স্তরের মানুষ এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্তার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন তারা। এই সফরের পরে মুখ খুলেছেন দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত মার্কিন সচিব অ্যালিস ওয়েলস-ও। তার কথায়, ‘মার্কিন দূত-সহ বিভিন্ন প্রতিনিধির জম্মু ও কাশ্মীর সফরের দিকে আমরা নজর রেখেছিলাম। সেখানে রাজনীতিবিদদের এখনও আটকে রাখা এবং নেট পরিষেবা বন্ধ রাখা নিয়ে আমরা এখনও উদ্বিগ্ন। কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি।’
এরপর সোমবার রাতে এক টুইট মার্কিন কংগ্রেস ওম্যান ডেবি ডিঙ্গেল বলেছেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হাজার হাজার মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে এবং কয়েক লাখ লোক ইন্টারনেট ও টেলিফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমি হাউস রেজুলেশন ৭৪৫ তে স্বাক্ষর করেছি যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে জানাতে পারে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়ে আমরা ভারতের পাশে দাঁড়াব না।’
প্রসঙ্গত, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য প্রমিলা জয়পাল গত বছর হাউস রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ রেজোলিউশন নং ৭৪৫ উত্থাপন করেছিলেন যেখানে, কাশ্মীরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিলে ৩৬ জন কংগ্রেস সদস্য সমর্থন করেছেন। যার মধ্যে দু’জন রিপাবলিকান এবং ৩৪ জন বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিদেশি প্রতিনিধিদের কাশ্মীর সফরের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয় যে, কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন দূতেরা? তখন কিন্তু সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
রাইসিনা সংলাপের যোগ দিতে ১৫ তারিখ নয়াদিল্লিতে আসছেন অ্যালিস ওয়েলস। থাকবেন ১৮ তারিখ পর্যন্ত। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সাউথ ব্লকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তার ঠিক পরেই দিল্লি থেকে ইসলামাবাদ যাবেন অ্যালিস। সেখানে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে বলে খবর। ফলে পাকিস্তানে যাওয়ার আগে ভারতের সঙ্গে মার্কিন বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত অবশ্য দাবি করছে, রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের একটা বড় অংশকে কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বোঝানো গিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, মার্কিন কংগ্রেসের এই ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ঘরোয়াভাবে সাউথ ব্লককে জানিয়েছেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণ যে উপত্যকাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলা এবং সামাজিক সাম্য আনা, সেটা তারা বুঝেছেন। পাশাপাশি পাকিস্তান যে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীকে শক্তিকে উস্কানি দিয়ে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস পাচারের চেষ্টা করছে সে ব্যাপারেও তারা অবহিত। নয়াদিল্লির দাবি, এ কথা তারা প্রকাশ্যে বলছেন না কারণ ডেমোক্র্যাটদের অতি বাম ও উদার অংশের কথা মাথায় রেখে। সূত্র: বিজনেস টুডে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন