ভারতের সাংসদদের কাশ্মীরে ঢুকতে না দেয়া হলেও সেখানে পৌঁছে গেলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদেরা। সৌজন্যে, নরেন্দ্র মোদি সরকার। যা নিয়ে আগে থেকেই মোদি সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার কিছু আগে শ্রীনগর বিমানবন্দরে পা রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জনের এক প্রতিনিধিদল। প্রাথমিক ভাবে, ভারতে আসা গোটা দলেরই কাশ্মীর সফরের কথা ছিল। তবে এ দিন শ্রীনগরে রওনা হওয়ার আগে বেশ কয়েক জন সাংসদ নিজেদের দেশে ফিরে গিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। এটি কোন সরকারি সফর না হলেও বিদেশি সাংসদের কাশ্মীর সফর নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। তাদের কেউ বলছেন, ‘গণতন্ত্রের অপমান’। কারও কটাক্ষ, ‘জাতীয়তাবাদের কী অদ্ভুত নমুনা’।
বিদেশি সাংসদদের সফর ছাড়াও এই দলে যে মতাদর্শের প্রতিনিধিরা রয়েছেন, তা নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। ২৮ জনের দলে প্রায় সকলেই অতি দক্ষিণপন্থী বা শরণার্থী বিরোধী বলে পরিচিত। এই দলে মাত্র তিন জন সাংসদই বামপন্থী রয়েছেন। মোদি সরকারের সমালোচনা করে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির অভিযোগ, অতি দক্ষিণপন্থী, শরণার্থী-বিরোধী, ফ্যাসিবাদী এমপি-দের কাশ্মীরে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
কাশ্মীরের মাটিতে ওই দলটি পা রাখার আগেই এ দিন সকালে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটারে লিখেছেন, ‘ভারতীয় সাংসদের বাধা দেওয়া হলেও ইউরোপের সাংসদের জম্মু ও কাশ্মীরের গাইডেড ট্যুরে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কোথাও একটা খুব বড় ভুল রয়েছে।’
রাহুলের মতো ইউরোপীয় সাংসদদের সফর নিয়ে সরব হয়েছেন শশী তারুর। দেশের সাংসদেরা উপত্যকার মাটিতে বাধা পেলেও বিদেশিদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে তার মন্তব্য, ‘এটি গণতন্ত্রের অপমান’। এ বিষয়ে চুপ থাকেননি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢ়রা। মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এ দিন টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘ইউরোপীয় সাংসদদের কাশ্মীরে সফর ও হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ভারতীয় সাংসদ ও নেতাদের বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কী অসাধারণ জাতীয়তাবাদ এটা!’
ইউরোপীয় সাংসদদের কাশ্মীর সফর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছে আম আদমি পার্টি (আপ)-ও। আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্দ্য অঙ্গ এবং এর মাটিতে আমরা আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশকে আসতে দিইনি। তা হলে ইউরোপীয় দেশের সাংসদদের সেখানে যেতে দেওয়ার কী অর্থ?’ এ নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আপ সাংসদ। তিনি বলেন, ‘সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এ নিয়ে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’
বিরোধীদের সমালোচনাকে নস্যাৎ করে এ দিনের ইউরোপীয় সাংসদের সফরকে যুক্তিযুক্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি নেতা খালিদ জাহাঙ্গির। তিনি জানিয়েছেন, এ সফরের আসল উদ্দেশ্য, কাশ্মীরের আসল ছবিটা ওই সাংসদের দেখানো। উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতও জানবেন তারা। খালিদের দাবি, মূলধারার কোনও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করতে চান না কাশ্মীরিরা। কারণ, তারা কেবল স্বজনপোষণই করেছেন। তার কথায়, ‘কাশ্মীরি হিসাবে আমার মনে হয়, সকলের কাছে কাশ্মীরের দরজা খুলে দেয়া উচিত, কী ভাবে আমরা বসবাস করছি এবং দেশের নেতারা কী দিয়েছেন আমাদের। গোটা পৃথিবী তা জানে, এতে লুকনোর কিছু নেই।’
যে সাংসদেরা এ দিন কাশ্মীর সফরে গিয়েছেন, তারা অবশ্য একে ব্যক্তিগত সফর বলে জানিয়েছেন। কাশ্মীরে পৌঁছে সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানিয়েছেন তারা। এই দলের সঙ্গে সফরকারী ওয়েলসের সাংসদ নাথান গিল বলেন, ‘বিদেশি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কাশ্মীরের সফর করা এবং সেখানে কী ঘটছে, তা নিজে প্রত্যক্ষ করারও এটা একটা অভিনব সুযোগ।’
সফরের আগে ফ্রান্সের অতি দক্ষিণপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির থিরেরি মারিয়ানি বলেন, ‘কাশ্মীরে কী পরিস্থিতি হয়েছে, তা দেখতে পাব, অন্তত আমাদের যা দেখানো হবে।’
৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকেই উপত্যকায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু করে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কারফিউ জারি করা, স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ করা থেকে শুরু করে সেখানকার সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কেন্দ্রীয় বার্তা দেয়া হলেও তা নিয়ে সন্দিহান বিরোধীরা। সেখানকার আসল ছবিটা দেখতে কাশ্মীরে যেতে চেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরির মতো বিরোধী দলনেতা। তবে তাদের শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর এই প্রথম সেখানে কোনও বিদেশি প্রতিনিধিদল গেলেন। সূত্র: এএনআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন