ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশসহ সেখানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে ভারতে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই।
ভারতে বেশ জনপ্রিয় মালালা। ২০১৪ সালে দেশটির প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে নোবেলে শান্তি পুরস্কার লাভের পর ভারতে তার অনুরাগী ও গুণগ্রাহীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সে সময় ভারত সরকারের অনেককেই মালালার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে।
কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মালালার উদ্বেগ ও সেখানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়ার বিষয়টি মোটেই ভালো চোখে নেয়নি ভারতীয়রা। রাতারাতি ভিলেনে পরিনত হয়েছেন তিনি। ভারতের বিষয়ে নাক না গলিয়ে মালালাকে আগে নিজ দেশ পাকিস্তান নিয়ে ভাবতে বলছে ভারতীয়রা। মালালার সমালোচনা করে তীক্ষè বার্তায় ক্রমাগত টুইট করে চলেছেন বহু ভারতীয় রাজনীতিবিদ। এমনকি খেলোয়াড়, তারকারা ও সাধারণ মানুষও সামিল হয়েছেন তাতে।
মালালার ‘আসল চেহারা’ প্রকাশ পেয়েছে মন্তব্য করে হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার মুখপাত্র প্রিয়াংকা চতুর্বেদী টুইট করেছেন, ‘কাশ্মীরি মেয়েদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী মালালা। আসলে এর আড়ালে মালালা পাকিস্তানের এজেন্ডাকেই সমর্থন করছেন।’
মালালাকে ব্যঙ্গ করে টুইট করেছেন বিজেপি সংসদ সদস্য ও কর্নাটকের সাবেক মন্ত্রী শোভা কারান্ডলাজে।
তিনি লিখেছেন, ‘নোবেলজয়ীকে অনুরোধ করব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলার জন্যও একটু সময় খরচ করুন। আপনার নিজের দেশে হিন্দু, শিখ নারীরা কীভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন ও তাদের কীভাবে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে সে বিষয়ে মুখ খুলুন আগে।’ এর চাইতেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার হিনা সিধু।
মালালার উদ্দেশে হিনা লেখেন, ‘যেভাবে বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনি (মালালা) চাচ্ছেন কাশ্মীরকে সেই পাকিস্তানের হাতে তুলে দিতে যে পাকিস্তানে শিক্ষার হাল এতোটাই ভালো যে, পড়াশুনা করতে গিয়ে আপনার প্রাণ যেতে বসেছিল!’ হিনা আরও লেখেন, ‘পাকিস্তান থেকে তো পালিয়েই যেতে হল আপনাকে। এখনবধি ফিরতেই পারলেন না নিজ জন্মভূমিতে। এরপরও পাকিস্তানের জন্য দরদ দেখান কেন? আর তা দেখাতে হলে পাকিস্তানে গিয়েই দেখান।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগষ্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে সেখানে স্কুলগুলোতে কার্যত অচলাবস্থা চলছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না।
সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর টুইটারে মালালা লিখেছেন, ‘দশকের পর দশক ধরে কাশ্মীর যে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কবে তার অবসান হবে আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। ৪০ দিন কাশ্মীরের শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। কিশোরীরা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।’
মালালা টুইটারে আরও লেখেন, ‘জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আমার আর্জি, কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করুন। মানুষের কথা শুনুন। কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা যাতে নিশ্চিন্তে স্কুলে যেতে পারে, সে জন্য তাদের সাহায্য করুন।’
মালালার এমন টুইটের পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি ও শিবসেনার নেতানেত্রীরা তার সমালোচনা শুরু করেন।
কর্নাটকের বিজেপির এমপি শোভা করন্দলাজের পর মালালার এমন টুইটের কটাক্ষ করেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
টুইটারে রাজনাথ লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা উচিত নয় পাকিস্তানের। পাকিস্তানে শিখ ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের কী হাল, গোটা বিশ্বের সামনে তা গোপন নেই।’
২০১৬ সালে মালালা প্রসঙ্গে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের মন্তব্যকে টেনে বলিউড অভিনেতা ও বিজেপি এমপি পরেশ রাওয়াল বলেন, ‘রবিশঙ্কর যে সঠিক ছিলেন, মালালা নিজেই সেটা প্রমাণ করে দিলেন।’
মালালা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নন বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন রবিশঙ্কর। পরেশ রাওয়ালের মন্তব্যকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে চীনে মুসলিম নির্যাতনের বিষয়টি টেনে এনেছেন বলিউডের চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
মালালা ‘সাম্প্রদায়িক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মালালা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন। চীনে যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত নির্যাতন চলছে সেটা নিয়ে তো তিনি কিছু বলছেন না! ’
শুধু তারকা বা রাজনীতিবিদরাই নন, সোশ্যাল মিডিয়াতে মালালার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বহু ভারতীয় অভিযোগ করছেন, মিথ্যা খবর ছড়িয়ে মালালা ভারতকেই আন্তর্জাতিক স্তরে অপদস্থ করতে চাইছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন