স্পোর্টস ডেস্ক : ভাগ্যিস ২০১৬ ইউরো’র বাছাইপর্বের ম্যাচে ‘পুচকে’ ফেরো আইল্যান্ডের কাছে হেরেছিল গ্রিস! নইলে এতদিন হয়তো গ্রিসেই পড়ে থাকতে হত ক্লাদিওর রেনিয়েরিকে। সেক্ষেত্রে কি আদৌ জন্ম হত লেস্টার রূপকথার? যে রূপকথার নায়কই রেনিয়েরি! কেউ কি জানত যে, লেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের ১৩২ বছরের ইতিহাসে যা ঘটেনি সেই ঘটনার নেপথ্যের নায়ক হিসেবে আসবেন গ্রিস থেকে ব্যর্থতার দ্বায়ে বরখাস্ত হওয়া একজন অখ্যত ৬৪ বছর বয়সী ‘বৃদ্ধ’! দলকে দেবেন শিরোপার স্বাদ! বছরান্তে ঠিক এই কাজটিই করলেন সেই ‘বৃদ্ধ’, অখ্যাত থেকে রূপকথার জন্ম দিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন একজন বিখ্যাত রূপকার হিসেবে। মৌসুম না ঘুরতেই দলকে বানালেন ইংল্যন্ডের সেরা, এনে দিলেন স্বপ্নের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা।
কেমন ছিল তাঁর এই বিজয়ের অনুভ‚তি? তা না-হয় তার মুখ থেকেই শোনা যাকÑ ‘আমি খুব গর্বিত। এটা দারুণ এক অনভ‚তি এবং আমি সবার জন্য খুব খুশি। আমি সব সময়ই ভেবেছি যে, কোথাও না কোথাও আমি একটি লিগ শিরোপা জিতব। আমি সেই লোক, যাকে গ্রিস বরখাস্ত করেছিল। সেখানে কেউ হয়ত আমার ক্যারিয়ারের বিষয়ে ভুলেই গিয়েছিল।’
লিগের শুরুতে লেস্টারের বাজির দর ছিল ৫০০০/১ (!), অখ্যত সেই দলই শিরোপা নিশ্চিত করল দুই ম্যাচ হাতে রেখে। শেষ দুই ম্যাচ থেকে তাদের দরকার ছিল দুই পয়েন্ট। কিন্তু হিসাবটা মিলে যায় পরশু রাতে চেলসি-টটেনহ্যাম ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হওয়ায়। শিরোপা দৌড়ে লেস্টারের চেয়ে ৮ পয়েন্ট পিছনে ছিল টটেনহাম। আগেই তাই প্রস্তুত ছিল লেস্টার ভক্ত-সমর্থকরা, ম্যাচে টটেনহাম পয়েন্ট হারলেই শিরোপা নিশ্চিত হবে তাদের প্রিয় দলের। কথা ছিল এমন ম্যাচ দেখবেন না রেনিয়েরি। কিন্তু তিনি যে না দেখে থাকতে পারেননি তা তাঁর কথাতেই স্পষ্টÑ ‘আপনার ক্ষেত্রে যখন এরকম কিছু ঘটবে, আপনি তা পুরোপুরি উপলব্ধিই করতে পারবেন না। প্রথমার্ধে টটেনহ্যাম জিতছিল। তাই আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম।’ লন্ডন ডার্বিতে চেলসির বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল টটেনহাম। হ্যারি কেইন করেন লিগের সর্বোচ্চ ২৫তম গোল। পরে ব্যবধান দ্বিগুন করেন সন হিউং মিন। দ্বিতীয়ার্ধে গ্যারি কাহিল ও এডেন হ্যাজার্ডের গোলে সমতায় ফেরে চেলসি। এসময় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি লেস্টার গুরুÑ‘কাহিল যখন গোল করল, আমি তখন ভাবলাম কিছু ঘটতে পারে। হ্যাজার্ডের সমতায় ফেরানো গোলটি উদযাপন করেছি আমি।’
গত জুলাইয়ে লেস্টারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের লক্ষ্য সম্পর্কে একটি কথাই বলতেন তিনি, তা হল লিগ থেকে অবনমন এড়ানো। সেই ক্লাবই তাদের ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জিতল লিগ শিরোপা। এজন্য তিনি পিছনে ফেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি অথবা চেলসির মত দলকে। পুরো মৌসুমে তার দলের হার মাত্র তিনটি; একটি ঘরের মাঠে, দুটি প্রতিপক্ষের মাঠে। অথচ এমন সাফল্যের কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের দিলেন রেনিয়েরিÑ‘খেলোয়াড়রা দারুণ ছিল। তাদের মনোযোগ, প্রতিজ্ঞা, মনোবল এটাকে সম্ভব করেছে। প্রত্যেক ম্যাচে তারা একে অপরের জন্য লড়াই করে। আর আমার খেলোয়াড়দের মধ্যে এটা দেখতে আমি পছন্দ করি।’ তিনি আরো যোগ করেনÑ ‘আমি বাস্তববাদী একজন মানুষ। আমি কেবল একটার পর একটা ম্যাচ জিততে চেয়েছিলাম। এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে তা নিয়ে আমি কখনোই খুব বেশি ভাবিনি।’ আর এই গুনের জন্যই তিনি আজ সাফল্যের চুড়োয়। লেস্টার ভক্তদের একটা সুসংবাদও দিয়েছেন এই ইটালিয়ানÑ ‘আমি লেস্টারেই থাকছি। এটা একটা বছর, যার পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। পরের বছর আমরা শীর্ষ দশে থাকার জন্য লড়াই করব। আমরা অবশ্যই উন্নতি করতে থাকব এবং ভালো করব।’ একই ঘটনার সাক্ষি হতে তাঁর শিষ্যরা জড়ো হয়েছিলেন জেমি ভার্ডির বাড়িতে। সেখানে বসেই চেলসি-টটেনহাম ম্যাচের পর জয়োৎসব করেছে তারা। একই সময় লেস্টারের হাজার হাজার দর্শক বেরিয়ে আসে ভার্ডির বাড়ির সামনে। এছাড়া হাজারো ভক্ত জড়ো হয় কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামের সামনে। বিয়ার-শ্যাম্পেন দিয়ে তারা বিজয়-উল্লাস পালন করে। দিনটাকে ঠিক এভাবে মূল্যায়ন করলেন লেস্টারের পূর্বাঞ্চলের সাংসদ কিথ ভেজÑ ‘লেস্টার সিটির ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় দিন। রেনিয়েরি অলৌকিক ঘটনাকে বাস্তবে রূপ দিলেন বিশ্বয়কর একটি দল নিয়ে।’
গত ৩৮ বছরে নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল ইংশিল প্রিমিয়ার লিগ। যা অন্যতম ইংলিশ ফুটবলে বিস্ময়কর এক ইতিহাস। ১৯৭৮ সালে ঠিক এমনই এক বিস্ময় উপহার দিয়েছিল নটিংহ্যাম ফরেস্ট। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে শীর্ষ লিগে ফেরার পরের বছরই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নটিংহ্যাম। লেস্টারের ইতিহাসটাও অনেকটা তেমনি। গেল মৌসুমে ঠিক এই সময়ে লিগ থেকে অবনমন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে লড়ছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত লিগের ১৪তম দল হিসেবে মৌসুম শেষ করে তারা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ৬ দল
দল ম্যাচ জয় ড্র হার গোল পার্থক্য পয়েন্ট
লেস্টার সিটি ৩৬ ২২ ১১ ৩ ৩০ ৭৭
টটেনহ্যাম ৩৬ ১৯ ১৩ ৪ ৩৯ ৭০
আর্সেনাল ৩৬ ১৯ ১০ ৭ ২৫ ৬৭
ম্যানসিটি ৩৬ ১৯ ৭ ১০ ৩০ ৬৪
ম্যানইউ ৩৫ ১৭ ৯ ৯ ১২ ৬০
ওয়েস্ট হাম ৩৫ ১৫ ১৪ ৬ ১৭ ৫৯
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন