শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

টাইব্রেকার নাটকে ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : প্রিমিয়ার লিগ রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলো চট্টগ্রাম আবাহনী। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা নাটকীয় জয় তুলে নিয়ে চমক দেখালো। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম আবাহনী প্রথমে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারায় শেখ রাসেলকে। নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিলো। ফলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য টাইব্রেকারের ব্যবস্থা করা হয়। টাইব্রেকারে চট্টগ্রাম আবাহনীর মরোক্কান তারেক আল জানাবি, নাইজেরিয়ান এলিসন উদুকা, হাইতিয়ান লিওনেল সেইন্ট প্রিয়াক্স এবং অধিনায়ক জাহিদ হোসেন গোল করেন। অন্যদিকে শেখ রাসেলের ইথিওপিয়ান ফরোয়ার্ড ফিকরু তেফেরা ও বুরুন্ডির লাহোয়া ভেলেরি গোল করলেও ব্যর্থ হন স্থানীয় ফরোয়ার্ড মিঠুন চৌধুরী ও মিডফিল্ডার শাহেদুল আলম শাহেদ।
প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের পর এবার স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলো শেখ রাসেলও। দুই জায়ান্টের বিদায়ে টুর্নামেন্টের ফাইনাল হয়ে ওঠলো অল-আবাহনীর। আগের দিন শেখ জামালকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ঢাকা আবাহনী। আর কাল রাসেলকে হারিয়ে ঢাকার পথেই হাঁটলো চট্টগ্রাম আবাহনী।
কাল ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া ছিলো দু’দল। তবে ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে শেখ রাসেল এগিয়ে থাকলেও ম্যাচের চার মিনিটেই প্রথম গোলের সুযোগ এসেছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনেই। এসময় অধিনায়ক জাহিদ হোসেন বল নিয়ে চলে এসেছিলেন রাসেলের বক্সের কাছে। কিন্তু তাকে ডিফেন্ডার ইকাঙ্গা বাধা দিতে গিয়ে ফেলে দেন। ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান রেফারি আজাদ রহমান। ফ্রি কিক থেকে তারিক আল জানাবী শট নিলে শেখ রাসেলের রক্ষণ দেয়ালে লেগে বল ফেরত আসে। ১২ মিনিটে শাখাওয়াত রনি ডানপ্রান্ত থেকে ঢুকে শট নিলেও বল সহজেই গ্রিপে নিয়ে নেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। ৩৬ মিনিটে ফ্রি কিক পেয়েছিলো অলব্লুজরা। বক্সের কাছ থেকে আতিকুর রহমান মিশু ফ্রি কিক নিলেও তা ব্যর্থ হয় আবাহনীর রক্ষণ দেয়ালে লেগে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে সাখাওয়াত হোসেন রনির শট গোলরক্ষক রানা ঝাপিয়ে পড়ে ফেরাতে যান। কিন্তু শূণ্যে থাকা বলে দর্শণীয় হেডে চট্টগ্রাম আবাহনীর জালে পাঠান ইথুপিয়ান ফরোয়ার্ড ফিকরু তেফেরা (১-০)। রাসেলের এই উল্লাস স্থায়ী হয়নি। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ম্যাচে সমতা আসে। ডানপ্রান্ত থেকে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল সেইন্ট প্রিয়াক্সের ক্রস বারে লেগে ফেরত আসলে ফিরতি বলে প্লেসিং শটে গোল করেন ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া (১-১)। এরপর আর গোল হয়নি। ফলে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা অমীমাংসিতভাবেই শেষ হয়। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। এই সময়েও কোন দল গোল করতে না পারায় টাইব্রেকারের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে ভাগ্যের লড়াইয়ে জয় হয় চট্টগ্রাম আবাহনীরই। বিদেশীরাই যে ঢাকার ক্লাবগুলোর ত্রাণকর্তা তা আবার প্রমাণিত হলো। প্রথম সেমিফাইনালে ওয়েডসন, ল্যান্ডিং আর ডার্লিংটনকে ছাপিয়ে দলকে জিতিয়ে হিরো বনেছিলেন আবাহনীর সানডে চিজোবা ও লি টাক। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শেখ রাসেলের ইথিওপিয়ান ফরোয়ার্ড ফিকরু তেফেরা। তবে এত বিদেশী ঝলকের মধ্যে চট্টগ্রাম আবাহনীর রুবেল হোসেন গোল করে নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন। তবে টাইব্রেকারের আটটি শুটআউটের মধ্যে পাঁচ বিদেশীই সফল হয়েছেন।
হাওয়ায় উড়ছে প্রাইম দোলেশ্বর
বিশেষ সংবাদদাতা : উদ্বোধনী ম্যাচে বিকেএসপিতে ৩১৪/৯ স্কোর, ভিক্টোরিয়া-রূপগঞ্জের টাই ম্যাচে সেই স্কোরটাই ছিল এতোদিন সর্বোচ্চ। চলমান আসরে সেই স্কোরকে টপকে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক। গতকাল টপ অর্ডার সাব্বির রহমান রুম্মানের সেঞ্চুরিতে (৯৭ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় ১০০) ৩১৮/৯ পর্যন্ত স্কোর টেনে নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে উপরের সারির চার ব্যাটসম্যানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ভর করে (মারুফ ৩৫, শেহনাজ ৬৬, সাব্বির ১০০ সোহান ৬৩) তিনশ’ প্লাস স্কোরে ম্লান হয়েছে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে মাহামুদুল্লাহ’র সেরা বোলিং (৫/৬৬)। ৩১, ১৬, ৫৩’র পর ১০০Ñরানের ঊর্ধ্বগতিতেই সওয়ার রুম্মান। প্রাইম ব্যাংকের রান পাহড়ে চাপা পড়ে ১১৩ রানে হেরেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। শিরোপার কক্ষপথেই আছে প্রাইম ব্যাংক। গাজী ট্যাংকের কাছে হার দিয়ে লীগ শুরু করে টানা ৩ জয়ে সুপার লীগের পথে এখন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক। অন্যদিকে টানা ২ হারে শেখ জামাল পিছিয়ে পড়ল সুপার লীগের লড়াই থেকে।
বিকেএসপিতে এদিনও হেসেছে প্রাইম দোলেশ্বর। ব্রাদার্সকে ২২৯ এ গুটিয়ে দিয়ে ১১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে হাওয়ায় উড়তে থাকা প্রাইম দোলেশ্বর। গত বছর সুপার লীগের ৫ ম্যাচের ৫টিতে জিতে অবিশ্বাস্যভাবে রানার্স আপ কেরানীগঞ্জের এই ক্লাবটি প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের চলমান আসরে টানা ৪ জয়ে এককভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে পয়েন্ট তালিকায়। ২ আসর মিলে টানা ৯ জয়ে মিজানুর রহমান বাবুল শিষ্যরা এবার শিরোপার দাবিটাও যে জোরালো করে তুলেছে। প্রথম ম্যাচে সিসিএস’র বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে (১০০) থামেননি প্রাইম দোলেশ্বর ওপেনার ইমতিয়াজ তান্না। গতকালও ব্রাদার্সের বিপক্ষে সহজ টার্গেটের ম্যাচে করেছেন সেঞ্চুরি (১২৮ বলে ৮ চার এ ১০০ নট আউট)। বড় ইনিংস খেলাই যেনো পছন্দ তার, ১০০, ৭৩’র পর ০, ১০০!  চার ইনিংসে ২৭৩ রানে সবাইকে ছাড়িয়ে রান সংগ্রহে শীর্ষে এখন তান্না।
অথচ ব্রাদার্সের ২৩০’র জবাব দিতে যেয়ে স্কোরশিটে রান ওঠার আগেই ওপেনার রনিকে হারাতে হয়েছে প্রাইম দোলেশ্বরকে। সেখান থেকে দ্বিতীয় জুটিতে ৪৭, তৃতীয় জুটিতে ৮২ এবং অবিচ্ছিন্ন ৪র্থ জুটিতে ১১১ রানে নেতৃত্বটা দিয়েছেন ম্যাচ সেরা তান্না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক-শেখ জামাল
প্রাইম ব্যাংক : ৩১৮/৯ (৫০.০ ওভারে), মেহেদী মারুফ ৩৫, শেহনাজ ৬৬, সাব্বির রহমান রুম্মান ১০০, সোহান ৬৩, শফিউল ২/৬২, মাহামুদুল্লাহ ৫/৬৬।
শেখ জামাল : ২০৫/১০ (৪৬.২ ওভারে), মাহামুদুল্লাহ ৩৭, নাজমুস সাদত ৭৬, মোক্তার আলী ৪০, রুবেল ১/৯, নাজমুল ৩/৩৬, রুম্মান ২/৩৫, রায়হান উদ্দিন ৩/৫৭।
ফল : প্রাইম ব্যাংক ১১৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাব্বির রহমান রুম্মান
(প্রাইম ব্যাংক)।
প্রাইম দোলেশ্বর-ব্রাদার্স
ব্রাদার্স : ২২৯/১০ (৫০.০ ওভারে), শাহরিয়ার নাফিস ২৩, ইমরুল ৫৭, তুষার ইমরান ৫৫, জাকির ২৯, আল আমিন ২/৫১, রবি ২/২৪।
প্রাইম দোলেশ্বর : ২৩০/৩ (৪৮.১ ওভারে), ইমতিয়াজ তান্না ১০০*, রকিবুল ৩২, চামারা সিলভা ৪৬, নাসির ৪৮*, নূর আলম ১/৪৪, তুষার ইমরান ১/১২।
ফল : প্রাইম দোলেশ্বর ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইমতিয়াজ তান্না
(প্রাইম দোলেশ্বর)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন