(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আল্-আমীন ও সত্যবাদী। চিন্তা- চেতনায় তাঁর আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ ক’রে আমাদের সাম্য ও সহাবস্থানকামী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইস্লামও অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে হ’য়ে উঠেছিলেন অত্যন্ত সৎ ও সত্যবাদী। তাঁর জীবনী তিনি অনেকখানি কাব্যে লিখে ছিলেন। গদ্যে লিখেছিলেন পুরোপুরিই। উভয় লেখায় কবি কাজী নজরুল ইস্লামের স্পর্শকাতর মনের, সংবেদনশীল মনের এবং গভীর অনুভূতির যে অনন্য সাধারণ ছাপ আছে তা পাঠক মনকে স্পর্শ করে। এছাড়া কবি কাজী নজরুল ইস্লামের অনেক কবিতায় এবং বহু গানে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথা আছে অপরিসীম গভীর শ্রদ্ধায় এবং ভালোবাসায়, অপরিসীম গভীর মমতায়। তাই তিনিই লিখেছেন :
“ তোমার বানীরে করিনি গ্রহণ, ক্ষমা করো হজরত্।
ভুলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ, তোমার দেখানো পথ।
ক্ষমা করো হজরত্
বিলাস বিভব দলিয়াছ পায়ে, ধুলিসম তুমি প্রভু,
আমরা হইব বাদশা-নওয়াব, তুমি চাহ নাই কভু।
এই ধরনীর ধন-সম্ভার সকলের এতে সম-অধিকার,
তুমি ব’লেছিলে, ধরণীতে সবে সমান পুত্র বৎ
তোমার ধর্মে অবিশ্বাসীরে তুমি ঘৃণা নাহি ক’রে
আপনি তাদের করিয়াছ সেবা ঠাঁই দিয়ে নিজ ঘরে।
ভিন-ধর্মীর পূজা-মন্দির ভাঙিতে আদেশ দাওনি, হে বীর,
আমরা আজিকে সহ্য করিতে পারিনাকো পর মত।
তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গøানিকর হানাহানি,
তলোয়ার তুমি দাওনাই হাতে দিয়াছ অমর বাণী।
মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতা সার করিয়াছি ধর্মান্ধতা,
বেহেশ্ত হ’তে করোনাকো তাই তব রহমত ”
সাম্য ও সহাবস্থানের আদর্শ, সাম্য ও সহাবস্থানের শিক্ষা যে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূল্যের কাছ থেকে এসেছে, সেই উল্লেখই আছে এই গানে।
সাম্য ও সহাবস্থানের কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইস্লামের এ গান লেখা। এত গভীর মমত্ববোধ, এত গভীর অনুভূতি এ বিষয়ে আর কারো লেখায় পাওয়া যাবে না! অপরিসীম আন্তরিকতা এবং গভীর মমত্ববোধ না থাকলে, অত্যন্ত সৎ এবং সংবেদনশীল মনের না হলে অনুভূতি এমনভাবে লেখার মধ্যে এভাবে আসেনা। হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বিষয়ে কবি কাজী নজরুল ইস্লামের সমস্ত লেখাই এভাবেই চেনা যায়! এ বিষয়ে এভাবে লেখার মতো মানুষ বাঙলা : সাহিত্যে আর কেউ কখনো আসেননি। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন