স্পোর্টস ডেস্ক : তিন বছরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইউরোপ সেরার ফাইনালে খেলবে মাদ্রিদেরই দুটি দল। তাই অল-স্প্যানিশ না বলে ‘অল-মাদ্রিদ’ ফাইনাল বলাটাই বোধ হয় বেশি মানান-সই হবে। আগের দিন বায়ার্নকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ওঠে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। পরশু তাদের সঙ্গী হল মাদ্রিদেরই আরেক দল রিয়াল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড ১৪ বারের মত ফাইনালে পা রেখেছে ইউরোপের সফলতম দলটি।
২৭ বার আসরের সেমি-ফাইনালে খেলা একটি দলের বিপক্ষে নক-আউট পর্বে অভিষিক্ত সিটি হারবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে নবীন এই দলকে আশা দেখাচ্ছিলেন গোলরক্ষক জো হার্ট। তার নৈপূণ্যেই ম্যানচেস্টারের ইতিহাদে প্রথম লেগের ম্যাচটি গোলশূণ্য ড্র হয়। দ্বিতীয় লেগেও শেষ বাঁশি বাজার পূর্ব-মূহূর্ত পর্যন্ত আকাশি-নীরদের স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছিলেন ঐ হার্ট-ই। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের শুরুতেই। এজন্য ভাগ্যকে দোষারোপ করতেই পারে সিটি। ম্যাচের দশম মিনিটেই রক্ষনের প্রধাণ সেনানী ভিনসেন্ট কোম্পানিকে হারায় তারা। বেলজিয়ান অধিনায়ক চোট নিয়ে উঠে যাওয়ার মিনিট দশেক পরে ফার্নান্দোর আত্বঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ে ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনির দল! গ্যারেথ বেলের একটি ক্রস ফেরাতে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের পায়ে লেগে দূরহ কোন দিয়ে বল জালে জড়িয়ে যায়। সিটির ইংলিশ গোলরক্ষকের এখানে কিছুই করার ছিল না।
চোট কাটিয়ে এদিন ম্যাচের শুরুর একাদশেই ছিলেন রোনালদো। গোলের দেখা না পেলেও তার উপস্থিতি যে দলকে বাড়তি প্রেরণা যোগায়, তার প্রমান ঠিকই মিলেছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোলের সুযোগও তৈরী করেছিলেন ‘সিআর-৭’। কিন্তু জো হার্টের দৃড়তায় তা সফলতার মুখ দেখিনি। এর কিছুক্ষন পর কারবাহালের পাস থেকে আবারো সুযোগ সহজ পেয়েছিলেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড, কিন্তু এবারো মিস করেন। রিয়ালের অধিকাংশ আক্রমনের উৎসমুখ ছিল গ্যারেথ বেল। তবে মাঝমাঠ দাপিয়ে ম্যাচসেরা টনি ক্রুজ।
ওদিকে সিটিকে ম্যাচে স্বাভাবীক মনে জয়নি। রক্ষণে ছিল তারা যতটা সফল, আক্রমণে ঠিক যেন ততটাই ছিল ব্যর্থ। রিয়ালের ১৫ শটের বিপরীতে (৫টি লক্ষ্যে) গোলের উদ্দেশ্যে মাত্র ৫বার শট নেয়ার সুযোগ পায় সিটি, যার মাত্র একটি ছিল লক্ষ্য বরাবর। এমনকি সিটি স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে ডি বক্সের ভেতর একবার বল ছুঁয়ে দেখারও সুযোগ দেয়নি রিয়াল। মাত্র একটি গোল (গোলস্কোরিং ড্র) করতে পারলেই এ্যাওয়ে গোলের সুযোগ নিয়ে ফাইনালে পৌঁছানোর সুযোগ পেত তারা। ম্যাচের যোগ করা সময়ে বক্সের বাইরে থেকে আগুয়েরোর নেওয়া শট ক্রসবারে বাতাস লাগিয়ে চলে যায়। ভাগ্য সুপ্রসন্য হলে এই শট দিয়েই হাসতে পারত ইংল্যান্ডের দলটি। কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ হাসি হাসে স্বাগতিকরা। নিশ্চিত হয় আরো একটি ‘অল-মাদ্রিদ’ ফাইনাল।
এজন্য অবশ্য কোন অনুশোচনা নেই সিটি কোচ পেল্লেগ্রিনির। ম্যাচের শুরুতেই দলের সেনাপতিকে হারানো ও একটি আত্বঘাতি গোলই তার দলকে ছিটকে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এরপরও এটাকে সফল মৌসুম হিসেবে আখ্যায়ীত তিনি বলেনÑ‘ এটা একটা স্পেশাল মৌসুম, কারণ প্রথম বারের মত আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠেছি।’ জয়ী দলের কোচ জিনেদিন জিদান অবশ্য আগেই বলেছিলেন ম্যাচটি সহজ হবে না। সেটাই স্বরণ করে ৪৩ বছর বয়সী বলেনÑ ‘আমরা জানতাম এটা কঠিন হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ফাইনালে পৌঁছে গেছি। ছেলেদের খেলায় আমি খুশি।’ মৌসুমের মাঝ পথে দলের দায়ীত্ব নিয়েই দলকে তুললেন ফাইনালে। এর আগে রিয়ালেরই জার্সি গায়ে ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন ‘জিজু’। এরপর জেতেন সহকারী কোচ হিসেবে। এবার তার সামনে সুযোগ কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম মৌসুমেই শিরোপা জয়ের। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয় সেটা জানিয়ে ফরাসি তারকা বলেনÑ ‘ফাইনালে দুই দলেরই সুযোগ ৫০-৫০।’
তাঁর শিষ্য রামোস অবশ্য অত কিছু ভাবছেন না। তাঁর ভাবনায় শুধুই শিরোপাÑ ‘ফাইনালটা কিভাবে জিততে হয় তা রিয়াল ভালো করেই জানে। এবারো মাঠে নেমে আমরা সেটাই করতে চাইব।’ একই সুর দিলেন রোনালদোরওÑ ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততেই আমি রিয়ালে এসেছিলাম। এরই মধ্যে একটি জিতেছি, আরেকটি তেতার সুযোগ পেয়েছি।’
এক যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০১৪ সালের ফাইনালে নগর প্রদিদ্ব›িদ্বকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ‘লা ডেসিমা’ (দশম শিরোপা) জিতেছিল রিয়াল। এবার তাদের সামনে ১১তম ট্রফি জয়ের হাতছানি। আর অ্যাটলেটিকোর অপেক্ষা ইতিহাস গড়ার। তৃতীয়বারের ফাইনালে প্রথমবার তারা ব্যর্থ হয়েছিল সেই ৪২ বছর আগে। সেদিনের স্বপ্ন হন্তারক বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েই এবার ফাইনালে উঠেছে অ্যাটলেটিকো। এবার তাদের সামনে সুযোগ নিজেদের দ্বিতীয় ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেওয়া। অ্যাটলেটিকো কি পারবে প্রতিশোধ নিতে? জানা যাবে আগামী ২৮ মে মিলানে।
এক নজরে
১৪ বারের মত ইউরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ, আসরে যা একটি রেকর্ড।
গত চার বছরে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল হয়েছে স্ব-জাতির মধ্যে।
এবারের আসরে ঘরের মাঠে ৬ ম্যাচই জিতেছে রিয়াল, গোল খায়নি একটিও।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৭টি সেমি-ফাইনালে খেলার রেকর্ড করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, জাবি আলানসোর সাথে যা যৌথ সর্বোচ্চ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ৫২২ মিনিট প্রতিপক্ষের গোল বরাবর কোন শটই নিতে পারেননি সার্জিও আগুয়েরো।
কাইলর নাভাস চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২ ম্যাচের ১১টি-তেই নিজের গোলপোষ্ট অক্ষত রেখেছেন।
ক্লাবের কোচিংয়ের দায়ীত্বে এসে প্রথম মৌসুমেই দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলেছেনÑ এমন কীর্তি ঘটল টানা তিন মৌসুম। ২০১৪ সালে ডিয়েগো সিমিওনে, পরের বার লুইস এনরিকে, এবার জিনেদিন জিদান।
এক নজরে ফল
রিয়াল মাদ্রিদ : ম্যানসিটি
০ ১ম লেগ ০
১ ২য় লেগ ০
দুই লেগ মিলে ১-০ গোলে জিতে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন