আইপিএলের আট ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ২০জন বিদেশি খেলোয়াড়ের জায়গা ফাঁকা ছিল। তাদের কাতারে নাম ওঠার ওপেক্ষায় নিলামে উঠেছিল ভারতীয়, অ-ভারতীয় মিলিয়ে ৩৫১জন ক্রিকেটারের। সেই তালিকায় দুটি নাম বাংলাদেশেরও, দুই ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তবে আজ মঙ্গলবার বিকালে জয়পুরে হওয়া খেলায়াড় নিলামে মুশফিককে নেয়নি কোনো দলই। নাম ঘোষণার পর কোনো দল বাংলাদেশের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে কিনতে আগ্রহী হননি কেউই।
ইংলিশ ওপেনার স্যাম কারেনকে কিংস ইলেভেন ৭.২ কোটি রুপিতে কেনার পর লুক রনকির নাম উঠেছিল নিলামে। তাঁকে কিনতে কোনো দল আগ্রহ দেখায়নি। এরপরই ঘোষণা হয় মুশফিকের নাম। ক্যামেরাগুলো এ সময় আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের প্রতিনিধিদের ওপর ধরা ছিল। মুশফিককে কিনতে কারও মুখে তেমন কোনো অভিব্যক্তি ছিল না।
এর আগে ২০১৬ আইপিএলের নিলামেও অংশ নিয়েছিলেন মুশফিক। সেবারও নিলামের প্রথম দিনে তাঁর নাম উঠেছিল। কিন্তু কোনো দলই বাংলাদেশের ‘মি. ডিপেন্ডেবল’কে কিনতে আগ্রহ দেখায়নি।
শুধু মাশফিক কেন, তিন বছর আগে যাকে দলে ভেড়াতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে রাজি ছিল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো সেই যুবরাজ সিংও রয়ে গেছেন অবিক্রিত! মাঠের খেলাটা এমনই। পারফরম্যান্স থাকলে দাম আছে, না থাকলে তাকিয়ে দেখারও কেউ নেই। বিষয়টি বোধ হয় এখন সবচেয়ে বেশি টের পাচ্ছেন যুবরাজ। একসময় আইপিএলে ১৬ কোটি রুপিতে বিক্রি হয়েছিলেন, তিনি দলই পেলেন না।
ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন যুবরাজ। ২০১৫ সালের আইপিএলে মাত্র ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্য থাকলেও তাঁর দাম উঠেছিল ১৬ কোটি রুপি! রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু থেকে যুবরাজকে এক ঝটকায় টেনে নিয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। সেটি ছিল আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামে খেলোয়াড় বিক্রির রেকর্ড।
২০১৪ সালেও তাঁর দাম ছিল ১৪ কোটি রুপি। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকেই নামতে থাকে যুবরাজের দাম। ১৬ কোটি থেকে কমে ৭ কোটিতে যুবরাজকে দলে নিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। পরের বছরও হায়দরাবাদেই থেকে যান। ২০১৮ সালে ২ কোটি রুপিতে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে যান। এবার কেউই নিল না তাঁকে।
তবে এক দিক থেকে নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা। প্রতিবারের মত এবারের নিলামেও ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
খেলাটির এই সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজই বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাঁদের খেলোয়াড়দের টি-টোয়েন্টি সংস্করণও টেস্ট-ওয়ানডের তুলনায় বেশি পছন্দ। নানা প্রান্তের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যায় দলগুলোর মধ্যে। আইপিএলেও শুরু থেকেই ক্যারিবিয়ানদের নিয়ে টানাটানি চলে। আজকের নিলামে যেমন তিন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের সম্মিলিত দাম উঠল প্রায় ১৬ কোটি টাকা (১৫.৯৪ কোটি)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোর নায়ক ব্রাফেটকে কিনতে টানাটানি চলেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ৫ কোটি রুপিতে ব্রাফেটকে দলে টানতে পেরেছে নাইটরা। ব্রাফেটের নেতৃত্বেই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বশেষ ম্যাচেই বোঝা গেছে, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারেরা টি-টোয়েন্টিতে কতটা ভয়ংকর।
ব্রাফেটের ভিত্তি দাম ছিল ৭৫ লাখ রুপি। দলগুলোর কাড়াকাড়িতে এখান থেকে ৫ কোটি রুপি দাম ওঠে এই অলরাউন্ডারের। বাংলাদেশ সফরে থাকা ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারের ভিত্তি মূল্য ছিল ৫০ লাখ রুপি। তাঁকে ৪.২০ কোটি রুপিতে কিনেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের ক্যারিবিয়ান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরানকে একই দামে (৪.২ কোটি রুপি) কিনেছে পাঞ্জাব। এই তিন ক্রিকেটারের সম্মিলিত দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১৩.৪ কোটি রুপি। এই নিলামে মোট ৭০ জন ক্রিকেটার কিনতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো। এর মধ্যে ২০ জন বিদেশি।
আইপিএলের শুরু থেকেই রমরমা সময় কাটছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের। ক্রিস গেইল, সুনীল নারাইন, ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, ডোয়াইন স্মিথরা নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ঝড় তুলেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার এই টুর্নামেন্টে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন