শামীম চৌধুরী : নিউজিল্যান্ডকে ৭৭ রানে হারিয়ে প্লেটের ট্রফি জিতেও হাসিমুখে দেশে পা রাখতে পারেননি, কাপ পর্বে খেলতে না পারার কষ্টটা রেখেছেন পুষে মেহেদী হাসান মিরাজ। ২ বছর আগে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গ্রæপ রাউন্ডের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ায় সুপার লীগে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সেই হতাশা কাটিয়ে নিজেদের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দেশবাসীকে সুখবর দিতে প্রত্যয়ী মিরাজের দল। ২ বছর আগে আইসিসি’র সভায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের একক স্বাগতিকের মর্যাদা বাংলাদেশ পাওয়ায় ট্রফিতে রেখেছে চোখ বিসিবি।
একটি দলকে একত্রিত করে, লম্বা প্রস্তুতির সকল সুযোগ দিয়েছে বিসিবি। স্টুয়ার্ট ল’র মতো পরামর্শক কোচকে দলের সঙ্গে যুক্ত করেছে বিসিবি। ক্রিকেটারদের উদ্বুদ্ধকরনে করছেন কাজ। আছেন দলের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। গত ২ বছরে হোম এন্ড অ্যাওয়েতে ৫টি সিরিজ এবং একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। গত বছরে ভারতে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট বাদ দিলে, ৫টি ওয়ানডে সিরিজের সব ক’টিতেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন ব্যবধান রচনা করতে পেরেছে মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হক শান্তর, পিনাক ঘোষ, জয়রাজ, সনজিত, শাওনরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা এমনকি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দ.আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দরের বিপক্ষে হোম এন্ড অ্যাওয়ে সিরিজ জয়ের রেকর্ডও আছে বাংলাদেশ যুবাদের এই সময়ে। সে কারণেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা তিনটি আসর (২০০৬,২০০৮ এবং ২০১২) যা পারেনি সে সময়ের যুবারা, সেই গÐিপেরিয়ে ট্রফিতে চোখ মিরাজদের। নিজেদের চেনা-জানা মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ প্রতিপক্ষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দ.আফ্রিকা। জয় দিয়ে আসরটি শুরু করতে পারলে শীর্ষে থেকে গ্রæপ রাউন্ড শেষ করে সুপার লীগের পথ অনেকটাই মসৃণ হবে বাংলাদেশের। স্বটল্যান্ড, নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দু’টি তখন আর সমীকরণ মেলানোর লড়াইয়ে পাবে না রূপ।
দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ কিন্তু এবারই প্রথম খেলছে না বাংলাদেশ যুবারা। এক যুগ আগে (২০০৪ সালে) নিজেদের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দেশবাসীকে হতাশ করার অতীত কিন্তু আছে। তবে নিজেদের পারফরমেন্সে দেশবাসীকে স্মরণীয় কিছু উপহার দিতে মুখিয়ে এখন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজÑ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমরা সে অর্থে ভালো কিছু করে দেখাতে পারিনি।এবার এমন একটা কিছু করে দেখাতে চাই, যেন লোকে আমাদের মনে রাখে। অনেকদিন পরও যেনো মানুষ বলে, ওই য্বু দলটি এত ভালো করেছে, ওরা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এটাই থাকবে আমাদের লক্ষ্য।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ইংল্যান্ডের মতো বড় দলকে অনুশীলন ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হারানো, তার আগে ওয়েস্টইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলবে ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশ, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে বেড়েছে প্রত্যাশা। দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল যুব বিশ্বকাপে হাজির হবে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক মিরাজÑ ‘সাফল্য পেয়েছি বলেই সবাই আমাদের নিয়ে আশা করছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড আমরা বুঝি, সেটা পূরণ করার চেষ্টা করব। এটাকে চাপ হিসেবে নিচ্ছি না। ক্রিকেট খেলাটা প্রক্রিয়ার খেলা। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারলেই আমরা পারব।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে যাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল, সেই দ.আফ্রিকার বিপক্ষে গত বছর হোম এন্ড অ্যাওয়ে, ২টি সিরিজের ট্রফি জয়ের গর্ব আছে মিরাজদেরÑতাও আবার ব্যবধান ৬-১ এবং ৫-২! দ.আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ ১৪ লড়াইয়ে ১১টিতে জয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। নিকট অতীতের এই পরিসংখ্যানে দারুন কিছু’র ভরসা পাচ্ছেন কোচ মিজানুর রহমান বাবুলÑ ‘এই টুর্নামেন্টের জন্যই গত দেড় বছর ধরে আমরা কাজ করছি। এই টুর্নামেন্টের জন্যই সবকিছু। আমরা চেয়েছি ছেলেরা যেন ফোকাস না হারায়। ওদের সঙ্গে আমরা ১৪টি ম্যাচ খেলেছি। প্র্যাকটিস ম্যাচসহ ১৬টি খেলেছি। ওরা যেমন আমাদের শক্তি-দুর্বলতা জানে, আমরাও জানি ওদের সম্পর্কে। এটা অবশ্যই কাজে লাগবে। ওদের দুর্বল জায়গায় আমরা আঘাত করার চেষ্টা করব।’
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আজ ফেভারিট হয়েই মাঠে নামবে শিষ্যরা, এমনটাই মনে করছেন বাবুলÑ ‘ইংল্য্যান্ডের সঙ্গে খেলেছি, কিছুই জানতাম না ওদের সম্পর্কে। সেই তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা সহজ হবে। তাওপর আমাদের এখানে খেলা। আমরা ওদের দেশে গিয়েই ৫-২ জিতে এসেছি। আমাদের এখানে ৬-১ জিতেছি। আমরা তাই এগিয়েই থাকব। মানসিকভাবে ও প্রস্তুতিগত দিক থেকেও এগিয়ে আমরা।’
বিশ্বকাপের আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অভিষেক বাংলাদেশের। অতীতের ১০টি আসরের মধ্যে ৯টিতে প্রতিনিধিত্ব করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের অভিষেকে প্লেট চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৮ সাল), ২০০৪, ২০১০ এবং ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি আসরেও প্লেট চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল। সেরা সাফল্য ২০০৬ এ, ইংল্যান্ডের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে ৫ম মেহরাব জুনিয়র, মুশফিকুর রহিম, সাকিব, তামীমের দল। পরের আসরেও কোয়ার্টার ফাইনাল ট্র্যাজেডি। দ.আফ্রিকার কাছে হেরে সোহরাওয়ার্দি শুভ’র দল আসর শেষ করেছে ৬ষ্ঠ হয়ে। এবার দৃষ্টি অনেক দূরে, শুরুটা সেই দ.আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। যাদের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জয়ের কোন রেকর্ড নেই বাংলাদেশ যুবাদের। ৪টি ম্যাচের সব ক’টিতেই হারের অতীত বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। আছে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সর্বনি¤œ স্কোর (৪১ অল আউট) এবং সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের (২০১ রান) লজ্জা! এসব অতীত পেছনে ফেলে নুতন ইতিহাস রচনার প্রত্যয় মিরাজদের। ছোটদের বিশ্বকাপের পুরো আলোটা এখন পড়েছে মিরাজদের উপর। যে দলটিকে ফাইনালে দেখতে চান ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আবিস্কার সাকিব আল হাসান। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপিও মিরাজদের হাত ধরে দারুন ইতিহাস রচনার স্বপ্ন দেখছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন