স্পোর্টস রিপোর্টার : মৌসুম সূচক ফুটবল টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল চট্টগ্রাম আবাহনী। ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে চমক দেখাল তারা। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী ২-০ গোলে ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ঘরোয়া কোনো আসরের শিরোপা জিতল। ফাইনালে বিজয়ী দলের হয়ে হাইতির ফরোয়ার্ড লিওনেল সেইন্ট প্রিয়াক্স ও স্থানীয় ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া একটি করে গোল করেন। এরআগে বাংলাদেশের ফুটবলে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট জয় তো দূরে থাক, কোন আসরের ফাইনালেও খেলতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। একমাত্র প্রেরণা গত বছর নিজেদের মাঠে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা জয়। এর বাইরে ২০০৪ সালে জাতীয় লিগ ও একবার ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এই হলো ফুটবলে চট্টগ্রাম আবাহনীর সাফল্যের পুঁজি। তারা এবারই প্রথম স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠেছে। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করেছে।
স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে দুই আবাহনীর লড়াইয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় চট্টগ্রাম। ম্যাচের ২ মিনিটেই তারা প্রতিপক্ষের গোলসীমায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় বক্সের বাইরে থেকে শট নেন চট্টগ্রাম আবাহনীর মরোক্কোর মিডফিল্ডার তারিক আল জানাবি। কিন্তু তার শট বাম পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এরপর তারা বেশ ক’টি বিচ্ছিন্ন আক্রমণ সানালেও গোল হওয়ার মতো কোন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় ঢাকা আবাহনী। কিন্তু ফাঁকা পোস্ট পেয়েও বল বাইরে মারেন মিডফিল্ডার জুয়েল রানা। তিনি গোল বার লক্ষ্য করে শট নিলেও তা চলে যায় ডান বার ঘেঁষে। ২৫ মিনিটে বক্সে বল পেয়েও চমৎকার সুযোগ নষ্ট করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার রেজাউল করিম রেজা। এর ছয় মিনিট পর বক্সের দুই গজ দূরে ফ্রি-কিক পায় বন্দরনগরীর আকাশি-হলুদরা। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে ফ্রি-কিক বাইরে মারেন তারিক আল জানাবি। তার শটের বল ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। ম্যাচে তুলনামূলক ভালো খেলেছে চট্টগ্রাম আবাহনীই। তারা গোলের বেশ ক’টি সুযোগও পায়। যা থেকে দু’টি গোল আদায় করে নেয়। ৩৬ মিনিটে ডানপ্রান্ডের বক্সের খুব কাছ থেকেই ফ্রি-কিক নেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক জাহিদ। তার ফ্রি-কিকের বল বক্সে পেয়ে তা বাইরে মারেন ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া। ৪৪ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ঢাকা আবাহনীর বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন চট্টলার হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল প্রিয়াক্স। কিন্তু তাকে ঘিরে ধরেন ঢাকার আকাশী-হলুদ শিবিরের দুই ডিফেন্ডার। ফলে তিনি বল পোস্টে পাঠানোর সুযোগই পাননি। গোলশূণ্য অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষ হলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে লড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। সফলও হয় তারা। এই অর্ধেই চমৎকার দু’টি গোল আদায় করে নেয় ঢাকার ফুটবলে পুরোপুরি বদলে যাওয়া চট্টগ্রামের দলটি। ৫৫ মিনিটে প্রথম গোল পায় তারা। এ সময় রুবেল মিয়ার পাস থেকে বল পান হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল প্রিয়াক্স। বল আয়ত্তে নিতে এগিয়ে আসেন ঢাকা আবাহনীর গোলরক্ষক শাকিল। কিন্তু তাকে কাটিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে গোলবারের খুব কাছে চলে যান প্রিয়াক্স। আয়েশি ভঙ্গিতে ডান পায়ে শটে গোল করে দলকে আনন্দে ভাসান এই হাইতিয়ান (১-০)। চমৎকার গোলে এগিয়ে গিয়ে ¯েøাভাকিয়ান কোচ জোসেফ প্যাভলিকের শিষ্যরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তারা একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে প্রতিপক্ষে চাপের মুখে ফেলে দেয়। যার ধারাবাহিকতায় প্রথম গোলের ছয় মিনিট পর ববধান দ্বিগুণ করে তারা। ৬১ মিনিটে মিডফিল্ডার কৌশিক বড়ুয়ার পাসে বল পেয়ে বাইসাইকেল কিকে গোল করেন ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া (২-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে চট্টগাম শিবির। আর হতাশা ভর করে ঢাকা আবাহনীর উপর। দু’গোল হজমর পরও তারা ম্যাচে ফিরতে চেস্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ম্যাচের বাকি সময় আর কোন গোল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়েই ইতিহাস গড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম আবাহনীর রুবেল মিয়া। তাকে ২৫ হাজার টাকা প্রাইজমানি দেয়া হয়। টুর্নামেন্ট সেরা একই দলের হাইতির ফরোয়ার্ড লিওনেল সেইন্ট প্রিয়াক্সও পান ২৫ হাজার টাকা। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান তরফদার মোঃ রুহুল আমিন খেলোয়াড়দের ১০ লাখ টাকা বোনাস দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন