সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর দিক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৫০ পিএম

পৃথিবীর ভেতরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রের ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গেছে! সব হিসাব ওলটপালট করে দিয়ে তা অত্যন্ত দ্রুত দিক বদলাচ্ছে। তার ফলে, গভীর সমুদ্র, অতলান্ত মহাসাগরে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ছে জাহাজ। গভীর সমুদ্রে জাহাজের ক্যাপ্টেন, নাবিকদের দিক নির্ণয়ে ভুল হয়ে যাচ্ছে। ভুলভ্রান্তি হয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোনে দেখানো গুগলের ম্যাপেও। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরাও।
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুটা ছিল কানাডার দিকে। কিন্তু হিসাব করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন সেই উত্তর মেরু কানাডা থেকে বেশ কিছুটা সরে গিয়ে চলে গিয়েছে সাইবেরিয়ায়। আর সেটা ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুত হারে। গত ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে, আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল।
গবেষকদলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর পেটের ভেতরে থাকা সেই বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রের এত দ্রুত দিক বদলানোয় কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না ভূপদার্থবিদ ও ভূচুম্বক বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীর পেটে (কোর) থাকা ফুটন্ত তরল লোহার স্রোত দিক বদলানোর ফলেই পার্থিব চুম্বক দিক বদলাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন না, কেন তার উত্তর মেরু কানাডা থেকে এত দ্রুত গতিতে সরে গিয়েছে সাইবেরিয়ায়।
এ বিষয়ে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্ণব বলেন, ‘এই ভাবে চললে বিপদ অবশ্যম্ভাবী বুঝে আগামী ১৫ জানুয়ারি জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্বের নতুন চৌম্বক মডেল তৈরি করতে। যাতে যাবতীয় দিক নির্ণয় বা নেভিগেশনের সমস্যা অনতিবিলম্বে দূর করা যায়।’ তিনি জানিয়েছেন, পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর নজর রাখার জন্য ৫ বছর অন্তর বানানো হয় নতুন চৌম্বক মডেল। চলতি মডেলটি চালু হয় ২০১৫ সালে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক কেন বদলায়, এ বিষয়ে তিনি জানান, পৃথিবীর পেটের ওই চৌম্বক ক্ষেত্রটা তৈরি হয় মূলত এর কোরে থাকা গনগনে তরল লোহার স্রোতের জন্য। সেই লোহার সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু পদার্থ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্রোত এক দিক থেকে আরেক দিকে যায়। তার ফলে, সময়ান্তরে পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক বদলায়। তা এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরে যায়। ২০১৬ সালে এমন ঘটনা ঘটেছিল। দক্ষিণ আমেরিকার (লাতিন আমেরিকা) উত্তর দিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে আচমকা সাময়িক ভাবে খুব দ্রুত গতিতে সরে গিয়েছিল পৃথিবীর সেই চৌম্বক ক্ষেত্র। তা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) ‘সোয়ার্ম’ উপগ্রহের নজরে ধরা পড়েছিল।
গত বছর থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন, পৃথিবীর পেটে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রটি তাদের হিসেব মেনে চলছে না। তা অপ্রত্যাশিত ভাবে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে দিক বদলাচ্ছে। তাই আরও এক বছরের জন্য অপেক্ষায় না থেকে, এখনই নতুন চৌম্বক মডেল বানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এটাও ঠিক হয়েছে, এ বার প্রতি বছরই মূল্যায়ন করা হবে পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের গতিবিধির। গত মাসের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে, আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বৈঠকে আন্তর্জাতিক গবেষকদলের পক্ষ থেকে তাদের দু’টি পর্যবেক্ষণের কথা জানানো হয়েছে। এত দ্রুত পার্থিব চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারন এখন পর্যন্ত সঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। তাদের অনুমান, পৃথিবীর অন্দরে থাকা তরল লোহা ও তরল অবস্থায় থাকা অন্যান্য পদার্থের স্রোতের ভারসাম্যে অদলবদল হওয়ার জন্যই এটা হচ্ছে। তবে এটা শুধুই অনুমান। সেটাই বা কেন হচ্ছে, সেটাও এখনও পর্যন্ত অজানা। সূত্র: আনন্দ বাজার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন