বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তিন পরীক্ষায় ফেল ইভিএম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় যখন সেই রাষ্ট্র তার সরকারকে নীতিগত মান্যতা দেয়। এই মান্যতা দেওয়ার প্রক্রিয়াতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। আর তা ঘটে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, কে ভোট পেলেন, তা গোপন রাখার মধ্য দিয়েও এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এই ভোটদান প্রক্রিয়া হতে হবে সঠিক, গণনাও হবে সঠিকভাবে এবং গোপনীয়তা যাতে রক্ষা করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। স্বচ্ছতা, শুদ্ধতা এবং গোপনীয়তা যে কোনো নির্বাচনের তিন প্রধান স্তম্ভ হওয়া দরকার। এটা ইভিএমের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকার বিষয় নয়, যে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে এই তিনটি জিনিস মাথায় রাখা হচ্ছে কী না, সেটা নজরে রাখা জরুরি।
ঘটনাচক্রে ইভিএম এই তিনটি পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ। জার্মানির সাংবিধানিক আদালত ২০০৯ সালে এক স্পষ্ট রায়ে এই কথাগুলোই বলেছে এবং তারা আবার কাগজের ব্যালটে ফেরত গেছে। একইভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা নেদারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডসহ আরো বেশ কিছু দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।
ইভিএম স্বচ্ছ এবং সঠিক, এটি এক বাক্যে বলে দেওয়া যায় না, কারণ কোনো ভোটদাতাই তার নিজের ভোট দেখতেও পান না এবং সঠিক কিনা বুঝতেও পারেন না। যেটা বোঝা যায় সেটা হলো সর্বমোট কত সংখ্যক ভোট পড়ল, কিন্তু ভোটদাতার ভোট তার ইচ্ছা অনুযায়ী পড়ল কি না, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
ঠিক এই কারণেই ভিভিপ্যাট বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট মেশিন ভারতে চালু করা হয়। কিন্তু তা দিয়েও পুরো সমস্যার সমাধান হয় না। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে সমস্ত ভিভিপ্যাট মেশিন গোনা হয় না। যদি এরকম করা যেতো, যে কোনো নির্বাচনে একটা ইভিএমের গন্ডগোল হলে সমস্ত ভিভিপ্যাট মেশিন হাতে গোনা হবে, তাহলেও বিষয়টা মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু যতদিন না সেই সংক্রান্ত কোনো নিয়ম বাস্তবায়িত হচ্ছে, ততদিন ইভিএমকে সন্দেহের ঊর্দ্ধে রাখা যায় কি?
আসা যাক গোপনীয়তার বিষয়টিতে। যখন পেপার ব্যালটে ভোট হতো, তখন গণনার সময় সমস্ত ব্যালট আগে মিশিয়ে দেওয়া হতো, যাতে বোঝা না যায়, কোন অঞ্চলের মানুষ কোন প্রার্থীকে বা কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছেন। যার ফলে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা থেকেও বাঁচার উপায় থাকত। দ্বিতীয়ত, কোন অঞ্চলের মানুষ সরকারি কোনো সুবিধা পেয়েও শাসকদলকে ভোট দিয়েছেন বা দেননি, সেটা বোঝার সম্ভাবনা কমত। ফলে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রচার করার যে বিষয়টা ইদানিং আলোচনায় আসছে, সেটা থেকে বিরত রাখা যেত রাজনৈতিক দলগুলিকে। আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড যুক্তকরণের বিরুদ্ধে এটাও একটা জোরালো যুক্তি।
যদিও এটা হয়তো সত্যি যে, ইভিএমে নির্বাচন হলে সময় এবং অর্থ কম ব্যয় হয়, কিন্তু এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে ইভিএম ব্যর্থ। যদিও নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
অনেকেই বলে থাকেন, এই পদ্ধতিতে ছাপ্পা ভোট এবং ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে গেছে, কিন্তু এটা তো সত্যি যে, ইভিএমের মাইক্রোচিপ দিয়ে যে ভোট হয়, তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া ভোটদাতার কোনো গতি নেই। কোন সফটওয়্যারে এই মেশিন চলছে সেটাও জানা নেই। এটা প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন যে, ইভিএমে কারচুপি করা যায়, কিন্তু তা বলেই তা সন্দেহের ঊর্দ্ধে, সেটাও তো বলে দেয়া যাচ্ছে না। এই সন্দেহই কি যথেষ্ট নয় যে, আমরা ইভিএমের বদলে পেপার ব্যালটে ফিরে যাওয়ার আলোচনাটা অন্তত শুরু করতে পারি?
জার্মানির আদালতে বলা হয়েছিল, ‘যে কোনো নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক মান্যতা দিতে গেলে নির্বাচনী পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ হতে হয়, তবেই একমাত্র সেই প্রক্রিয়া সন্দেহের ঊর্দ্ধে উঠতে পারে, তাতেই গণতন্ত্র রক্ষিত হয়।’ সুতরাং ভারতের নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব, এই সন্দেহের ঊর্দ্ধে ভারতীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
ভারতে এন ডি টিভির পেজে একটা ভিডিও দেখলাম। আম আদমী দলের এক এম এল এ লোকসভাতে ইভিএম হ্যাক করে দেখিয়েছেন৷ আমেরিকাতেও ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব সেটা দেখানো হয়েছে৷
Total Reply(0)
রাজিব ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
সমস্যা ইভিএম নয়, সমস্যা হল ইভিএম যারা চালাবেন তারা।
Total Reply(0)
Md Shakil ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন ইভিএমে হয়েছে। কিন্তু এখনো বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হলে ভারত দৃশ্যত আল গোরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারা ২০১৩ সালে স্বচ্ছতার বাড়তি রক্ষাকবচ হিসেবে ভিভিপিএটি (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) চালু করে। ভোট গ্রহীতার নাম ও প্রতীক সংবলিত একটি কাগজ তৈরি করবে যন্ত্র, যা ভোটারের জন্য একটি রক্ষাকবচ। এই পদ্ধতি যুক্ত করার পরেই কেবল সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন।
Total Reply(0)
Md Shakil ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
আমরা নিজেদের ওয়েস্টমিনস্টার মডেলের গণতন্ত্র চর্চা করি বলে দাবি করি। সেই গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইংল্যান্ডও ইভিএম ব্যবহারের সাহস করেনি।
Total Reply(0)
সাহেদ শফি ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
২০০৯ সালে জার্মান ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত ইভিএম নাকচ করেন।
Total Reply(0)
সরফুুদ্দিন ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
আয়ারল্যান্ডও ২০০২-২০০৪ সালে ইভিএম ব্যবহারের পরে বিতর্কের মুখে দুটি কমিশন করে এবং তারাও দেখতে পায় যে, ‘ওই ডাচ যন্ত্র বিশ্বস্ত নয়। প্রযুক্তিগত রক্ষাকবচ অপ্রতুল।
Total Reply(0)
Jishan Gazi ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
আমরা ওপরের আলোচনার দিকে সরকারের এবং ইসির নজর কাড়তে চাই।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
আমাদের দেশে জাল ভোট ঠেকাতে প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হলো ভোটারদের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ই-ভোটিং কার্ড চালু করা।
Total Reply(0)
Md Forhad Sheikh ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
Even in America and Britain are not sure about EVM for elections. paper ballots are always sure. Bangladesh will use EVM?? Joke, and nothing else!!
Total Reply(0)
Fakhrul Islam ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
অর্থের অপচয় বন্ধ করুম। আমেরিকা ইউরোপে ইভিএম নেই। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বার বার বলছেন যে ইভিএম এ ভোট কারচুপি করা যায় এবং করা হয়েছে।
Total Reply(0)
নীরব তুমি ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পেরেছে সরকারের চাপের কারণে নিবার্চন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদান্ত নিয়েছে
Total Reply(0)
তরুলতা কল্পনা ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
সৌদিআরব চোর ধরার জন্য একটা চোরের মেশিন কিনলো।অতঃপর মেশিনটি নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হলো, ♦প্রথম দিনে ১৪০০শ চোর ধরা পরলো! ♦ভারতও সৌদিআরবের দেখাদেখি চোর ধরার মেশিন বসাল তাদের মেশিনে ধরা পরলো ৪০০ চোর!! ♦বাংলাদেশেও মেশিন আনা হলো এবং যথা স্থানে বসানো হলো কিন্তু মেশিনটি চুরি হয়ে গেল!!! ইভিএম নিয়ে আর কি বলবো?
Total Reply(0)
Shamim Reza ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
বাংলাদেশে ইভিএমে হোক বা ব্যালটে হোক ভোট চুরি নিশ্চিত! তাই কিভাবে ভোট হবে এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
Total Reply(0)
Mahmudur Rahman ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
ভোটার হওয়ার পর থেকে আমি কখনও ভোট দেয়নি আর নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়ার আশংকা থাকলে দিব। ইভিএমে ভোট দেব সেটাতো আরও ভয়াবহ হবে ওই মেসিনের ব্যাকইন্ডে (পেছনে) যে কোন এ্যালগরিদম চলবে কে যানে? আবার কে কাকে ভোট দিল আইডি ধরে তাও বের করা যাবে সো আই ওয়ান্ট টু এবোয়েড এভিএম সিস্টেম।
Total Reply(0)
Monir Khan ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
ভারতে ইভিএম বন্দে রাজনৈতিক দল গুলো একমত।আর আমাদের দেশের সরকার চায় ইভিএমে ভোট হউক,আমার ধারনা ইভিএমে কারচুপি করার ব্যবস্থা আছে? এখন যারা সরকারী দল তারা বিরোধী দলে গেলে আমি নিশ্চত তারা বলবে যে আমরা ইভিএম চাই না!
Total Reply(0)
jack ali ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ৩:১৪ পিএম says : 0
Election means: 1. Division in a country 2. Hating each other 3. Vote rigging 4. Billion Dollars tax payers money waste Solution: in Islam: Selection by the Graeat Scholar of Islam---no division/vote-rigging/no-waste of tax payers money''''''''
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন