সায়মন স্বপন
সাহিত্যের বুদ্ধিদীপ্ত ও সূক্ষ্ম ভাবনার রূপালী ফসল হিসেবে ধরা হয়Ñ আধুনিক বা সমকালীন কবিতা। তাই আধুনিক বা সমকালীন কবিতাটি কাল বা পরশু কেন অনাধুনিক হয়ে পড়বেÑ এ বিষয়ে ভেবে দেখার দরকার আছে বলে বোধ করি। কবিতার জন্ম যখনই হোক না কেন, ওই কবিতা ওই সময়ের আধুনিক বা সমকালীন কবিতা হিসেবে গণ্য হবে শুধু তাই নয়; ওই কবিতা পরবর্তীতেও আধুনিক বা সমকালীন কবিতা হিসেবে পরিগণিত হতে পারেÑ তা উল্লেখ করার প্রয়োজন আসে না। সুতরাং কবিতা যখনই লেখা হোক না কেন, সেটি ওই সময় এবং পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সময়েরও আধুনিক বা সমকালীন কবিতা হিসেবে দাবী রাখতে পারে। সমকালীন কবিতার শরীরেও কাব্যালঙ্কার বা কাব্যরস থাকবেÑ এটাই কবিতার অন্যতম শর্ত। কাব্যরস তাই, যা একজন পাঠককে বা আলোচককে ঐ কবিতার শরীরে মনঃদৃষ্টি আবদ্ধ করে রাখে; ভাবতে সুযোগ দেয়। পাঠকের মনকে আন্দোলিত করে, কম্পন জাগায়। যদি একজন পাঠক; কবিতা পড়ার পর কোনো চিত্রকল্প, গল্প, চরিত্র, সময়, কল্পনাবোধ, জীবনবোধ বা দর্শন ইত্যাদি না খুঁজে পায় তবে কবিতার শরীর অপুষ্ট হতে পারে।
বর্তমানে সমকালীন কবিতার শরীরে চোখ রাখলে বোঝা যায়Ñ কবিতার শরীরে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও চিত্রকল্প, সময়, চরিত্র, প্রবাহমানতা, পরিমিত কাব্যালঙ্কার, রূপক, অনুপ্রাস, উৎপ্রেক্ষা, ছন্দ ইত্যাদি চমৎকারভাবে যথাযথ স্থান করে নিচ্ছে। যদিও এর আগেও সেটি বিদ্যমান ছিল। একটি কবিতার উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা যায়- ‘বালিকা, তোমার স্কুলদিন হালোটের পথ ধরে চলে যায়। কাগজসাদা স্কার্ফ ওড়ে ঘুড়িছেঁড়া উদ্দাম হাওয়ায়। বাতাসের কবলে আজ তুমি; বাতাসের কবলে আজ অপরিণত স্তনের লাজুক সম্ভ্রম।’ (স্কুলদিন, পাপ ও পুনর্জন্ম, চাণক্য বাড়ৈ)। এ বিষয়ে অসীম সাহা বলেছেন, ‘‘কুমার যেমন করে মাটির প্রতিমা গড়ে, কাঠামো আর মাটির কৌশলে সৌন্দর্য আরোপ করে, তেমনি করে কবিকেও চেতনার গহনে একটি একটি করে ভরে দিতে হয় সৌন্দর্যের সুন্দরতম ফুল। যেকোনো রকম বিচ্যুতি কবিতার সৌন্দর্যকে হত্যা করতে পারে’’ (প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা, আগস্ট-১৯৭৬, পৃ-৬১)। সুতরাং কবিতাকে অবশ্যই তার নিজস্ব ঢংয়ে সাজতে দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত সাজ যেন কবিতার শরীরকে ঢেকে না ফেলে সেদিকেও কবিকে নজর দিতে হবে। কেননা কবিতার নিজস্ব একটি স্বাধীনতা আছে, যদিও কবিতা কবির হাতেই জন্মে থাকে। কবিতার যখন জন্ম হয়, কবি তখন অন্য জগতে বসবাস করে থাকে। না গৃহে, না সমাজে। তখন কবিতার স্বাধীনতা নিয়ে কবির মাথাব্যাথা না-ও থাকতে পারে। তবে সম্পাদনার দৃষ্টিকোণে কবিতাকে অবশ্যই কবিতার স্বকীয় স্বাধীনতাসিদ্ধ হওয়া উচিত।
কবিতায় সামগ্রিকভাবে একটি প্রেক্ষাপট দাবী রাখেÑ যা হতে পারে কল্পনাপ্রসূত বা বাস্তবতার নিরিখে। তবে বাস্তবতার নিরিখে হলেও তাতে পরিমিত কাব্যরস থাকা বাঞ্ছনীয়। অসীম সাহা এ বিষয়ে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘‘কবিতা বাস্তবের প্রতিকৃতি, কিন্তু অনিবার্যভাবে শৈল্পিক। শিল্পের মানদ-ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকে কবিতায় আবরণ বা অলঙ্করণে (যা কাব্যিক অর্থে নয়) বিশ্বাসী- যা কবিতাকে বাইরে ভয়ানকভাবে স্ফীত করে তোলে। কিন্তু গুণগত বিচারে যাকে কবিতা হিসেবে চিহ্নিত করা মুশকিল’’ (প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা, আগস্ট-১৯৭৬, পৃ-৪০)। কবি যখন কোন ঘটনা বা কল্পনার অবতারণা করেন তখন কবিকে মাথায় রাখতে হয়Ñ ঐ ঘটনা বা কল্পনা কবিতার শরীরের জন্য কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা বয়ে আনবে। আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তা হলোÑ সময়। সময়ের তাড়না থেকেই সময়োপযোগী কবিতার জন্ম, আর সেই কবিতাই সময়ের খিদে মিটিয়ে থাকে। যদিও সেই কবিতা, পরবর্তী সময়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এ বিষয়ে ভারতের লেখক জয়ন্ত মহাপাত্র বলেছেন, ‘‘কবিতা লেখা হয়ে গেলে তা পড়ে থাকে অন্য কোনো সময়ের জন্য’’ (এবং অর্বাচীন, পশ্চিমবঙ্গ, অক্টোবর-১৯৯৯, পৃ-৪৩)। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সত্যি যে, কবিতায় নির্দিষ্ট সময় বা কালকে নির্দেশ করে থাকে। সেটি হতে পারে বর্তমান, অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ। এসবের মিলিত অবস্থাও কখনও কখনও স্থান পায়।
সমকালীন কবিতায় অনেক ক্ষেত্রে কবিতার প্রথম আর শেষ স্তবককে একই সমান্তরালে রেখে কৌণিকভাবে পাঠক, আলোচক বা সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গি পরখ করার সুযোগ তৈরী হচ্ছে। বোধ করি, এসব দৃষ্টিভঙ্গি কবিতাকে কতটুকু এগিয়ে নিবে নাকি চৈতণ্যের তীরে ধসে পড়বে, সেসব কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। যদিও টিকে থাকা বা ধসে পড়ার জন্য কোনো কবিই মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। এমনকি লোভের বশবর্তী হয়েও কোন কবি কবিতার জন্ম দেন না। শুধু বোধের কুলতলায় পড়ে থাকা শুকনো কাটা দিয়ে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের গলায় বিঁধে থাকা কুসংস্কারকে কতটুকু ছাড়িয়ে আনা যেতে পারে, তাই একমাত্র কবিতার উদ্দিষ্ট বিষয় হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। আল মাহমুদ তাঁর ‘ঝংকার তোলে কাব্যের রানি’ কবিতায় বলেছেন, ‘আমি কবি।/আমি কথা বলে যাই নিজের ছন্দে/আমার শব্দ আমারই গন্ধেÑ/আনন্দে মাতেÑ দু’হাত তুলে’। সুতরাং, পাঠকই একজন কবিকে বাঁচিয়ে রাখেÑ কবির সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে।
সমকালীন বাংলা কবিতার একটি চরণ বা স্তবক থেকে অন্য চরণ বা স্তবকের মধ্যে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়Ñ প্রত্যেকটি চরণ বা স্তবকের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক ও প্রবাহমানতা বিদ্যমান। কেননা, প্রবাহমানতা ব্যতীত কবিতার শরীর ঋদ্ধ হয় না। শব্দের গাঁথুনি মজবুত হয় না। সুতরাং, স্তবক খন্ডচিত্রে হলেও তার মধ্যে চিত্রকল্প ও চরিত্রের মিলবন্ধন আবশ্যক। এই বিষয় থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কবিতার শরীরে অন্যতম আরও একটি শর্তÑ প্রবাহমানতা। অপরদিকে, বাইরের দেশগুলোর সাহিত্যের পাতায় কবিতার শরীরে চোখ রাখলে সেখানেও একনজরে বিচ্ছিন্নতা মনে হলেও গভীর পাঠ ও পর্যালোচনায় এটি অবশ্যই পরিষ্কার হয়ে ওঠে যেÑ প্রবাহমানতা ব্যতীত কবিতার শরীর পরিপুষ্ট হয় না। মোদ্দাকথা, সমকালীন কবিতায় পর্যাপ্ত কাব্যরস নামের নুন-মশলার পাশাপাশি প্রবাহমানতাও গুরুত্বপূর্ণ, তা পাঠক থেকে শুরু করে কবিকেও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সাথে সাথে মেদবহুল শব্দ বা শব্দচয়নও কবিকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে অনায়াসে। কারণ, মেদ যেমন একজন সুন্দর নারীকে বিশ্রি করে তোলে তেমনি একটি সুন্দর কবিতাকেও বিশ্রি করে তুলতে সহায়ক। যে শব্দটি অনাবশ্যকভাবে কবিতায় স্থান পাচ্ছে, যদিও সে শব্দটির স্থান না দিলেও কবিতার চিত্রকল্প অটুট থাকতো, তবে কেন অনাবশ্যকভাবে শব্দটির ব্যবহার হবেÑ সে বিষয়ে কবিকে ভেবে দেখা বিশেষ জরুরি। আরও একটি বিষয়Ñ পরাবাস্তবতা। কবিতায় পরাবাস্তব বিষয়বস্তু আগেও স্থান পেয়েছে এবং বর্তমানে স্থান পাচ্ছে, হয়তো বা ভবিষ্যতেও এর গতিশীলতা অক্ষুণœ থাকবে। কিন্তু এটি এমনভাবে প্রয়োগ করা উচিত যাতে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে এর সামঞ্জস্যতা থাকে। বিশেষ করে, প্রকৃতিনির্ভর বিষয়বস্তুই পরাবাস্তবতার উপাদেয় হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার “পাখির নীড়ের মত চোখ” শব্দচয়নে খেয়াল করলে স্পষ্ট বোঝা যায়। বোধ করি, সমকালীন কবিতায় চিত্রকল্পের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রে এই নিয়মটি মেনে চলা হচ্ছে তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই, এ প্রসঙ্গে রাহমান ওয়াহিদ তাঁর ‘কবিতার আকাল’ কবিতায় বলেছেন, ‘অদ্ভূত এক বর্ণ বিন্যাসে/ আঁচড় পড়ে শ্বাশত বিশ্বাসে/ কে যে শোয় কার শরীর ঘেঁষে/.../কবিতার ভীড়ে পড়ে থাকে, হায়/চিত্রকল্পের কাঠ কংকাল’। বর্তমানে গদ্যকবিতায় অদ্ভুত কিছু দ্যোতনাও সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পাঠককে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আন্দোলিত করে বা ভাবুক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, রূপক বা উপমানির্ভর কবিতায়, পাঠক ভাবনার করিডোরে বেশি সময় যাবৎ ‘ভাবুক’ হিসেবে পায়চারী করে থাকে। পাঠক তার নিজস্ব চিন্তাচেতনায় সেই উপমা বা রূপককে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণে ব্যবহার করার মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। সেটি কবির দৃষ্টিকোণের সাথে একই সরলরেখায় মিলবে তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। সেহেতু উপমা বা রূপক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃতিনির্ভর ও কবিতার ওই চিত্রকল্পনির্ভর-উপমা প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেটি অবশ্যই পরিমিত ও কাব্যিক হতে হবে। যদিও লেখকগণ সেটিই করে থাকেন- এ বিষয়ে নতুন করে উল্লেখ করার অবকাশ থাকে না। পূর্বের কবিতাসহ সমকালীন কবিতায়ও আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়Ñ তা হলো মুখ্য বিষয়কে আড়াল করে অর্থাৎ সরাসরি প্রকাশ না করে রূপকের আশ্রয় নিয়ে সমাঞ্জস্যতা রক্ষা করে কবিতার শরীর সৃষ্টি করা। এক্ষেত্রে প্রথমত, কবিতায় ভিন্ন ভাবমূর্তি ও দ্যোতনা সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, পাঠক ঐ শব্দচয়ন বা চিত্রকল্পকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণে প্রয়োগ করার সুযোগ খুঁজে নেয়। প্রবাদ আছে, গল্পের ঘোড়া গাছে ওঠে। কিন্তু প্রবাদের এই চিন্তাচেতনাকে কবিতার গল্পচিত্রের ক্ষেত্রে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা বয়ে আনবে সেটি ভাবনার বিষয়। অলীকভাবে বিষয়বস্তু কবিতায় স্থান দিলে সেই কবিতার বক্তব্যে ‘স্পষ্টতা’ প্রকাশ পায় না বরং কবিতার ভাবমূর্তি নষ্ট করে কবিকে নি¤œস্তরে পৌঁছে দিতে পারে। সুতরাং, অলীক বিষয়বস্তুকে কবিতায় ঠাঁই দিলে তা উপড়ে যেতে পারেÑ বাস্তবতার ঝড়ে। এটি কবিতার ক্ষেত্রে ‘অপর্যাপ্ত উপাদেয়’ হিসেবে হয়তো বা ধরে নেওয়া যায়। এ ধরনের কারণসহ বেশ কিছু কারণেও ক্ষয়প্রাপ্ত কবির সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে অপুষ্ট ও কঙ্কালসার কবিতাও জন্ম নিচ্ছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মত। যার ফলে, সমকালীন এ ধরনের কবিতার কারণে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিকৃত হচ্ছে; প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে ভিন্নপথে। এ বিষয়ে রাহমান ওয়াহিদ তাঁর ‘কবিতার আকাল’ কবিতায় বলেছেন, ‘আত্মমন্থনের কবিতার বড়ই আকাল/....../শব্দ খেলুড়েদের আজন্ম তৃষ্ণা মেটাতে/প্রয়োজন যখন জলজ প্রকৃতি ও নারীর/ জুয়ারী আসরে তখন কবিতার অলংকারে/আজগুবি গল্প সাজায়/কিছু জন্মান্ধ কবি’। তাই এই কথা বলা যেতেই পারে, একমাত্র কবিতাই পারে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আরও ধারালো করে প্রজন্মকে সঠিকপথে এগিয়ে নিতে। কবিতার চিত্রকল্প এমন হওয়া উচিত যাতে করে আমাদের শিকড়কে উপড়ে না ফেলে লালন করা যায়।
কবিতাকে হতে হবে আরও সাবলীল ও প্রাঞ্জল। তবে দর্শন হবে তীক্ষè, জীবনবোধ হবে ধারালো। কবিতাকে পৌঁছাতে হবে খেটে খাওয়া মানুষের দোরগোড়ায়, অজপাড়াগাঁয়ের ছিমছাম নীরবতায় অর্থাৎ উঁচুতলা থেকে গাছতলার মানুষের কাছে। মোদ্দাকথা, কবিতাÑ মানুষ ও মানবতার কথা বলবে। ব্যক্তির আঁচলে না থেকে কবিতা মাথা উঁচু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কারের সামাজিক চিন্তায় চিন্তিত হয়ে, অন্ধকার দূর করার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, সমাজ বদলের অঙ্গীকারে উৎসাহ যোগাবেÑ মানুষের হৃদয়কে। শুধু শব্দের খেলা নয়, সমকালীন কবিতায় শব্দের সাথে শব্দের মেলবন্ধন বা গাঁথুনিও জরুরি। বাক্যবিন্যাসেও থাকতে হবে মজবুত ভিত, যা সমাজ ও কালকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখবে। তাই সমকালীন কবিতার শরীরে থাকবেÑ ভালবাসা ও মমতার প্রলেপ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন