১৫৭ বছর আগে ১৮৬২ সালে দেশের প্রথম রেলস্টেশনের স্বীকৃতি পেয়েছিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন। সেই রেলস্টেশনটিই এবার বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল টিকিট মাস্টারের কার্যক্রম রেখে বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে আপ-ডাউনের পাখা ওঠানামা। জ্বলছে না আপ-ডাউনের কোনো বাতি। ট্রেন আসা-যাওয়ার তদারকিতে থাকছে না কেউ।
আলমডাঙ্গায় দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মিন্টু মিয়া জানান, গত ৩০ জানুয়ারি রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করতে চিঠি স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু টিকেট মাস্টারের কার্যক্রম চালু থাকবে। ট্রেন আসা-যাওয়ার তদারকিতে কেউ থাকবে না। স্টেশন মাস্টার জানান, এখানকার সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য স্টেশনে বদলি করা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর থেকেই টিকেট কাউন্টার ছাড়া বন্ধ হয়ে গেছে অন্যান্য কার্যক্রম। কি কারনে আলমডাঙ্গা স্টেশন বন্ধ করা হলো তা জানার জন্য রেলভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই সঠিক কারন জানাতে পারেন নি। অফিসের কাগজপত্র দেখে তারা বলতে পারবেন। নতুন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রথম স্বীকৃত রেল স্টেশন কেন বন্ধ করতে হচ্ছে তা জেনে বলতে পারবো। তবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এমপি সোলাইমান হক জোয়ারদার সেলুন আমাকে ফোন করেছিলেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা স্টেশনটি দেশের প্রথম রেলস্টেশন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ব্রিটিশ আমলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জগতি পর্যন্ত চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ। সে সময়ই আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। দ্বিতল ভবনের এই স্টেশনটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উচ্চতম।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রেলওয়ে স্টেশনটি একসময় নীলকর ইংরেজদের একটি কুঠি ছিল। এখান থেকে তারা এ অঞ্চলের নীলচাষ সম্পর্কিত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম পরিচালনা করত। ভবনের ওপর থাকতেন ইংরেজ সাহেব। নিচ তলার কামরাগুলো ছিল তাদের গুপ্তঘর বা জেলখানা। এসব কামরায় আলো-বাতাস, এমনকি বাইরের শব্দ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারত না। যারা নীল চাষ করতে অস্বীকার করত, তাদের ধরে এনে কুঠির নিচতলায় আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হতো।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাদের ব্যবসা প্রসারে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি (চিনিকল) এবং কুষ্টিয়ার জগতিতে আরো একটি চিনিকল গড়ে তোলে। ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হয়। দর্শনা থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে রেলপথটি জগতি স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন