ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেষ সময়ে চলে এসেছে। নতুন করে সময় না বাড়ালে এবারের মেলার শেষ শনিবার ছিল গতকাল। দেখতে দেখতে একেবারে শেষ সময়ে এসে নিজের পছন্দ মতো পণ্য কিনতে সকাল থেকেই রাজধানী ও আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসছেন মেলা প্রাঙ্গণে। এদিকে মেলার শেষ মুহূর্তে চলছে বিভিন্ন স্টলে মূল্য ছাড়ের হিড়িক। সকাল ১০টায় মেলার গেট খোলার পর প্রথম এক ঘণ্টা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল তুলনামূলক কম। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা। দুপুর ১২টার পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে অনেকটাই বেড়ে যায়। সময় যত গড়াচ্ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীতে একাকার হয়ে উঠছে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ।
দর্শনার্থীদের আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেলার গেট ইজারা পাওয়া মীর শহিদুল। তিনি বলেন, এবার মেলায় যেভাবে দর্শনার্থী আসছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। শুক্র-শনিবার গড়ে দেড় লাখের মতো দর্শনার্থী মেলায় আসছেন। অন্যদিনগুলোতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় আসছেন। তবে প্রথমদিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। প্রথম ১৫ দিন গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় এসেছিল।
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার সকালে দর্শনার্থীর সংখ্যা আমাদের প্রত্যাশার থেকে কম ছিল। তবে দুপুরের পর দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। বিকেলের পর অসংখ্য দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করে। শনিবার সকাল থেকে মেলায় ভালোই দর্শনার্থী আসছে। আমরা আশা করি, বিকেলের দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় আসা সারা হোসেন বলেন, ১১টার দিকে মেলা মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছি। আমরা যখন মেলায় আসি তখন ভিড় খুব একটা ছিল না। ১২টার পর থেকে মেলায় ভিড় বাড়ছে। পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে বিকেলের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে মেলায় আসি আসি করে এতদিন আসা হয়নি। এখন তো মেলা শেষ সময় চলে এসেছে, তাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে মেলায় চলে আসলাম। ওদের জন্য কিছু কেনাকাটা করব, আর সংসারের জন্য হালকা কিছু কিনব।
ফার্মগেট থেকে মেলায় আসা মনির হোসেন বলেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় ইতোমধ্যে দুইদিন এসে ঘুরে গেছি। তবে ওই দ্ইু দিন কোনো কিছুই কেনা হয়নি। আজ আসলাম বাড়তি ছাড়ে কিছু কিনতে। কিন্তু মেলায় দেখি পণ্যের আগে যে দাম ছিল এখনও তাই। বিক্রেতারা নতুন করে ছাড় দিচ্ছে না। যাই হোক, আপাতত ঠিক করেছি একটি বেøজার কিনব।
এদিকে ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিও বেড়ে গেছে। তবে সকাল বেলা কিছু সময় স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করে। অবশ্য সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়।
ক্রেতা-দর্শনার্থীর বিষয়ে শিশুদের খেলনা সামগ্রী বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, আলহামদুলিল্লাহ এবারের বাণিজ্য মেলায় বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রথম এক সপ্তাহ বিক্রি খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু মেলা ১০ দিন পার হতেই বিক্রি যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলের দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীতে স্টল ভরে যাচ্ছে। এছাড়া আগে শুক্র-শনিবারে খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। আমরা আশা করছি মেলার বাকি দিনগুলোতেও খুব ভালো বিক্রি হবে।
শোপিস বিক্রেতা রুবেল বলেন, এবার আমাদের বিক্রি খুব একটা ভালো হয়নি। প্রথমদিকে ক্রেতা একেবারেই ছিল না। তবে গত এক সপ্তাহ বিক্রি মোটামুটি ভালো। গত শুক্রবারে খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আজসহ মেলার বাকি দিনগুলোতে ভালো বিক্রি হবে।
মেলা ঘুরে ছোট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। মি. নুডলসের স্টলে দায়িত্ব পালন করা এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের পণ্যের মান ভালো, এটা সবাই জানে। মেলার প্রথম থেকেই আমাদের বিক্রি বেশ ভালো। তবে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার অনেক বেশি বিক্রি হয়। আগের শুক্র ও শনিবারও ভালো বিক্রি হয়েছে।
নাবিস্ক স্টলের বিক্রয়কর্মী ফিরোজ বলেন, এবার আমাদের বিক্রি বেশ ভালো। আশা করি, শেষ পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় বেশি বিক্রি হবে। গত এক সপ্তাহে যে হারে বিক্রি হয়েছে আমাদের ধারণা সামনের দিনগুলোতে তার থেকে বেশি বিক্রি হবে।
মূল্য ছাড়
আগামী শুক্রবার মেলার পর্দা নামছে। তাই মেলার শেষ মুহূর্তে চলছে মূল্য ছাড়ের হিড়িক। ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, কাপড়, ফার্নিচার, রান্নার সামগ্রী, কসমেটিকস থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্যের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপহার।
হাতিল ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে ১৫ থেকে ২০ ধরনের ফার্নিচার প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ফার্নিচারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর কম্বোমেট প্যাকেজে ১২ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বেঙ্গল টেক্সটাইলের স্টল ঘুরে দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে মেয়েদের থ্রি-পিস বিক্রি করত। আবার ৪ সেট থ্রি-পিস একসঙ্গে বিক্রি করছে ৪৪৯ টাকায়। ৩টি থ্রি-পিস প্যাকেজ করে বিক্রি করছে ৬৫০ টাকা। আবার ২টি থ্রি-পিস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দেশ কালেকশন প্রিমিয়ার স্টল নং-২৫ ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি রং ও বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লেহার বিক্রি করছে বিক্রেতারা। মেলা উপলক্ষে ২ হাজার টাকার বেলজার কিনলে একটি মোদি কোট উপহার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেলায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ ছাড়ে ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় ব্লেজার পাওয়া যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন