‘স্টেট অব আর্ট’র আদলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স
ক্রিকেটের জন্য একটি আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়ামের জন্য হাহাকার বহুদিনের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে এবার শুধুমাত্র স্টেডিয়ামই নয়, স্টেট অব আর্ট’ সৃষ্টিতে চোখ দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই সংস্থাটির। ‘স্টেট অব আর্ট’ স্টেডিয়ামের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। এটা শুধু একটি স্টেডিয়াম নয়, এর স্থাপনায় জড়িয়ে থাকে ঐতিহ্য, অসাধারণ নিদর্শণ, দারুণ শিল্প শৈলি। এ ধরণের স্টেডিয়াম গুলো গড়ে উঠে অত্যাধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে। স্টেডিয়াম ভিলেজেই থাকে আবাসন সুবিধা, যোগাযোগ অবকাঠামো।
ইউরোপের স্টেডিয়ামগুলো গড়ে তোলা হয় ‘স্টেট অব আর্ট’- এর আদলে। আইকনিক এ ধরণের স্টেডিয়ামগুলো মুগ্ধতা ছড়ায়, তৈরি করে ভিন্ন আবহ। উপমহাদেশে সচরাচর এ স্টেডিয়ামগুলো দেখা যায় না। ভারতের গুজরাটে এমনই এক স্টেডিয়াম বানাচ্ছে গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েসন। দীর্ঘদিন ধরে এমনই স্টেডিয়াম বানানোর কথা বলে আসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই স্বপ্ন বেশিদূরে নয়।
পূর্বাচলে ৩৭.৪৯ একর জমির ওপর নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম তৈরীতে তিন বছরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিসিবি। স্টেডিয়ামের ডিজাইনার এবং পরমর্শক নিয়োগে অতিসত্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হবে। অনেকের ভেতর থেকে নির্বাচিত ডিজাইনার এবং পরার্শক স্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তুতকৃত কনসেপ্ট ডিজাইনের ভিত্তিতে কাজ শুরু করবেন। এজন্য একটি কমিটি করে দেয়া হবে। যে কমিটিতে থাকবেন বিসিবি এবং বিসিবির বাইরের পরামর্শকেরা। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যনির্বাহী সভা শেষে একথা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ‘আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যেই এটা সম্পূর্ণ করার জন্য লক্ষ্য নিয়েছি। সেই জন্য আমাদের খুব তাড়াতাড়ি করতে হচ্ছে। দেরি করা যাবে না।’
গত বছর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য যে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিল, তাতে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও ক্রিকেট একাডেমির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ একর জমি। বাকি ২০ দশমিক ৪ একর জমি বরাদ্দ রাখা হয় স্টেডিয়াম ছাড়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য। বাংলাদেশের বর্তমান ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট কমপ্লেক্সই গড়ে উঠেছে ১৭ একর জমিতে। আধুনিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে গেলে কমপক্ষে ৩০ একর জমি লাগবে বলে জানিয়েছিল বিসিবি। এবার চাহিদার বেশি জমিউ পেল বিসিবি, ‘আমরা ৩৭.৪৯ একর জমি পেয়েছি। ইতোমধ্যেই জায়গা আমাদের নামে বদল হয়ে গেছে, মিউটেশন হয়ে গেছে। মাননীয় প্রথানমন্ত্রীর নির্দেশে এটা আমাদের ১০ লাখ টাকায় হস্তান্তর হয়েছে। সেইজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। ওনার সহযোগিতা ছাড়া এই জায়গা পাওয়া আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না।’
৩৬ মাসের মধ্যে অত্যাধুনিক এই কমপ্লেক্সটি তৈরি করতে খুব শিগগীরই আন্তর্জাতিকভাবে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট চাইবে বিসিবি। দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি চাচ্ছে, সকলেই যেন এতে অংশগ্রহন করতে পারে, ‘এটা মূলত ডিজাইন এবং কনসালটেন্সির জন্য। এখানে দুটো ভাগ থাকবে, ডিজাইন ও কনসালটেন্সি। আমাদের যে কনসেপ্ট ডিজাইন আছে ওটার ওপরে ভিত্তি করে আমরা প্রকৌশলী ও পরার্শক নিয়োগ দিব। এবং যাদেরটা পছন্দ হবে তাদেরকে আমরা নির্বাচন করবো। শুধু তাই না এই বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। আমাদের বোর্ডের লোক তো থাকবেই বোর্ডের বাইরে থেকেও কিছু বিশেষজ্ঞ এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করবো।’
স্টেডিয়ামটি রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ নির্মাণ করবে নাকি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ- এ নিয়ে এক দফা টানাটানির পর সরে দাঁড়ায় রাজউক। স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণ বিসিবির খরচেই তৈরীর ইচ্ছে প্রকাশ করে পাপন জানান, ‘এটা পুরোটা করবে বিসিবি। এবং আমাদের ইচ্ছে আমরা নিজ খরচেই করবো।’ স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা হবে নুন্যতম ৫০ হাজার। সুবিশাল চত্বরে থাকবে ক্রিকেট একাডেমি, ইনডোর, জিমনেশিয়াম, প্লেয়িং ফিল্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেটের জন্য যা যা প্রয়োজন সব। থাকবে ৫ তারকা হোটেলও, ‘দর্শক ধারণ ক্ষমতা নূন্যতম ৫০ হাজার হবে। এর চাইতে বেশি করবো বলে ঠিক করেছি। বেশ বড় একটা স্টেডিয়াম। শুধু তাই না স্টেডিয়ামের সাথে আমরা একাডেমি, প্লেয়িং ফিল্ড থেকে শুরু করে যা যা আনুসাঙ্গিক; সুইমিং পুল, জিমেনশিয়াম, ইনডোর সবকিছুর ব্যবস্থা করতে চেয়েছি। এখন পরামর্শকের কাছ থেকে ডিজাইন পেলে বুঝতে পারবো যে আসলে কতটুকু সম্ভব। সাথে সাথে একটা ৫ তারকা মানের হোটেলও ওই জায়গাটায় আমরা চাচ্ছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন