দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) বা তাৎপর্যপ‚র্ণ বাজার ক্ষমতাধর হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এর ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে দিতে পারবে বিটিআরসি। এই ঘোষণার কথা ইতোমধ্যে গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। অন্যান্য অপারেটরকেও এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এসএমপি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টরে গ্রামীণফোনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাওয়ার ওপর লাগাম টানতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে বিধি-নিষেধের মুখোমুখি হতে হবে গ্রামীণফোনকে।
গতকাল (রোববার) গ্রামীণফোনকে বিটিআরসি খুচরা মোবাইল সেবা সংশ্লিষ্ট বাজারের তাৎপর্যপূণ বাজারের ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচালনাকারী সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে। এতে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা, বার্ষিক রাজস্ব বা বরাদ্দ পাওয়া তরঙ্গের পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি থাকবে না। বিদ্যমান গ্রাহক সংখ্যা ও রাজস্ব আয়ে ইতোমধ্যেই গ্রামীণফোন ৪০ শতাংশের বেশি হওয়ায় নতুন করে গ্রাহক বাড়ানো, রাজস্ব বৃদ্ধি, ভয়েস ও ডাটার অফার প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গতকাল গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, বিটিআরসির তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা-২০১৮ অনুয়ায়ি খুচরা মোবাইল সেবা সংশ্লিষ্ট বাজারের নির্ণায়কসমূহ (গ্রাহক সংখ্যা, অর্জিত বার্ষিক রাজস্ব এবং তরঙ্গ) কোন অপারেটর নূন্যতম একটির মোট বাজারের নূন্যতম ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করলেই ওই অপারেটরকে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা (এসএমপি) হিসেবে নির্ধারণের বিধান রয়েছে। এই বিধিমালা অনুয়ায়ি গ্রামীণফোন গ্রাহক সংখ্যা ও অর্জিত বার্ষিক রাজস্বের দিক দিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে বিটিআরসি।
গ্রাহকের বিবেচনায় অপারেটরটির প্রায় ৪৭ শতাংশ এবং রাজস্বে ৫০ শতাংশের বেশি বাজার দখল রয়েছে। প্রবিধানমালার তৃতীয় ক্যাটাগরি স্পেকট্রামের বিষয়টি বিটিআরসি উল্লেখ করেনি। কারণ কোনো অপারেটরের কাছে বিটিআরসির বরাদ্দ দেয়া স্পেকট্রামের ৪০ শতাংশ নেই।
এদিকে গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর ঘোষণা করায় অপারেটরটির প্রতি বিধি-নিষেধ আরোপ করবে বিটিআরসি। তবে সেই বিধি-নিষেধে কী কী থাকবে সে বিষয়ে গতকাল স্পষ্ট করা হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসএমপি অপারেটর হিসেবে গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় সংক্রান্ত নির্দেশ পরবর্তীতে জারি করা হবে। তবে বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, অপারেটরটি ইতোমধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ও বার্ষিক রাজস্বের দিক দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাজর নিয়ন্ত্রণ করায় নতুন করে যাতে গ্রামীণফোন আর গ্রাহক বাড়াতে না পারে সেদিক বিবেচনায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। এর মধ্যে কলরেট ও ডেটার দাম বাড়িয়ে দেয়া, জিপির অফার অন্য অপারেটরগুলো কপি করে নিতে পারলেও সে অন্য কারও অফার কপি করতে পারবে না, প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়ে আনা, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ, কলড্রপের হার অন্য অপারেটরের চেয়ে কম নির্ধারণ করে দেয়া ইত্যাদি।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক বলেন, এসএমপি’র ফলে মার্কেট প্রতিযোগিতাপূর্ণ থাকবে। কোন একক প্রতিষ্ঠান পুরো মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। যে কোন প্রতিষ্ঠানের মার্কেট শেয়ার ৪০ শতাংশের বেশি হবে না।
অন্যদিকে গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তা জানান, এসএমপি অপারেটর হিসেবে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলে তাদের গ্রোথ হবে না, গ্রোথ না হলে প্রফিটিবিলি কমে যাবে, এতে ট্যাক্স কমবে এবং ডিভিডেন্ট ঘোষণা কমে যাবে।
গত বছরের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোন শীর্ষ স্থানে রয়েছে। আর গত কয়েক বছর ধরেই অপারেটরটির রাজস্ব আয় ৫০ শতাংশেরও ওপরে। অন্যদিকে দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি আজিয়াটার গ্রাহক বাজারের ২৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বাংলালিংক ও টেলিটকের বাজার হিস্যা যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের সক্রিয় গ্রাহক ছিল ৭ কোটি ২৭ লাখ। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।
এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরের শুরুতে এসএমপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় সেই মাসেই। এতে বলা হয়, বাজারে মোবাইল অপারেটরগুলোসহ এ খাতে লাইসেন্সধারী কোনো কোম্পানিকে এসএমপি ঘোষণায় তার গ্রাহক, রাজস্ব এবং স্পেকট্রামসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। যেখানে কোনো কোম্পানি যদি এর যেকোনো একটি মানদন্ডে মোট বাজারের ৪০ শতাংশ দখল বা নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সে এসএমপি হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো কাজে বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা শুরু করার আগে বিটিআরসি অনুমতির দরকার হবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ, ভোক্তাদের সুনির্দিষ্ট কল্যাণ, অন্য প্রতিযোগির অধিকার ক্ষুন্ন না করা ও সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি দেখে অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এখানে এসএমপি হিসেবে চিহ্নিত কোম্পানিকে পরবর্তী করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, এসএমপি রেগুলেশানের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন আন্তর্জাতিক ও টেলিযোগাযোগ খাতের সর্বোচ্চ মানসম্মত নিয়মগুলো বিবেচিত হবে বলে প্রত্যাশা করে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন