নিউজিল্যান্ড পেসারদের কোনোভাবেই সামলাতে পারেননি বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা। এক্সট্রা সুইং, গতি, বাউন্সে দিশেহারা হয়ে একে একে এসেছেন আর গিয়েছেন। তবে সেখানেই সাবলীল ব্যাটিং করলেন মোহাম্মদ মিথুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বলের গুণাগুণ বুঝে ব্যাট চালালেন তারা। তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সম্মানজনক স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। কিউইদের ২৩৩ রানের টার্গেট দিয়েছে টাইগাররা।
ম্যাকলিন পার্কে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে শুরুতেই হোঁচট খায় টাইগাররা। ট্রেন্ট বোল্টের সর্পিল সুইংয়ে উইকেটের পেছনে টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইনফর্ম ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ম্যাট হেনরির বলে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন লিটন দাস।
প্রিয় পজিশন চারে ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। বোল্টের বলে কাট করতে গিয়ে তিনি প্লেড-অন হয়ে ফিরলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে অবিচল থাকতে পারেননি সৌম্য সরকার। হেনরির বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন দুর্দান্ত খেলতে থাকা এ বাঁহাতি। ফেরার আগে ২২ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন তিনি।
পরে খেলা ধরার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে যথার্থ সঙ্গ দেন মোহাম্মদ মিথুন। ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন তারা। তবে বোঝাপড়া গড়ে উঠতেই পথচ্যুত হন মাহমুদউল্লাহ। লুকি ফার্গুসনের বলে রস টেলরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
চরম বিপর্যয়ের মুখে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সাব্বির রহমান। মিচেল স্যান্টনারের বলে ভারসাম্য হারিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। এ হার্ডহিটার ফিরলে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মিথুন। ভালো সঙ্গও পান তিনি। ফলে তাদের মধ্যে জুটি গড়ে ওঠে।
এতে কচ্ছপগতিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু আচমকা থেমে যান মিরাজ। ক্রিজে নামার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। স্যান্টনারকে বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৬ রানে জিমি নিশামকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি।
১৩১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠেন মোহাম্মদ মিথুন। প্রথমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন তারা। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। ফলে রানও আসতে থাকে। তাতে এগোয় সফরকারীরা।
পথিমধ্যে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে অনন্য ফিফটি তুলে নেন মিথুন। ফিফটির দোরগোড়ায় এগিয়ে যান তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দিয়ে যাওয়া সাইফউদ্দিন। তবে হঠাৎই পথ হারান তিনি। স্যান্টনারের বলে মার্টিন গাপটিলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাইফ। ফেরার আগে ৫৮ বলে ৩ চারে ৪১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি।
তাতে ভাঙে রেকর্ড ৮৪ রানের জুটি। অষ্টম উইকেটে এটিই দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ। এর আগে সেরা জুটি ছিল খালেদ মাসুদ ও মোহাম্মদ রফিকের। ২০০৩ বিশ্বকাপে কিম্বার্লিতে হার না মানা ৭০ রানের জুটি গড়েন তারা।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি মিথুন। এবার তার লড়াইও থামে। ফার্গুসনের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। বিদায়ের আগে ৯০ বলে ৫ চারে ৬২ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলেন তিনি। খানিক পরই বোল্টের বলে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমান। এতে ২৩২ রানে থামে মাশরাফিদের ইনিংস।
মন্তব্য করুন