টুরিষ্ট ভিসার নামে ভিয়েতনামে মানবপাচার হচ্ছে দেদারসে। কতিপয় অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সী ও ট্রাভেলস এজেন্সীর মালিক দালালদের মাধ্যমে ভিয়েতনামে ভালো বেতনে চাকুরি দেয়ার নামে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে গ্রাম থেকে যুবকদের সংগ্রহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কুমিল্লা, নোয়াখালি ও চট্রগ্রামের ৯ জন যুবককে টুরিষ্ট ভিসায় ভারতের দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এসব যুবককে ব্যাঙ্কক হয়ে ভিয়েতনামে পাচার করা হয়েছে। প্রতারণার শিকার এসব যুবক ১৪ দিনের মাথায় দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তারা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। প্রতারণার শিকার এসব যুবকের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গত ১১ ফেব্রুয়ারী কাকরাইলস্থ বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে ফেনীর আবুল কাসেম। কমিউনিস্ট শাসিত দেশটিতে তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকার পরেও পাশ্ববর্তী দেশসমূহে পাচারের উদ্দেশ্যে যুবকদের টুরিষ্ট ভিসায় হ্যানয় নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এসব যুবক চড়া সুদের ঋণ করে ভিয়েতনামে ভালো বেতনে চাকুরির নামে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসছে। ভিয়েতনামে গিয়ে প্রতারণার শিকার কেউ কেউ কাজ না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় অনাহা-অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ পার্কের পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে খাচ্ছে। ভিয়েতনাম থেকে সম্প্রতি ফেরত আল-নাঈম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো.বাবুল হোসাইন গতকাল মালয়েশিয়া থেকে এতথ্য জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পুরাান পল্টনস্থ সাসকো ট্রেডিং লিমিটেডের (আর এল-১১০৩) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শহিদুল্লাহ তার বন্ধুর মাধ্যমে ভিয়েতনামে সুয়েটার ফ্যাক্টরিতে থাকা-খাওয়া ফ্রি ও ৩শ মার্কিন ডলার বেতনে চাকুরি দেয়ার কথা বলে কুমিল্লার হাবিবুর রহমান, শরিফ, নোয়াখালির রেলের সাবেক ষ্টেশন মাষ্টার জসীম উদ্দিনের ছোট ভাই দাউদ, হারুন, আলমগির, মোহাম্মদ হাবার, চট্রগ্রামের হানিফ, কিরন বড়–য়া, শওকত আলীকে গত ২ সেপ্টেম্বর নিউ দিল্লী নিয়ে যান। সেখান থেকে ব্যাঙ্কক হয়ে তাদেরকে ট্যুরিষ্ট ভিসায় ভিয়েতনাম পাঠানো হয়। প্রতারণার শিকার বাহার বলেন, ফেনীর দালাল আবুল কাসেম আমাকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাসকো ট্রেডিং-এর শহিদুল্লার মাধ্যমে ভিয়েতনামে পাঠায়। ভিয়েতনামে গিয়ে চাকুরিতো দূরের কথা এক বেলা খাবারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতারণার শিকার হানিফ বলেন, নয়জনকে ভিয়েতনামে নিয়ে এমন জালিয়াতির শিকার হবো কোনো দিন ভাবতেও পারিনি। সাসকো ট্রেডিং-এর মালিক শহিদুল্লাহ মাত্র ৮৩ হাজার টাকা ফেরত দেয়ায় তাকে মাফ করে দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রেলের অবসরপ্রাপ্ত ষ্টেশন মাষ্টার জসীম উদ্দিন বলেন, ভিয়েতনামের হুসিমিন সিটিতে নিয়ে ৯ জনকে একটি হোটেলে রাখা হয়। ঐ হোটেলের ম্যানেজারের (ভারতীয় ) পরামর্শে প্রতারণার শিকার এসব যুবক ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসে। দাউদ, হারুন আলমগির ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেক করেন। তিনি এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি। আবুল কাসেম গত ২৬ জানুয়ারী সাসকো থেকে ২ লাখ ৮ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বাকি টাকা ফেরত এবং প্রতারণার বিচারের দাবীতে বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন