শামীম চৌধুরী, চট্টগ্রাম থেকে : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০২’র পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৯। নাজমুল হোসেন শান্ত’র সর্বশেষ এই ইনিংস দুটিই ছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। প্রিয় ভেন্যুতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আসরের প্রথম ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরার প্রেরণা দিয়েছে ওই দুটি ইনিংস। যুব বিশ্বকাপের গত আসরে অভিষেক হলেও দেখা পাননি কোনো ফিফটির, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড ফিফটির (১৩টি) মালিক গতকাল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে উদযাপন করেছেন প্রথম ফিফটি। প্রোটিয়া অফ স্পিনার ডি জর্জকে প্যাডেল সুইপে ডাবলস নিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটির ইনিংসে এখন অন্য উচ্চতায় এই মিডল অর্ডার। ভারতের শ্রীবাস্তবের ফিফটির সংখ্যাকে (২ সেঞ্চুরি, ১১ ফিফটি) স্পর্শ করেছেন গতকাল নাজমুল হোসেন শান্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে ফিফটির সংখ্যায় তার উপরে শুধুই পাকিস্তানের সামী আসলাম (৬ সেঞ্চুরি, ১০ ফিফটি)।
ডানহাতি স্পিনার হোয়াইটহেডকে মিড অফে বাউন্ডারি তার প্রথম স্কোরিং শট। ওই শটেই পেয়েছেন দায়িত্ব নিয়ে খেলার টনিক। পেস বোলার লুডিককে মিড অফ এবং লং অনের উপর দিয়ে, কিংবা মুলডারকে লং অনের উপর দিয়ে যে তিনটি ছক্কা মেরেছেন, তাতে পয়সা উশুল হয়েছে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারখানেক দর্শকের। প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারানোর এই নায়ক এখন স্বপ্ন দেখছেন দারুণ কিছুর। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়া এই জয়ে এখন দলটি ফুরফুরে মেজাজে অন্য ম্যাচগুলোতে হবে অবতীর্ণ, তেমনটাই করছেন প্রত্যাশা শান্তÑ ‘দ.আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টা খুব দরকার ছিল। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারলে আত্মবিশ্বাসটা পাওয়া যায়। যেহেতু প্রথম ম্যাচে বড় দলের বিপক্ষে জিততে পেরেছি, তাই এখন ফুরফুরে মেজাজে থাকবে সবাই।’
বড়দের বিপক্ষে জয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শুরু করতে পারায় গ্রুপ রাউন্ডের অবশিস্ট ২ ম্যাচে প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়াকে উড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্নই দেখছে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা। ৪৩ রানে দ. আফ্রিকাকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করায় ‘এ’ গ্রুপে সম্ভাব্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চান দলের উপদেষ্টা কোচ স্টুয়ার্ট ল’Ñ ‘অবশ্যই সে সম্ভাবনা আছে আমাদের। তার জন্য ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তবে অন্যদের নিয়ে হেলা-ফেলা করা চলবে না, এটাও মাথায় রাখতে হবে।’ কোচের এই সতর্কবাণী কানে ঢুকেছে শাান্ত’রওÑ ‘দ. আফ্রিকা শক্তিশালী দল, তাদের বিপক্ষে জিতে যুব বিশ্বকাপ শুরু করতোরায় পরবর্তী ম্যাচগুলো সহজ হয়ে গেছে, তা বলব না। এখন ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলতে হবে। আপাতত: আমাদের লক্ষ্য পরের ম্যাচ। ওই ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা করছি তাই। সবকিছু সহজ ভাবা ঠিক হবে না। এক ম্যাচ চলে গেছে, এটা ভুলে পরের ম্যাচে খেলতে হবে।’
গত বছর দ. আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৭ ম্যাচের দুটি হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজে ৬-১ এবং ৭-১ এ জয় মূলত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়ে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন শান্তÑ‘অনেকে দলে নতুন বলে তাদের মধ্যে শুরুতে নার্ভাসনেস কাজ করতে পারে। তাই বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলছি এ চিন্তা না করে স্বাভাবিক ম্যাচ খেলছি, এই চিন্তা ছিল আমাদের। ওদের বিপক্ষে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি বলে জানতাম ওরা কি ধরনের বোলিং করে।’
প্রথমে ব্যাট করে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২৪০ স্কোর পুঁঁজিকে যথেষ্ট মনে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শান্তÑ‘এই উইকেট যেরকম ছিল, তাতে ২৪০ থেকে ২৫০ করতে পারা সহজ নয়, আমরা যখন ব্যাটিংয়ে নামি তখন সে লক্ষ্যই ছিল আমাদের।’
স্কোরশিটে ১০৩ উঠতে ৩ টপ অর্ডারের বিদায়ে দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছিল শান্ত’র। সেখান থেকে ৫৯ এবং ৪৫ রানের ২টি পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দিতে পারার পেছনে নিজের পরিকল্পনা শুনিয়েছেন মিডিয়াকেÑ ‘প্রথমে পরিকল্পনা ছিল স্ট্রাইক রোটেড করে সিঙ্গল নিয়ে খেলা। তারপর বড় শট খেলা। মাঝে দুই তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপের মধ্যে পড়েছিলাম। চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার।’
সেঞ্চুরি না পেয়েও তাই অতৃপ্ত নন শান্তÑ‘আমি যখন আউট হই, তখন ১ ওভার খেলা বাকি ছিল। আমি শেষ বল পর্যন্ত খেলতে পারলে হয়তবা ৬/৭ রান যোগ করতে পারতাম। তাই সেঞ্চুরি করতে পারিনি, তাতে আক্ষেপ নেই। সেঞ্চুরি করে দলকে জেতাতে না পারলে বরং আক্ষেপ হতো। আমার পারফরম্যান্সে যেন দল জিততে পারে, সেটা মাথায় রেখেই খেলতে নামি।’ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চলমান আসরে প্রথম ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংসে আসরে নিজের লক্ষ্যটাও করেছেন নির্ধারিত। আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়াই তার লক্ষ্যÑ ‘শুরুটা ভাল হওয়ায় লক্ষ্য থাকবে সর্বোচ্চ রান করার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন