অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ নতুন ভ্যাট (মূসক) আইনে প্যাকেজ ভ্যাট বহাল না রাখলে দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাবেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সরকারকে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা নেতারা। দাবি না মানলে ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশব্যাপী, বিশেষ করে ঢাকার ব্যবসায়ীরা এক ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় অবস্থান নেবেন।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা দক্ষিণ ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব, কোষাধ্যক্ষ আলহাজ্ব দীন মোহাম্মদ, এফবিসিসিআই’র সদস্য মঞ্জুর আহমেদসহ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কয়েকজন পরিচালক।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ভ্যাট আইনের দু’টি পার্ট (অংশ) থাকে, এর গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট ভ্যালু অ্যাডেড ভ্যাট। বিক্রয় মূল্য থেকে ক্রয় মূল্য বাদ দিয়ে যা থাকে তার ওপর ভ্যাট আরোপের বিধান হলো ভ্যালু অ্যাডেড ভ্যাট। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যালু অ্যাডেড ভ্যাট ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এটি একটি বিকলাঙ্গ (প্রতিবন্ধী) ভ্যাট আইন। কারণ যদি কোন মানুষের দু’টি পায়ের মধ্যে একটি পা না থাকে তাকে বলে প্রতিবন্ধী। নতুন ভ্যাট আইনও তাই। এ আইনে দু’টি পার্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্টটিই নেই।
তিনি বলেন, সরকার যত আইন করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করে। কিন্তু এই একটি আইন করা হচ্ছে, যেখানে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতিফল ঘটছে না। নতুন এই ভ্যাট আইন কার্যকর হলে পণ্য মূল্য ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, খুচরা দোকানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন মূসক আইনের আওতায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাধ্যতামূলক করা হবে। যা প্রতিপালনের কোন সামর্থ্য ব্যবসায়ীদের নেই।
এছাড়া নতুন মূসক আইনের কারণে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে দেশের নাগরিক ও ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তোষ ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। ফলশ্রæতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতা ও অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের সমন্বয়ে সরকারের গঠন করা যৌথ কমিটি বিশ্বব্যাপী মূসক ব্যবস্থা পর্যলোচনা ও বিশ্লেষণ করে ৭ দফা সুপারিশ জমা দেয়। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইনে ওই সুপারিশগুলো রাখা হয়নি। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ করতে সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসাবে এটি করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আগামী ২৫ মের মধ্যে প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখাসহ যৌথ কমিটির ৭ দফা সুপারিশ নতুন ভ্যাট আইনে রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিতে হবে। তা না হলে ২৫ মে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশব্যাপী, বিশেষ করে ঢাকার ব্যবসায়ীরা এক ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় অবস্থান নিবেন। এরপরও দাবি না মানলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে শুধু উৎপাদক পর্যায়ে ৩৬ লাখ টাকার উর্ধ্বে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের উপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের বিধান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও সেবা খাতে সরবরাহ মূল্যের উপর ৪ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধের বিধান এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্তিযোগ্য ব্যক্তি যারা ইসিআর/পিওএস ব্যবহার করে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করেন তাদের সরবরাহের উপর ২ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের বিধান করার দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের ঘোষণা অনুযায়ি আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট থেকে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন