রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

খোলা বাজারে বন্ডেড পণ্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

দীর্ঘ দিন থেকে অভিযোগ ছিল রফতানির প্রতিশ্রুতিতে পণ্য উৎপাদনে শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডেড পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে দেশীয় শিল্প কারখানা। আর বৃহৎ ক্ষতিতে প্রত্যাশিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাধা হিসেবে কাজ করছে।

এই সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘ দিন ধরে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সূত্র জানাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের দাবি আমলে নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সম্প্রতি মাঠে নামে।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কমিশনার হিসেবে নতুন যোগ দিয়েছেন এসএম হুমায়ুন কবীর। এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তিনি বিশেষ এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ছয়টি প্রিভেনটিভ টিম গঠন করা হয়েছে। বন্ডেড পণ্য পাচার রোধে টিমের সদস্যরা দিনে ও রাতে পালাক্রমে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট গত ২ সপ্তাহে ১৬টি বন্ডেড পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান জব্দ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ফেব্রিক্স, পিপিদানা (প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল), এসিডিটিক এসিড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং ( ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল)। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। যার বিপরীতে প্রযোজ্য শুল্ক করের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। পণ্যগুলো নোমান গ্উপ, নাইচ ডেনিম, ফারদিন অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, রেজা ফ্যাশন লিমিটেডের-এমন অভিযোগ রয়েছে।

এনবিআর বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যার হাউজ বিধিমালা ২০০৮ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআর’র পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা। চলতি মাসের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন একটি পত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র আরও জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে প্রায় চার শতাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। আর মামলাগুলোতে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বন্ড সুবিধার পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি রোধে অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রির সময় জব্দ করা হয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বন্ড সুবিধা দেওয়া হয় দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বন্ড সুবিধা নিয়ে সেই বন্ডেড পণ্য যদি খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়, তাহলে সেটা অন্যায়। আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে এবং চলবে। যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক, অন্যায় করলে ক্ষমা করা হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন