মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনে গন্তব্যে পৌঁছার সময় ৪৫ মিনিট বাড়ছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩০ পিএম

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম। গত এক দশকে রেলে বিনিয়োগের এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে এ রেলপথে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল হিসেবে ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে এর উল্টোটা। সম্প্রতি লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন প্রকল্পের প্রয়োজনে প্রতিটি ট্রেনের সময় ৪৫ মিনিট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ৮ জানুয়ারি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজের প্রয়োজনে মোট ৪৫ মিনিটের গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ চায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাদের এ প্রস্তাব রেলওয়ের নির্ধারিত টাইম টেবিলে সংযুক্ত করে ট্রেনচালকদের জন্য নির্দেশনা জারি করার সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়।
রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে (অপারেশন) দেয়া প্রকল্প কর্তৃপক্ষের এক চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৫৬ শতাংশ। রেললাইনের ডুয়াল গেজে রূপান্তরের কাজ দ্রুতগতিতে শুরু করতে নবনির্মিত আপ-লাইনের সঙ্গে বিদ্যমান লাইনের ডাইভারসনের মাধ্যমে ৯-১০ স্থানে সংযোগ প্রদান করতে হবে। ফলে ডাইভারসন লাইন দিয়ে ট্রেন চালানোর জন্য ন্যুনতম ৪৫ মিনিটের গতি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথের ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ওই বছরের জুনে কার্যাদেশ দেয়ার পর নভেম্বরে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ৭২ কিলোমিটার অংশে একাধিক রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিটি ট্রেনকে ধীরগতিতে চলাচল করতে হবে। এছাড়া লাকসাম-আখাউড়ার মধ্যবর্তী অন্য স্টেশনগুলোয়ও মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে কর্মী কম। এসব কারণে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে হঠাৎ করেই ট্রেন ভ্রমণের সময় ৪৫ মিনিট বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে ৪৫ মিনিট সময় চাওয়া হলেও কার্যত প্রায় ১ ঘণ্টা সময়ক্ষেপণ হবে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্টেশনের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে তিনটি স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। রাজাপুর স্টেশন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা স্বল্প জনবল দিয়ে চালানো হলেও আলীশহর ও ময়নামতী স্টেশন দুটি শতভাগই বন্ধ থাকে। এ কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ চাইছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। যদিও এর আগে লাকসাম-চিনকি আস্তানা (৭১ কিলোমিটার) ও টঙ্গী-ভৈরববাজার (৬৪ কিলোমিটার) ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রতিটিতে মাত্র ১০ মিনিট করে গতি নিয়ন্ত্রণের আদেশ দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সর্বনিম্ন সময় লাগে ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। রেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে (শুধু ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি) সবচেয়ে কম সময়ে রেলভ্রমণ করতে পারে যাত্রীরা। যদিও পথিমধ্যে বিভিন্ন স্টেশন বন্ধ থাকা, পরিবহন খাতের প্রয়োজনীয় লোকবল সংকট, পুরনো ইঞ্জিন, পুরনো কোচ ও ট্র্যাকের সমস্যার কারণে নির্ধারিত ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের চেয়েও কিছুটা সময় বেশি লাগে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন হওয়ার কারণে আগের মিটার গেজ রেলপথের সঙ্গে বর্তমান ব্রড গেজের সমন্বয় করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ও জটিল কাজ। কিন্তু লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত মোট স্টেশন রয়েছে ১১টি। এগুলো হচ্ছে আলীশহর, লালমাই, ময়নামতী, রাজাপুর, কুমিল্লা, সদর রসুলপুর, শশীদল, মন্দবাগ, কসবা, ইমামবাড়ী ও গঙ্গাসাগর। ময়নামতী ও আলীশহর স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও রাজাপুর স্টেশন ১২ ঘণ্টা খোলা থাকে। ফলে প্রকল্পের কাজ চলাকালে এসব স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি এড়াতে গতি কমানো প্রয়োজন। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ৪৫ মিনিটের গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ চাইলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভ্রমণে আগামী দুই বছর ১ ঘণ্টার বেশি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে।
রেলের প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আরো দুটি ডাবল লাইন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে। এসব প্রকল্পে এত বেশি গতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়েনি। বর্তমান প্রকল্পটির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক গতি নিয়ন্ত্রণ চেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে এ রুটে যাত্রা সময় কমানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা সময় বাড়ানোর প্রস্তাব মেনে নেয়া যায় না। বন্ধ স্টেশনগুলো চালুর পাশাপাশি পরিবহন খাতের গুরুত্বপূর্ণ জনবল তথা পয়েন্টসম্যান ও স্টেশনমাস্টার নিয়োগ দেয়া গেলে গতি নিয়ন্ত্রণ সময় আরো কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন