শিরোনাম দেখে চমকে চোখ কপালে উঠেছে নিশ্চয়। তাহলে জেনে নিন, ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজির পর ইউরোপের তৃতীয় দল হিসেবে মৌসুমে একশ’ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বার্সেলোনা। এসময় মেসি-সুয়াজেরা সবচেয়ে বেশি ৯ গোল করেছেন চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই। যার সর্বশেষ সংযোজন কোপা দেল রের সেমিফাইনালে। রিয়ালকে তাদেরই মাঠে ৩-০ গোলে উড়িয়ে প্রতিযোগিতার প্রথম দল হিসেবে টানা ষষ্ঠবারের মত ফাইনালে উঠেছে বার্সা।
মাসের শুরুতে নিজেদের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচে ১-১ ড্র করেছিল বার্সা। ফাইনালে পা রাখতে পরশু রাতে সান্তিয়াগো বার্নার্বুতে তাই গোল করতেই হতো আর্নেস্তো ভালভার্দের দলকে। অলস শুরুর পর দ্বিতীয়ার্ধে শুধু সেটা করেই দেখায়নি, স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে গোল করেছে দুবার, একটি করিয়ে নিয়েছে তাদের দিয়ে। ফলাফল, দুই লেগ মিলে ৪-১ গোলে এগিয়ে ফাইনালে কাতালানরা।
মেসিকে বোতলবন্দি করে রাখায় প্রথমার্ধে কোন গোল হয়নি। এসময় ভয়ঙ্কর সব আক্রমণে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরাই। বরাবরের মত গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন ছিল বার্সার রক্ষাকর্তা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আর আটকে রাখা যায়নি মেসি-সুয়ারেজ-দেম্বেলে-আলবাদের। পঞ্চম মিনিটেই দেম্বেলের বাড়ানো বল থেকে সুয়ারেজের গোল। সেই গোল শোধ দেবে কি, উল্টো ৬৯ মিনিটে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন রাফায়েল ভারানে। অবশ্য দেম্বেলের ভয়ঙ্কর ক্রসে ভারানে পা লাগাতে না পারলে সুয়ারেজের পাশে হ্যাটট্রিক-ই লেখা হতো এদিন। ঠিকই ধরেছেন, তিন মিনিট পরের গোলটিও ছিল সুয়ারেজের করা, পেনাল্টি থেকে। বল নিয়ে পোস্টের দিকে এগুতে থাকা সুয়ারেজকে অবশ্য ফাউল না করে উপায় ছিল না কাসিমিরোর। ইদানিং গোলের সঙ্গ তেমন সাক্ষাত না মেলায় সুয়ারেজকেই পেনাল্টি শট নিতে দেন মেসি। দর্শণীয় পানেনকা শটে স্বগতিক কফিনে শেষ পেরেক টুকে দেন উরুগুয়ান স্ট্রাইকার। ২৫ মে’র ফাইনালে বার্সার প্রতিপক্ষ অন্য সেমিফাইনালে রিয়াল বেটিস ও ভ্যালেন্সিয়ার মধ্যে বিজয়ী দল।
লা লিগা মৌসুমে সুয়ারেজের গোল হলো ১৬টি। ২৫ গোল নিয়ে শীর্ষে থাকা মেসির পরেই তিনি। আর এল ক্ল্যাসিকোয় এটি তার ১১তম গোল। গত অক্টোবরে লিগ ম্যাচের প্রথম লেগে রিয়ালকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বার্সা। সেই ম্যাচে হ্যাকট্রিক করেছিলেন ৩২ বছর বয়সী।
প্রতিযোগিতার টানা পঞ্চম শিরোপা যাত্রাটা অবশ্য সহজ ছিল না বার্সার। শেষ আটে সেভিয়ার মাঠে হারতে হয়েছিল ২-০ গোলে। ফিরতি পর্বে তারা এর শোধ নেয় সেভিয়াকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে। শেষ ষোলোতেও হারতে হয়েছিল লেভান্তের মাঠে। আর শেষ চারে ঘরের মাঠে রিয়ালের বিপক্ষে ১-১ ড্র করা মানে তো পিছিয়ে থাকাই।
এদিন যে বার্সা সেরা খেলাটা খেলেছে তা কিন্তু নয়। পুরো ম্যাচে তারা পোস্টে শট রাখতে পারে মাত্র চারটি। কিন্তু প্রতিটা শটই ছিল কার্যকরী। অন্যদিকে বার্সার পোস্ট বরাবর ১৪বার শট নিয়েও জালের দেখা পাননি মদরিচ-ভিনিসিউস-বেনজেমারা। ম্যাচ শেষে এই সত্যিটা গোপন করেননি সুয়ারেজ, ‘এটা আমাদের দারুণ কোনো পারফর্ম্যান্স ছিল না, আমাদের সেটা মানতে হবে। কিন্তু খুব বেশি সুযোগ তৈরি না করেও আমরা তিনটি গোল করলাম।’ ‘আমরা জানতাম যে বার্নাব্যুয়ে আসাটা কঠিন হবে। কিন্তু আরেকটি ফাইনাল খেলার দারুণ সুযোগ আমাদের ছিল তা নিয়ে আমরা সচেতন ছিলাম।’
দলের জয়ে সন্তুষ্ট কোচ ভালভেরদেও। আর প্রতিপক্ষ কোচ সান্তিয়াগো সেলারির কণ্ঠে সুযোগ হাতছাড়া করার হতাশা, ‘তারা তাদের প্রথম শটেই গোল করল, তাদের দ্বিতীয় গোলটা ছিল আত্মঘাতী, আর আমরা আমাদের সুযোগগুলো থেকে গোল করতে পারলাম না। আর কিছুই বলার নেই।’
তবে এই হতাশা নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই রিয়ালের। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে দুইটায় লা লিগার ম্যাচে আবারও বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে রিয়াল। সে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে চান সোলারি, ‘আমরা আশা করি যে আজকে (বুধবার) যেসব শটে আমরা গোল করতে ব্যর্থ হলাম তার মধ্যে কিছু অন্তত শনিবার জালে জড়াবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন