শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

স্বপ্নময় শুরু বিষাদে শেষ

হ্যামিল্টন টেস্ট

স্পোর্র্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১০ এএম

তামিমের রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরি

 

নিউজিল্যান্ডে গতির সঙ্গে স্যুইংয়ের পসরা সাজিয়ে বাংলাদেশ দলকে তিক্ততায় ভরা এক আপ্যায়নের স্মৃতি রোমন্থন করিয়েছে নিউজিল্যান্ড। আগের বারের ভুলগুলো শুধরে শুরুর যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাসমান উপকূলের দেশটিতে পা রেখেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে সেই আত্মবিশ্বাসে পানি ঢেলে দিয়েছে কিউইরা। সেখান থেকেই টেস্টে লড়াই টা কেমন হতে পারে সে আভাসও কি মেলেনি বাংলাদেশের? 

হ্যামিল্টনে পেস সহায়ক উইকেট জেনেও দলে পেস বোলার নেয়া হয়েছে শুধু আবু জায়েদ ও অভিষিক্ত ইবাদত হোসেনকে। স্পিন আক্রমণে রয়েছেন অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন মিডল অর্ডার মোহাম্মদ মিথুন।
অন্যদিকে কিউইরা চার পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে সাজিয়েছে তাদের বোলিং অ্যাটাক। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কলিন গ্র্যান্ডহোম আর নেইল ওয়াগনারদের সঙ্গে ঘূর্ণিপাকে ফেলতে নিউজিল্যান্ড শিবিরে মাত্র তিন টেস্ট খেলা টড অ্যাস্টল। আর তাতেই কুপোকাত বাংলাদেশ।
শুরুর গল্পটা কিন্তু ওমন ছিল না। তবে টেস্ট সিরিজের স্বপ্নময় শুরুটা কেবল তামিম ইকবালের জন্যই। দেশ সেরা ব্যাটসম্যানের স্ট্রোকের দ্যুতিতে বাংলাদেশের শুরুটাও হলো উদ্ভাসিত। কিন্তু অন্যদের ব্যর্থতায় সেই ইনিংসই মিশল বিষাদে। বাটিং হতাশার স্রোত পরে গিয়ে মিশল বোলিংয়েও। গতকাল ভোরে শুরু হওয়া হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম দিনে তামিম উপহার দিয়েছেন চোখধাঁধানো এক সেঞ্চুরি। তার সতীর্থরা একের পর এক উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষকে। তামিমের ১২৮ বলে ১২৬ রানের ইনিংসের পরও তাই সফরকারীরা গুটিয়ে গেল ২৩৪ রানেই! লিড নেওয়ার পথে নিউজিল্যান্ড অনেকটা এগিয়ে গেছে বিকেলেই। প্রথম দিন শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে কিউইদের রান ৮৬।
সেডন পার্কের উইকেট সবুজ ঘাসে মোড়ানো। সেখানেই টস হেরে নিতে হয়েছে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। শঙ্কার কারণ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু তামিমের দারুণ সব শটে আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় শঙ্কার মেঘ। উদ্বোধনী জুটিতে সাদমান ইসলামকে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়ে তামিমই দেন ভালো কিছুর ইঙ্গিত। সাদমান ফেরার পর মুমিনুল হককে পাশে নিয়েও জারি রেখেছিলেন দাপট। সেই দাপটে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টরা পাত্তা পাননি। ৩৭ বলে ফিফটির পর ১০০ বলে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান তামিম। কিন্তু চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলে তামিমের বিদায়ও হয়েছে বাজে শটে। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছিলেন কিন্তু তৃতীয় বারের আর হয়নি। অনেক বাইরের শর্ট ডেলিভারিতে তামিম ক্যাচ দেন গালিতে।
তার আগে লাঞ্চ থেকে ফিরেই অদ্ভুত বাজে শটে ইনিংসের ইতি টানেন মোহাম্মদ মিঠুন। ওয়ানডেতে ভালো খেলা এই ব্যাটসম্যান টেস্টে তার পজিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শর্ট বলে ক্যাচ উঠান মিডউইকেটে। করেন মাত্র ৮ রান। সৌম্য সরকার অবশ্য নিজেকে সামলেই খেলতে চেয়েছিলেন। টিম সাউদির বেরিয়ে যাওয়া বল ছেড়ে দিচ্ছিলেন কিন্তু হালকা স্যুয়িং করে তা ছুঁয়ে যায় তার গ্লাভস।
তামিমের ফেরার পর সব দায়িত্ব নিতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু অধিনায়ক ফেরেন সবচেয়ে দায়িত্বহীন শটে। নিল ওয়েগনারকে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে তার ক্যাচ যায় লং লেগে। ওয়গনারকেই ক্যাচ দিয়ে চা-বিরতির ঠিক আগে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে শেষ পর্যন্ত ছিলেন লিটন। কিন্তু টেল এন্ডারদের নিয়ে লড়াই লম্বা করতে পারেননি তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ২৯ রান করে। ২৭ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়েগনার, টেস্টে এই স্বাদ পেলেন ষষ্ঠবার।
ব্যাটিংয়ে অমন শেষের পরও বোলিংয়ের শুরুটায় দলকে মনে হচ্ছিল বেশ উজ্জীবিত। আবু জায়েদ ও অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেন নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ে পরীক্ষা নেন জিত রাভাল ও টম ল্যাথামের। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিতে পারতেন ইবাদত। স্লিপে ল্যাথামের ক্যাচ নিতে পারেননি সৌম্য। এরপর আর কোনো সুযোগ দেয়নি কিউইরা। দুজনই ঠাণ্ডা মাথায় কাটিয়ে দেন সময়টুকু। উইকেট না পেয়ে ক্রমে কমে আসে পেসারদের ধার। দুই ব্যাটসম্যানই তা কাজে লাগান। দারুণ খেলে রাভাল পেরিয়ে যান ফিফটি, ল্যাথামও জমে যান উইকেট। সব মিলিয়ে সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে শুরু বাংলাদেশের দিনটা হারিয়ে গেছে হতাশার বিশাদে। প্রথম দিনেই ইঙ্গিত সামনে আরও অনেক কঠিন সময়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৫৯.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ১২৬, সাদমান ২৪, মুমিনুল ১২, মিঠুন ৮, সৌম্য ১, মাহমুদউল্লাহ ২২, লিটন ২৯, মিরাজ ১০, আবু জায়েদ ২, খালেদ ০, ইবাদত ০*; বোল্ট ১/৬২, সাউদি ৩/৭৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/৩৯, ওয়েগনার ৫/৪৭, অ্যাস্টল ০/১০)। নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ২৮ ওভারে ৮৬/০ (রাভাল ৫৩*, ল্যাথাম ৩৫*; আবু জায়েদ ০/১৫, ইবাদত ০/২৬, খালেদ ০/৬, সৌম্য ০/৮, মিরাজ ০/৩১)। প্রথম দিন শেষে

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন